উৎপাদনস্থলে কমতে শুরু করেছে পেঁয়াজের দাম, কমছে ঢাকার বাজারেও
পেঁয়াজের উৎপাদন এলাকা হিসেবে পরিচিত পাবনার সুজানগর ও সাঁথিয়া উপজেলায় পেঁয়াজের দাম কমতে শুরু করেছে। সেখানে গত পাঁচ দিনে পাইকারিতে প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজের দাম সাড়ে ১০ টাকার মতো কমেছে। একই সঙ্গে দেশের বাজারে পেঁয়াজের সরবরাহও বেড়েছে।
পেঁয়াজ ব্যবসায়ীরা বলছেন, গত কয়েক দিনে ভারতীয় পেঁয়াজের আমদানি বেড়েছে। তাতেও কমে আসছে দেশি পেঁয়াজের দাম। আজ বুধবার পাবনার সুজানগর ও সাঁথিয়া উপজেলার পাইকারি হাটগুলোয় ৩ হাজার ৯০০ থেকে ৪ হাজার ১০০ টাকা মণ দরে দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে। অথচ ৫ দিন আগেই তা ৪ হাজার ৩০০ টাকা থেকে সাড়ে ৪ হাজার টাকায় বিক্রি হয়েছিল।
উৎপাদন এলাকার পাশাপাশি রাজধানী ঢাকার বাজারেও দেশি পেঁয়াজের দাম কমতে শুরু করেছে। আজ রাজধানীর শেওড়াপাড়া ও মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বাজার দুটিতে ১১০ টাকা কেজি দরে দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে। দুই দিন আগে এই দুই বাজারে পেঁয়াজের দর ছিল ১২০ টাকা।
বিভিন্ন বাজারের সূত্রে জানা গেছে, পাবনার সুজানগর ও সাঁথিয়া উপজেলায় গত ৫ দিনের ব্যবধানে পাইকারিতে প্রতি মণ দেশি পেঁয়াজের দাম ৪০০ টাকার মতো কমেছে। অর্থাৎ প্রতি কেজিতে পেঁয়াজের দাম কমেছে ১০ টাকার মতো।
সাঁথিয়ার পাইকারি পেঁয়াজ ব্যবসায়ী হবিবর রহমান বলেন, ‘পেঁয়াজের দাম অনেক বেড়ে যাওয়ার পর এখন আবার কমতে শুরু করেছে। সরবরাহ ঠিক থাকলে সামনের কয়েক দিনে দাম আরও কমতে পারে।’
সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, এক বছর আগের তুলনায় বাজারে দেশি পেঁয়াজের দাম ৭৭ শতাংশ বেড়েছে।
ব্যবসায়ীরা জানান, এবার কাঁচা পেঁয়াজ যখন বাজারে আসে, তখন থেকেই দাম বেশি। গত কয়েক সপ্তাহে দেশজুড়ে যে ভারী বৃষ্টি হয়েছিল, পেঁয়াজের মূল্যবৃদ্ধিতে তাও ভূমিকা রাখে। এ ছাড়া এত দিন বাজারে ভারতীয় পেঁয়াজের সরবরাহ কম থাকাও দেশি পেঁয়াজের মূল্যবৃদ্ধির একটি কারণ।
এদিকে বাজারে আমদানি করা (ভারতীয়সহ) পেঁয়াজ দেশি পেঁয়াজের চেয়েও বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। আমদানি করা পেঁয়াজ আকারে কিছুটা বড় হয়। ঢাকার বিভিন্ন বাজারে এ ধরনের পেঁয়াজ ১১০ থেকে ১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। টিসিবির হিসাবে এক মাস আগে আমদানি করা পেঁয়াজের দাম ৮৫ থেকে ৯০ টাকা কেজি ছিল। আর এক বছর আগে এসব পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৪০ থেকে ৫০ টাকা কেজি দরে।
কৃষকেরা ‘ভালো দাম’ পাচ্ছেন
পাবনার স্থানীয় কৃষি কার্যালয়ের তথ্যানুযায়ী, এ বছর প্রতি কেজি পেঁয়াজের উৎপাদন খরচ ছিল ৪০ টাকার মতো। সেখানে কৃষকেরা ১০০ টাকার কাছাকাছি দামে সেই পেঁয়াজ বিক্রি করতে পেরেছেন।
গতকাল মঙ্গলবার সাঁথিয়ার করমজা চতুরহাটে পেঁয়াজ বিক্রি করতে আসেন স্থানীয় বড়গ্রামের পেঁয়াজচাষি ওহাব আলী। তিনি বলেন, ‘দুই বিঘা জমিতে এবার ৯০ মণ পেঁয়াজ পাইছিলাম। মাস তিনেক আগে পেঁয়াজ তোলার পরপরই ৪০ মণ বেচছি। বাকি ৫০ মণ ঘরে রাখছিলাম। সেখান থেকে আজ হাটে পাঁচ মণ পেঁয়াজ আনছি। এবার পেঁয়াজে আমরা (কৃষকেরা) বেশ ভালো লাভই পাইলাম।’
ওহাব আলীর মতো অনেক চাষিই পেঁয়াজের ভালো দাম পাওয়ার কথা জানিয়েছেন। এ বিষয়ে সুজানগর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রাফিউল ইসলাম বলেন, পেঁয়াজের ফলন এবার ভালো হয়েছে। কৃষকের ঘরে পেঁয়াজের মজুতও বেশ ভালো। পেঁয়াজের দাম কিছুটা বাড়ায় ভোক্তারা কিছুটা বিপাকে পড়লেও কৃষকেরা এবার লাভের মুখ দেখছেন। এতে ভবিষ্যতে তাঁরা আরও বেশি জমিতে পেঁয়াজ চাষে উৎসাহ পাবেন।
শিগগির সরবরাহ–ঘাটতি হবে না
উপজেলা কৃষি কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, সুজানগর উপজেলায় সর্বশেষ মৌসুমে প্রায় ২ লাখ ৯৮ হাজার ৫৫০ টন পেঁয়াজ উৎপাদিত হয়েছে। এর মধ্যে কৃষকের কাছে এখনো ১ লাখ ২৮ হাজার টন পেঁয়াজ মজুত রয়েছে।
অন্যদিকে সাঁথিয়া উপজেলায় এবার উৎপাদিত হয়েছে ২ লাখ ১৬ হাজার টন পেঁয়াজ; যার মধ্যে ৮৮ হাজার ৫০০ টন কৃষকের কাছে মজুত রয়েছে। ফলে শিগগির বাজারে পেঁয়াজের বড় ঘাটতি হবে না বলে জানান উপজেলা দুটির কৃষি কর্মকর্তারা।