স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকের পারিবারিক বিমা কোম্পানি সানলাইফ ইনস্যুরেন্সের উদ্যোক্তা-পরিচালকেরা তাদের সব শেয়ার বিক্রি করে দিচ্ছেন। আর কোম্পানিটির উদ্যোক্তা-পরিচালকদের এসব শেয়ার কিনতে যাচ্ছে বিমা খাতের অপর কোম্পানি গ্রিন ডেলটা ইনস্যুরেন্স ও তার সহযোগী প্রতিষ্ঠান মিলে। আজ সোমবার কোম্পানি দুটি আলাদা আলাদাভাবে স্টক এক্সচেঞ্জের মাধ্যমে এ তথ্য জানিয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, সানলাইফ ইনস্যুরেন্সের উদ্যোক্তা-পরিচালকদের মধ্যে ৮ শতাংশের বেশি শেয়ার রয়েছে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকের হাতে। যদিও সরকারের মন্ত্রী হওয়ায় তিনি বর্তমানে কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদে নেই। তবে শেয়ারের মালিকানা রয়েছে তাঁর হাতে। বর্তমানে বিমা কোম্পানিটির পরিচালনার সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রীর পরিবারের সদস্যরা।
সানলাইফ ইনস্যুরেন্সের পক্ষ থেকে জানানো হয়, কোম্পানিটি উদ্যোক্তা-পরিচালকদের হাতে থাকা প্রায় ৩৮ শতাংশ বা ১ কোটি ৫৪ লাখ ১৯ হাজার শেয়ারের পুরোটাই বিক্রি করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। গত রোববার অনুষ্ঠিত সানলাইফ ইনস্যুরেন্সের পরিচালনা পর্ষদের সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়। নিয়ন্ত্রণ সংস্থার অনুমোদন সাপেক্ষে এ শেয়ার বিক্রির কার্যক্রম সম্পন্ন হবে। আর এ শেয়ার বিক্রির পর মূলত কোম্পানিটির মালিকানায় বদল আসবে। জাহিদ মালেকের পারিবারিক কোম্পানিটির মালিকানা যাবে গ্রিন ডেলটা ইনস্যুরেন্সের হাতে। নিয়ন্ত্রণ সংস্থার অনুমোদনের পর ব্লক মার্কেটে শেয়ারের হাতবদলের মাধ্যমে রদবদল হবে কোম্পানির মালিকানারও।
এ বিষয়ে সানলাইফ ইনস্যুরেন্সের কোম্পানি সচিব আবদুল আজিজ প্রথম আলোকে বলেন, কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদ উদ্যোক্তা-পরিচালকদের শেয়ার বিক্রির এ সিদ্ধান্ত হয়েছে। মূল্য সংবেদনশীল তথ্য হিসেবে তা বিনিয়োগকারীদের জানানো হয়েছে। এর বেশি তিনি আর কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
পরে এ বিষয়ে জানতে কোম্পানিটির ভারপ্রাপ্ত প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ নুরুল ইসলামের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি।
এদিকে সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা যায়, মালিকানার হাতবদল হলেও কোম্পানিটি স্বতন্ত্রভাবে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করবে। গ্রিন ডেলটা ইনস্যুরেন্স ও তার সহযোগী প্রতিষ্ঠান মিলে সানলাইফের উদ্যোক্তাদের শেয়ার কিনে নিলেও দুটি কোম্পানি একীভূত হওয়ার সম্ভাবনা কম। কারণ, গ্রিন ডেলটা সাধারণ বিমা খাতের কোম্পানি আর সানলাইফ জীবন বিমা কোম্পানি। তাই কোম্পানি দুটির কর্মকাণ্ডও ভিন্ন। তাই গ্রিন ডেলটার পরিচালনা ও ব্যবস্থাপনায় আলাদা কোম্পানি হিসেবে কার্যক্রম চালাবে সানলাইফ।
কত দামে সানলাইফের উদ্যোক্তাদের শেয়ার গ্রিন ডেলটা কিনে নিচ্ছে তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। এ বিষয়ে দুই কোম্পানির কেউই কিছু জানাতে অপারগতা প্রকাশ করেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে দুই কোম্পানির একাধিক কর্মকর্তা বলেন, সানলাইফের দায়দেনার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার পর শেয়ারের দাম চূড়ান্ত করা হবে।
বিমা নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা যায়, সানলাইফ ইনস্যুরেন্সের কাছে বিমাকারীদের বড় অঙ্কের অর্থ অনাদায়ী রয়েছে। কোম্পানিটি বেশ কয়েক বছর ধরে গ্রাহকের বিমার টাকা পরিশোধ করছে না। উদ্যোক্তাদের সব শেয়ার বিক্রির সিদ্ধান্তের আগে গত আগস্টে মহাখালীতে নিলয় সানলাইফ টাওয়ারে অবস্থিত কোম্পানিটির মালিকানায় থাকা চারটি ফ্লোরের জায়গা বিক্রির ঘোষণা দেয়। সব মিলিয়ে ওই চার ফ্লোরে কোম্পানিটির জায়গার পরিমাণ ছিল ১২ হাজার বর্গফুটের বেশি।
সানলাইফ ইনস্যুরেন্স ২০১৩ সালে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হয়। ওই বছর প্রাথমিক গণপ্রস্তাব বা আইপিওর মাধ্যমে কোম্পানিটি ১২ কোটি টাকা সংগ্রহ করে। সর্বশেষ গত আগস্টের তথ্য অনুযায়ী, কোম্পানিটির সাড়ে ৫২ শতাংশ শেয়ার রয়েছে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে। প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের হাতে রয়েছে ৯ দশমিক ২০ শতাংশ শেয়ার। আর উদ্যোক্তা-পরিচালকদের হাতে রয়েছে ৩৮ দশমিক ২৯ শতাংশ শেয়ার। সেই শেয়ারই বিক্রি করে দিচ্ছে কোম্পানিটি।