কয়েক মাস টিকে থাকার লড়াইয়ে আছি
নানামুখী সংকটে এখন দেশের অর্থনীতি। এ সংকট যেমন সাধারণ মানুষের জীবনে নাভিশ্বাস তুলেছে, তেমনি ব্যবসা-বাণিজ্যকে কঠিন এক পরিস্থিতির মুখোমুখি করেছে। শিল্পকারখানাগুলো এখন খাবি খাচ্ছে সংকট মোকাবিলায়। একদিকে বাড়ছে উৎপাদন খরচ, অন্যদিকে কমছে বিক্রি। গ্যাস-বিদ্যুতের সংকট ও ডলারের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি এখন উদ্যোক্তাদের মাথাব্যথার বড় কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ সময়ে প্রতিষ্ঠানগুলো কীভাবে সংকট সামাল দিচ্ছে, কী ধরনের কৌশল নিচ্ছে এবং সরকারের কাছে তাদের প্রত্যাশা কি—ইত্যাদি বিষয়ে কথা বলেছেন শীর্ষপর্যায়ের পাঁচটি খাতের পাঁচজন উদ্যোক্তা। তাঁদের সঙ্গে কথা বলেছেন সুজয় মহাজন, মাসুদ মিলাদ ও শুভংকর কর্মকার।
করোনার ধাক্কা কাটিয়ে ওঠার পর এ বছরের শুরুতে চামড়াবিহীন জুতা রপ্তানিতে প্রচুর ক্রয়াদেশ আসে। হঠাৎ ক্রয়াদেশের চাপ সামাল দিতে আমরাও বিপুল পরিমাণ কাঁচামাল আমদানি করি। সবই ঠিকঠাকমতো চলছিল। কিন্তু গত আগস্ট থেকে রপ্তানিতে নতুন শঙ্কা তৈরি হয়। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলোতে বেচাকেনা কমে যায়। এতে সেখানে প্রচুর পণ্য অবিক্রীত পড়ে থাকে। মূল্যস্ফীতির কারণে ক্রেতা দেশগুলোতে পণ্য বিক্রি কমে যাওয়ার চাপ পড়ে আমাদের এখানেও।
গত আগস্টের পর অনেক পণ্য তৈরি করে রপ্তানির অপেক্ষায় আছি। কিন্তু রপ্তানি চালান জাহাজীকরণের অনুমতি দিচ্ছে না বিদেশি ক্রেতারা। কারণ, তাদের শোরুমগুলোতে জুতা বিক্রি কমে যাওয়ায় পণ্যের স্তূপ জমে গেছে। মার্চের আগে এ সমস্যা কাটছে না বলেই অনুমেয়। আগস্টের পর ক্রয়াদেশ কমে যাওয়ায় দেশে গ্যাস-বিদ্যুতের সমস্যা দেখা দিলেও এখনো তার বড় ধরনের প্রভাবের মুখে পড়তে হয়নি আমাদের। তবে বৈশ্বিক পরিস্থিতির উন্নতি হলে এবং ক্রয়াদেশ বাড়লে সমস্যায় পড়তে হতে পারে। আবার ডলার-সংকট হলেও রপ্তানিমুখী প্রতিষ্ঠান হিসেবে এখনো কাঁচামাল আমদানির সুযোগ পাচ্ছি। রপ্তানি খাতে এখন বড় সমস্যা বৈশ্বিক পরিস্থিতি।
এক যুগ আগে গড়ে ওঠা ম্যাফ সুজ লিমিটেডের ক্রয়াদেশ বাড়ছিল। ক্রয়াদেশ বাড়তে থাকায় নতুন আরেকটি ইউনিট চালু করেছি। সব মিলিয়ে এ দুটি কারখানায় এখন সাড়ে ৯ হাজার কর্মী রয়েছেন। অবস্থা এখন এমন হয়েছে, কোনো কর্মী চলে গেলে নতুন করে কাউকে নিয়োগ দেওয়ার অবস্থা নেই।
ম্যাফ সুজের কারখানায় চপ্পল, কেডস, স্নিকারসহ বিভিন্ন ধরনের চামড়াবিহীন জুতা তৈরি হয়। গত বছর এ কারখানা থেকে সাড়ে সাত কোটি ডলারের জুতা রপ্তানি হয়েছে। এ বছর এখন পর্যন্ত রপ্তানি বেড়ে সাড়ে আট কোটি ডলারে উন্নীত হয়েছে। এখন নতুন করে রপ্তানিতে ধাক্কা আসায় কর্মীদের বেতন-ভাতা দেওয়ার ক্ষেত্রে হিমশিম খেতে হচ্ছে। ক্রয়াদেশ কমে যাওয়ায় আগে দিনে যেখানে ৫০ হাজার জোড়া জুতা উৎপাদিত হতো, সেখানে উৎপাদন কমে এখন নেমে এসেছে ৩০ হাজারে।
আগামী মার্চের আগে ক্রয়াদেশ বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা কম। পুরোনো চালানের রপ্তানিও আটকে গেছে। এ সময় রপ্তানি আয় না হলেও আগামী চার মাস বেতন-ভাতা, বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করতে স্বল্পমেয়াদি ঋণ নিতে হচ্ছে ব্যাংক থেকে। আগামী কয়েক মাস টিকে থাকাই হবে প্রধান লক্ষ্য।