মার্কিন শুল্কনীতির কারণে চাঁদ থেকে আনা পাথরের শুল্কায়ন করতে হয়েছিল
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বিভিন্ন দেশের পণ্যের রিসিপ্রোকাল ডিউটি বা পাল্টা শুল্ক আরোপ করায় বিশ্বজুড়ে তোলপাড় চলছে। নতুন ধরনের পাল্টা শুল্কনীতি এখন আলোচনার বিষয় হয়ে গেছে। পুরোনো ইতিহাস ঘেঁটে দেখা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রের অদ্ভুত শুল্কনীতির ইতিহাস বেশ পুরোনো।
কিন্তু আপনি কি জানেন, যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কনীতির কারণে চাঁদের পাথর ও ধূলিকণার শুল্কায়ন করতে হয়েছিল? যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে থেকে যেকোনো পণ্য যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করলে শুল্কনীতি মেনে প্রবেশ করতে হবে, এটাই নিয়ম। শুল্কায়নের এমন বিরল ঘটনা আর কখনো ঘটেনি। শুল্কায়ন করা সেই পাথর ও ধূলিকণা এখন যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের আমেরিকান মিউজিয়াম অব ন্যাশনাল হিস্ট্রিতে রাখা আছে। চাঁদের পাথর দেখতে প্রতিদিন শত শত পর্যটক নিউইয়র্কের ওই জাদুঘরে যান, ছবি তোলেন।
১৯৬৯ সালে প্রথমবারের মতো মানুষ চাঁদের মাটি স্পর্শ করেন। এটি দুনিয়ার জ্ঞানবিজ্ঞানকে নতুন আরেক ধাপে নিয়ে গিয়েছিল। চাঁদ থেকে ফেরার সময় অ্যাপোলো-১১ নভোচারীরা ২২ কেজি ওজনের পাথর ও ধূলিকণা নিয়ে এসেছিলেন।
মার্কিন শুল্কনীতির মারপ্যাঁচে চাঁদের পাথর ও ধূলিকণা কাগজে–কলমে চাঁদ থেকে আমদানি করা হয়েছে—এমন দেখানো হয়েছে। অ্যাপোলো-১১–এর কমান্ডার নভোচারী নিল আর্মস্ট্রংয়ের ওই চাঁদের পাথরটি কাগজে-কলমে যুক্তরাষ্ট্র আমদানি করেছিল। চাঁদের পাথরটিকে রীতিমতো শুল্কায়ন প্রক্রিয়া মেনে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করতে হয়েছে। চাঁদের পাথরই হলো পৃথিবীর বাইরে থেকে প্রথম আমদানি পণ্য।
১৯৬৯ সালের ২৪ জুলাই যুক্তরাষ্ট্রের হনলুলু এয়ারপোর্টে এ বিরল ঘটনা ঘটে। ওই বিমানবন্দরের শুল্ক কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে চাঁদ থেকে আমদানি করা পাথর ও ধূলিকণা খালাস করা হয়েছিল। খালাসের পর রীতিমতো সনদও দেওয়া হয়।
১৯৬৯ সালের ২০ জুলাই অ্যাপোলো-১১-তে চেপে নভোচারী নিল আর্মস্ট্রং, এডউইন অলড্রিন ও মাইকেল কলিন্স চাঁদের দেশে যান। তাঁদের মাধ্যমে চাঁদের মাটিতে প্রথম কোনো মানবসন্তান পা রেখেছিল। ফিরে আসার সময় জ্ঞানবিজ্ঞানের প্রসারে গবেষণার জন্য কয়েকটি পাথর ও কিছু ধূলিকণা সঙ্গে করে নিয়ে আসেন তাঁরা। এসব পাথর ও ধূলিকণা যুক্তরাষ্ট্রের মাটিতে নামাতে আইনি প্রক্রিয়া শেষ করতে হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের কাস্টমস অ্যান্ড বর্ডার প্রটেকশনের (সিবিপি) নির্ধারিত ফরমে এসব পণ্যের ঘোষণা দিয়ে শুল্কায়ন করতে হয়েছিল। চাঁদের পাথরের আমদানিকারক ছিল ন্যাশনাল অ্যারোনটিকস অ্যান্ড স্পেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (নাসা)। আমদানি পণ্যের যানবাহন হিসেবে অ্যাপোলো-১১ দেখানো হয়েছে। এমনকি এসব পাথর ও ধূলিকণা যে চাঁদ থেকে আনা হয়েছে, তা-ও ঘোষণা দিতে হয়েছে। সেই শুল্কায়ন ফরমে অ্যাপোলো-১১-এর ক্রু হিসেবে নিল আর্মস্ট্রং, এডউইন অলড্রিন ও মাইকেল কলিন্স সই করেন। শুল্ক ফরমে তাঁদের কোনো অসুখ-বিসুখ আছে কি না, তা-ও জানাতে হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের সীমান্ত অতিক্রম করার নিয়ম হিসেবে যেসব যানে পণ্য এসেছে, সেসব যানের ক্রু বা নভোচারীদের অসুখ-বিসুখ থাকলে নভোযানসহ ডিসঅ্যাম্বারকড, অর্থাৎ চাঁদে ফেরত পাঠানো হবে, এমন শর্তও ছিল।
রীতিমতো যুক্তরাষ্ট্র শুল্ক বিভাগের সব আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে এসব পাথর ও ধূলিকণা খালাস হয়েছিল, যা বিশ্বের শুল্কব্যবস্থার ইতিহাসে একটি অভূতপূর্ব ঘটনা। সাধারণত এক দেশের পণ্য আরেক দেশে গেলে শুল্কায়ন করতে হয়। কিন্তু পৃথিবীর বাইরে থেকে আসা পণ্যের শুল্কায়নের সেটিই প্রথম ঘটনা।
এ ঘটনা বিশ্ব শুল্কব্যবস্থার ইতিহাসে একটি যুগান্তকারী হিসেবে বিবেচিত হয়। ওয়ার্ল্ড কাস্টমস অর্গানাইজেশন (ডব্লিউসিও) দেশে শুল্ক কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকে। এসব প্রশিক্ষণে শুল্কব্যবস্থার ইতিহাস পড়াতে গিয়ে শুল্কায়নের গুরুত্ব বোঝাতে প্রশিক্ষকেরা চাঁদের পাথর আমদানির বিষয়টি উদাহরণ হিসেবে দেন। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডেও (এনবিআর) চাঁদের পাথরের শুল্কায়নের সনদের অনুলিপি সংরক্ষণ করা আছে।