বর্তমানে দেশের টেলিযোগাযোগ খাতে টিকে আছে চারটি নেটওয়ার্ক অপারেটর। এর মধ্যে তিনটি অপারেটরই তেমন কোনো মুনাফা করতে পারছে না। এ কারণে তারা বিনিয়োগ সংকটে ভুগছে।
রাজধানীর একটি হোটেলে মঙ্গলবার টেলিকম রিপোর্টার্স নেটওয়ার্ক বাংলাদেশ (টিআরএনবি) আয়োজিত এক গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা এসব কথা বলেন। এতে ছোট অপারেটররা বাজারে টিকে থাকতে সুরক্ষা চেয়েছে।
অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, টেলিযোগাযোগ খাতে সুষ্ঠু প্রতিযোগিতা ও নতুন বিনিয়োগ নিশ্চিতে তাৎপর্যপূর্ণ বাজার ক্ষমতা বা সিগনিফিক্যান্ট মার্কেট পাওয়ার (এসএমপি) নির্দেশিকা কার্যকর করা দরকার। উল্লেখ্য, এই নির্দেশিকার মাধ্যমে বাজারের সবচেয়ে বড় অপারেটরের ওপর বিধিনিষেধ আরোপ ছোট অপারেটরকে সুবিধা দেওয়া হয়, যাতে বাজারে প্রতিযোগিতা বাড়ে।
টিআরএনবি আয়োজিত ‘টেলিযোগাযোগ খাত: বিনিয়োগে ধীরগতি ও অসম প্রতিযোগিতা’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে প্রধান অতিথি বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) এমদাদ উল বারী বলেন, ‘নিয়ন্ত্রক হিসেবে বিটিআরসির নিজের কোনো ক্ষমতা নেই। যেকোনো কিছুর আগে আমাদের সরকারের কাছ থেকে পূর্ব অনুমোদন নিতে হয়। বিভিন্ন আইন ও নীতিমালায় আকস্মিক পরিবর্তন আরেকটি সমস্যা। তবে এসএমপি অপারেটরের ক্ষেত্রে ইতিমধ্যেই কিছু বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘কোনো প্রতিষ্ঠানের স্বার্থে সেটিকে বাঁচানোর চেষ্টা আমরা করব না। বরং চেষ্টা করব জনগণের সেবার স্বার্থে প্রতিষ্ঠানকে বাঁচাতে। গ্রাহকসেবার মান বৃদ্ধি করার লক্ষ্যে যেকোনো ব্যবসাই সমর্থনযোগ্য।’
বৈঠকের মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন টিআরএনবির সাংগঠনিক সম্পাদক আল আমিন দেওয়ান। তিনি বলেন, একটি মোবাইল অপারেটরের আধিপত্যের কারণে বাজারে প্রতিযোগিতা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
একই ধরনের উদ্বেগ প্রকাশ করেন রবি আজিয়াটার চিফ করপোরেট অ্যান্ড রেগুলেটরি অফিসার মোহাম্মদ সাহেদুল আলম ও বাংলালিংকের হেড অব করপোরেট অ্যাফেয়ার্স তাইমুর রহমান।
রবির সাহেদুল আলম বলেন, বাস্তবতা হলো টেলিকম খাতে সুস্থ প্রতিযোগিতার কোনো পরিবেশ নেই। একটি অপারেটর প্রতিবছর বিপুল মুনাফা করছে। এর কারণ টেলিকম বিধিমালা বড় অপারেটরদের সুবিধা দিচ্ছে, অন্যদিকে ছোট অপারেটরের প্রবৃদ্ধি ব্যাহত করছে।
বাংলালিংকের হেড অব করপোরেট অ্যাফেয়ার্স তাইমুর রহমান বলেন, ‘ইতিমধ্যে যেসব নিয়মনীতি আছে, সেগুলো বাস্তবায়ন করা প্রয়োজন। যেমন অপারেটরদের মধ্যে অবকাঠামো ভাগাভাগি (ইনফ্রাস্ট্রাকচার শেয়ারিং) করার প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করতে বিদ্যমান বা নতুন আইনে এ–সংক্রান্ত বাধ্যবাধকতা রাখতে হবে। সামনে যেহেতু এআইয়ের (কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা) মতো অত্যাধুনিক প্রযুক্তি আসছে, আমাদের বাজারে প্রতিযোগিতা কীভাবে আরও বাড়ানো যাবে, সে বিষয়ে মনোনিবেশ করতে হবে।’
সরকারি মোবাইল অপারেটর টেলিটকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নুরুল মাবুদ চৌধুরী বলেন, অসম প্রতিযোগিতার এতটাই খারাপ অবস্থা যে এটা নিয়ে বলার পরিস্থিতিই নেই।
টেলিযোগাযোগব্যবস্থার মানোন্নয়ন ও সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে বিটিআরসিতে গবেষণা ও উন্নয়ন বিভাগ প্রতিষ্ঠার পরামর্শ দেন ফরেন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির নির্বাহী পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) টি আই এম নুরুল কবির। তিনি বলেন, কাউকে রাজনৈতিক সুবিধা না দিয়ে একীভূত লাইসেন্স মডেল করার কথা ভাবতে হবে।
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী রাশনা ইমাম বলেন, এসএমপি নির্দেশিকায় ২০টি ধারা আছে। কিন্তু বাস্তবায়ন করা হয়েছে মাত্র তিনটি।
বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন টিআরএনবির সভাপতি সমীর কুমার দে। তিনি বলেন, এসএমপি গাইডলাইন সঠিকভাবে বাস্তবায়িত হলে ছোট অপারেটরদের সুরক্ষা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।
অনুষ্ঠানে মোবাইল অপারেটরদের সংগঠন অ্যামটবের মহাসচিব লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব) মো. জুলফিকার, প্রতিযোগিতা কমিশনের সাবেক পরিচালক মো. খালেদ আবু নাসের, বাংলালিংকের কোম্পানি সেক্রেটারি জহরত আদিব চৌধুরী প্রমুখ বক্তব্য দেন।