ঈদ গেলেও যে কারণে কমছে না মুরগির দাম
ঈদের আগে হঠাৎ মুরগির দাম বেড়ে গিয়েছিল। ব্রয়লার ও সোনালি উভয় ধরনের মুরগির দামই তখন বৃদ্ধি পেয়েছিল। এখনো বাজার সেভাবেই আছে। তবে এবার ঈদের আমেজ কাটতে না কাটতেই এসে গেছে পয়লা বৈশাখ। তাই উৎসব এখনো শেষ হয়নি। সে জন্য মুরগির চাহিদা রয়েছে। কিন্তু ঢাকার বাজারে চাহিদার তুলনায় মুরগি সরবরাহ কম হচ্ছে। কারণ, শহরের অধিকাংশ মানুষ এখন গ্রামে থাকায় সেখানে মুরগির দাম বেড়েছে। ফলে ঢাকায় মুরগি আসছে কম।
আজ শনিবার রাজধানীর কারওয়ান বাজারে গিয়ে দেখা গেছে, অধিকাংশ দোকানই বন্ধ। গুটিকয়েক দোকান খোলা থাকলেও সেগুলোতে মুরগির জোগান কম। ক্রেতাও অবশ্য তুলনামূলক কম। তবে বাজারে সরবরাহে টান থাকায় বিক্রেতারা এখনো বেশ চড়া দামেই মুরগি বিক্রি করছেন। তাতে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগির দাম পড়ছে ২৪০ থেকে ২৫০ টাকা। আর সোনালি মুরগি ৩৫০ থেকে ৩৭০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। ঈদের সময়ও এ রকম দামেই ক্রেতাদের মুরগি কিনতে হয়েছে। এর আগে বাজারে মুরগির দাম কেজিতে ২০ থেকে ৫০ টাকা কম ছিল।
কারওয়ান বাজারের জননী মুরগির আড়তের স্বত্বাধিকারী আবদুল ওহাব প্রথম আলোকে বলেন, শহরের মানুষ এখন গ্রামে। ঈদের সময় গ্রামে মুরগির বেশ চাহিদা থাকে। তাই গ্রাম থেকে শহরে মুরগি তেমন আসছে না। পরিবহন ও সরবরাহ সংকটের কারণে পাইকারেরা দাম বাড়িয়ে নিচ্ছেন। সে জন্য দাম কমছে না। এবার যেহেতু লম্বা ছুটি, সেহেতু বাজার স্বাভাবিক হতে আরও সপ্তাহ-দশ দিন সময় লাগবে বলে মনে করেন তিনি।
রোজার শেষ দিকে বাজারে মুরগির দাম বেড়ে যায়। তখন ঢাকার ব্যবসায়ীরা দাবি করেন, খামারিরা মুরগির দাম বেশি রেখেছেন। তাতে বাজার বাড়তি। অন্যদিকে খামারিরা বলেন, বাচ্চার দাম ও উৎপাদন খরচ বেশি হওয়ায় মুরগির দাম বেড়েছে।
সাতক্ষীরার শ্যামনগর এলাকার মুরগির খামারি মাহমুদুল হাসান প্রথম আলোকে বলেন, ‘উৎপাদন খরচ হিসাব করলে প্রতি কেজি মুরগির দাম পড়ে ২০০ টাকার আশপাশে। পাইকারিতে ১০ থেকে ২০ টাকা লাভে বিক্রি করেছি। আর খুচরায় মুরগি বিক্রি করেছি ২৩০ থেকে ২৪০ টাকা কেজি।’
মুরগি উৎপাদনের খরচের প্রভাব বাজারে পড়েছে, এমন দাবি ব্যবসায়ীদের অনেক দিনের। বিশেষ করে সাম্প্রতিক সময়ে বাচ্চার দাম অতিরিক্ত বেড়ে যাওয়ায় মুরগির দাম বাড়ার অন্যতম কারণ বলে মনে করেন অনেকে।
প্রান্তিক খামারিদের সংগঠন বাংলাদেশ পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সুমন হাওলাদার প্রথম আলোকে বলেন, ‘মুরগির বাচ্চা ও খাবারের (পোলট্রি ফিড) দাম বেশি হওয়ার কারণে খামারিদের উৎপাদন খরচ বেশি পড়ছে। সেই হিসাবে আড়াই শ টাকা কেজিতে ব্রয়লার মুরগি কিনতে হলে সেটা যে খুব বেশি পড়ছে, তা বলা যাবে না। আমি নিজেও গ্রামে এসে আড়াই শ টাকার বেশিতে মুরগি কিনলাম।’
সুমন হাওলাদার আরও বলেন, এটা ঠিক যে ক্রেতাদের এই দামে মুরগি কিনতে কষ্ট হচ্ছে। সুতরাং মুরগির বাজার স্থিতিশীল করতে হলে সরকারকে কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। মুরগির বাচ্চা, খাবার ও ওষুধের দাম কমাতে হবে। নইলে আরও ক্ষুদ্র খামারি উৎপাদন ছাড়তে বাধ্য হবেন। দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে বাজারে সংকট আরও তীব্র হবে।
এদিকে বাজারে শুধু মুরগিই নয়, সব ধরনের মাংসের দামই এখনো চড়া। ঈদের আগে-পরে ঢাকার বাজারে প্রতি কেজি গরুর মাংস বিক্রি হয়েছে ৮০০ টাকা। খাসির মাংস ১ হাজার ১০০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকায় বিক্রি হয়। বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকার রোজার মধ্যে (১৫ মার্চ) ২৯টি পণ্যের দাম বেঁধে দেয়। এর মধ্যে গরু ও মুরগির মাংসের দামও ছিল।
সরকারের কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের তথ্যমতে, ব্রয়লার মুরগি উৎপাদনে কেজিতে খরচ পড়ে ১৪৬ টাকা। তাই উৎপাদনকারী, পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ের মুনাফা যোগ করে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগির দাম নির্ধারণ করে দেওয়া হয় ১৭৫ টাকা। একইভাবে গরুর মাংস খুচরা পর্যায়ে ৬৬৪ টাকায় বিক্রির নির্দেশনা দেওয়া হয়। কিন্তু বাজারে এই দামের কোনোটিই কার্যকর হয়নি।
বাংলাদেশ পোলট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ সেন্ট্রাল কাউন্সিলের (বিপিআইসিসি) গত বছরের তথ্যানুযায়ী, দেশে ছোট-বড় মিলিয়ে মুরগির খামার আছে ৮০ হাজার থেকে ৯০ হাজার। করোনার আগে সংখ্যাটি ছিল ১ লাখ ১০ হাজারের বেশি। বাণিজ্যিক ভিত্তিতে দেশে প্রতিদিন ৪ কোটির বেশি ডিম ও ৩ হাজার ৫০০ মেট্রিক টন মুরগির মাংস উৎপাদিত হয়। পোলট্রি খাতে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে কর্মসংস্থান হয়েছে ৬০ লাখ লোকের, আর বাজারের আকার ৪০ হাজার কোটি টাকার ওপরে।