ঘূর্ণিঝড় মোখার প্রভাব
গ্যাস–সংকটে শিল্পোৎপাদন ব্যাহত
গ্যাস–সংকটের কারণে কোথাও কোথাও কারখানা বন্ধও রাখতে হচ্ছে। এতে করে শিল্পকারখানাগুলো বিপুল লোকসানের মুখে পড়েছে।
নারায়ণগঞ্জের পঞ্চবটী বিসিক শিল্পনগরে ফেয়ার অ্যাপারেলসের ডাইং ইউনিটের দৈনিক উৎপাদনক্ষমতা ৩০ টন। ঘূর্ণিঝড় মোখার প্রভাবে গ্যাস–সংকট দেখা দেওয়ায় চার দিন ধরে ওই ইউনিটের উৎপাদন বন্ধ রয়েছে। এতে কারখানাটির পোশাক তৈরির ইউনিটে চাহিদা অনুযায়ী কাপড় সরবরাহ করা যাচ্ছে না। সঙ্গে যুক্ত হয়েছে লোডশেডিং। ফলে তৈরি পোশাকের উৎপাদনও তিন ভাগের এক ভাগে নেমেছে।
গতকাল সোমবার দুপুর ওই কারখানায় গিয়ে দেখা যায়, গ্যাস না থাকায় ডাইং ইউনিটের উৎপাদন বন্ধ। ডাইং মেশিনের সামনে থান কাপড়ের স্তূপ। কাজ না থাকায় শ্রমিকদের ছুটি দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। বয়লার মেশিন কক্ষে গিয়ে জানা যায়, গ্যাসের চাপ শূন্য পিএসআই (গ্যাসের চাপ মাপার একক)।
ফেয়ার অ্যাপারেলসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ কাসেম প্রথম আলোকে বলেন, ‘গ্যাস–সংকটে শুধু ডাইং সেকশনে সমস্যা হচ্ছে তা নয়, গার্মেন্টসে কাপড় সরবরাহ করা যাচ্ছে না। কাপড় সেলাই করা হলেও সেগুলো আবার ফিনিশিং করা যাচ্ছে না।’
গ্যাস–সংকটের কারণে নারায়ণগঞ্জের এই কারখানার মতো গাজীপুর ও চট্টগ্রামের অনেক শিল্পকারখানার উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। কোথাও কোথাও কারখানা বন্ধও রাখতে হচ্ছে। এতে করে শিল্পকারখানাগুলোকে বিপুল লোকসান দিতে হচ্ছে।
ঘূর্ণিঝড় মোখার কারণে কক্সবাজারের মহেশখালীর ভাসমান এলএনজি টার্মিনাল থেকে গত শুক্রবার রাত ১১টা থেকে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়া হয়। এরপরই গ্যাস–সংকটের কারণে বিদ্যুৎ উৎপাদন কমে যায়। শিল্পকারখানায়ও গ্যাস সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। গতকাল অবশ্য দুটি ভাসমান এলএনজি টার্মিনালের একটি থেকে গ্যাস সরবরাহ শুরু হয়েছে।
গ্যাস ও বিদ্যুৎ–সংকটে চট্টগ্রামে চারটি বড় ইস্পাত কারখানা বিএসআরএম, একেএস, জিপিএইচ ও কেএসআরএম কারখানা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এসব বড় কারখানার পাশাপাশি মাঝারি আকারের ইস্পাত কারখানাগুলোও বন্ধ রয়েছে।
জানতে চাইলে বিএসআরএম গ্রুপের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক তপন সেনগুপ্ত গতকাল বলেন, মূলত বিদ্যুৎ–সংকটের কারণে বিলেট তৈরির চারটি কারখানা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। তবে রড তৈরির দুটি কারখানায় বিকল্প উপায়ে আংশিক উৎপাদন চালু রাখা হয়েছে।
গ্যাস–সংকটে সিরামিক কারখানার উৎপাদনও ব্যাহত হচ্ছে। তেমনি একটি কারখানা স্ট্যান্ডার্ড সিরামিক ইন্ডাস্ট্রিজ। গাজীপুর মহানগরীর মালেকের বাড়ি এলাকার এই সিরামিক কারখানায় গ্যাস–সংকটের কারণে উৎপাদন কমে গেছে।
কারখানাটির উৎপাদন কর্মকর্তা জিয়াউল ইসলাম বলেন, গত শনিবার থেকে কারখানায় গ্যাসের চাপ খুবই কম। প্রতিদিন গড়ে ২০ ভাগ উৎপাদন কমেছে।
গ্যাস–সংকটে নারায়ণগঞ্জের পঞ্চবটী, আড়াইহাজার ও ভুলতা এবং টাঙ্গাইলের ভুলতার বস্ত্রকলগুলো বেশি ভুগছে। ঘূর্ণিঝড় মোখার আগে থেকেই এসব এলাকায় সমস্যা ছিল। গত শুক্রবার থেকে সংকট আরও প্রকট হয়েছে।
সাভারের লিটল স্টার স্পিনিং মিলে গত শুক্রবার থেকে উৎপাদন কমে গেছে। বর্তমানে উৎপাদন সক্ষমতার ৪০ শতাংশ সুতা উৎপাদন করতে পারছে কারখানাটি। এমন তথ্য দিয়ে প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান খোরশেদ আলম বলেন, ‘আগে থেকেই গ্যাসের সংকট ছিল। গত শুক্রবার থেকে সমস্যা বেড়েছে।’
জানতে চাইলে বস্ত্রকলমালিকদের সংগঠন বিটিএমএর সভাপতি মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘সাধারণত গ্যাসের চাপ ৫-৬ পিএসআই থাকলে কারখানার উৎপাদন চালানো যায়। তবে তিন দিন ধরে গ্যাসের চাপ শূন্য, কিংবা এক বা দুই পিএসআই পাওয়া যাচ্ছে। সরকারের তরফ থেকে গ্যাস–সংকটের বিষয়টি অবহিত করা হয়েছে। সে কারণে আমরাও ধৈর্য ধারার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। ’
[প্রতিবেদনটি তৈরিতে সহায়তা করেছেন প্রথম আলোর বিশেষ প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম এবং গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি ]