অনেক ঘটনার পর সোনালী লাইফে এবার পর্যবেক্ষক নিয়োগ

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত সোনালী লাইফ ইনস্যুরেন্স কোম্পানিতে এবার পর্যবেক্ষক নিয়োগ দিয়েছে সরকার। অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. শাহ আলম হলেন সেই পর্যবেক্ষক।

গতকাল সোমবার আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ এ নিয়োগের কথা জানিয়ে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষকে (আইডিআরএ) চিঠি দিয়েছে। এতে পর্যবেক্ষক নিয়োগসহ মোট চারটি নির্দেশনার কথা উল্লেখ রয়েছে। আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের উপস্থাপিত এ–সংক্রান্ত প্রস্তাবে অর্থ ও বাণিজ্য উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ সম্মতি দিয়েছেন বলে চিঠিতে বলা হয়েছে।

এদিকে দুই সপ্তাহের বেশি সময় ধরে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগে কোনো সচিব নেই। সচিবের দায়িত্বে আছেন বিভাগটির অতিরিক্ত সচিব অমল কৃষ্ণ মণ্ডল। যোগাযোগ করলে তিনি প্রথম আলোকে জানান, চিঠি পাঠানো হয়েছে এবং এতে কিছু নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। নির্দেশনাগুলো যথাযথভাবে পালিত হবে বলে তিনি আশা করছেন।
কোম্পানিটির পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান ছিলেন পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি মোস্তফা গোলাম কুদ্দুস। স্ত্রী, ছেলে, মেয়ে, পুত্রবধূ ও জামাতাকে নিয়েই তাঁর নেতৃত্বে সোনালী লাইফ থেকে ১৮৮ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে। এমন অভিযোগে গত ২৫ জুলাই তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

মামলা হওয়ার আগে গত এপ্রিলে সোনালী লাইফের পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দেয় আইডিআরএ। বিমা খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি গত ২১ এপ্রিল এ কোম্পানিতে প্রশাসক হিসেবে এস এম ফেরদৌসকে নিয়োগ করে। মোস্তফা গোলাম কুদ্দুস ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের মাধ্যমে প্রশাসক অসহযোগিতামূলক আচরণের শিকার হয়ে আসছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে। তবে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের চিঠিতে প্রশাসকের বিষয়ে কিছু বলা হয়নি। যোগাযোগ করা হলে প্রশাসক এস এম ফেরদৌসও কিছু বলতে রাজি হননি।

আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের চিঠিতে বলা হয়েছে, প্রশাসক নিয়োগের পরে উদ্ভূত জটিলতা নিরসনের জন্য পর্যবেক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত পর্যবেক্ষক মো. শাহ আলম আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিবের কাছে নিয়মিতভাবে সোনালী লাইফের সার্বিক কার্যক্রম তুলে ধরবেন।
চিঠিতে আরও বলা হয়, আইনি জটিলতা নিরসনের জন্য সোনালী লাইফের দায়ের করা সব রিট মামলা প্রত্যাহার করতে হবে, এ শর্তে কোম্পানিটিতে দুজন স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগ করবে আইডিআরএ। দুজনের মধ্যে একজন অন্তর্বর্তীকালীন পর্ষদের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করবেন।
এ ছাড়া যে নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠান (হুদাভাসি) সোনালী লাইফের ওপর নিবিড় নিরীক্ষা করছে, তা শেষ করার পর আইডিআরএর কাছে প্রতিবেদন দাখিল করতে হবে। যত দ্রুত সম্ভব অন্তর্বর্তীকালীন পর্ষদ নিয়মিত পর্ষদ গঠনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে এবং ওই পর্ষদের কাছে দায়িত্ব হস্তান্তর করবে।

সোনালী লাইফের পর্ষদ ভেঙে দেওয়ার পর থেকে মোস্তফা গোলাম কুদ্দুসপক্ষ খোদ আইডিআরএ চেয়ারম্যান মোহাম্মদ জয়নুল বারীর পদত্যাগ দাবি করে আন্দোলন চালিয়ে আসছিল। গত ২০ আগস্ট বিকেল চারটা থেকে দিবাগত রাত ১টা পর্যন্ত ৯ ঘণ্টা সংস্থাটির চেয়ারম্যান, চার সদস্য ও সব কর্মচারীকে অবরুদ্ধ করে রাখা হয়। পরে সেনাবাহিনীর মধ্যস্থতায় কিছু শর্তে ঐকমত্যের মাধ্যমে তাঁরা দিবাগত রাত দেড়টায় কার্যালয় থেকে বের হন।
সূত্রগুলো জানায়, আইডিআরএ ও সোনালী লাইফের মধ্যে হওয়া ওই ঐকমত্যের পরই আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ কোম্পানিটিকে ঘিরে নতুন প্রস্তাব দেয় অর্থ উপদেষ্টার কাছে।
নতুন নির্দেশনা-বিষয়ক চিঠি আইডিআরএর পাশাপাশি সোনালী লাইফেও পাঠিয়েছে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ। তবে কোম্পানিটির সাবেক চেয়ারম্যান মোস্তফা গোলাম কুদ্দুস গতকাল রাত সাড়ে আটটা পর্যন্ত চিঠি পাননি বলে জানান। নির্দেশনার বিষয়গুলো তুলে ধরলে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, আইনজীবীর সঙ্গে কথা বলার আগপর্যন্ত এ নিয়ে কোনো মন্তব্য করবেন না।

তবে বিমা খাতের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, অর্থ আত্মসাতের দায়ে যাঁদের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা রয়েছে, তাঁদের চাপে তাঁদেরই প্রতিনিধিদের সঙ্গে নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইডিআরএকে সমঝোতা করতে হয়েছে। আর আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগও অভিযুক্ত ব্যক্তিদের ছাড় দেওয়ার পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। এর মাধ্যমে বিমা খাতে একটা বিরল নেতিবাচক ঘটনার জন্ম হলো।
দেশের বিমা কোম্পানিগুলোর চেয়ারম্যানদের সংগঠন বাংলাদেশ ইনস্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশন (বিআইএ)। শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকে সংগঠনটির সভাপতি শেখ কবির হোসেন লোকচক্ষুর অন্তরালে রয়েছেন বলে জানা গেছে। সংগঠন পরিচালনার দায়িত্বে আছেন এখন এর প্রথম সহসভাপতি নাসির উদ্দিন আহমেদ। যোগাযোগ করলে তিনি গতকাল রাতে প্রথম আলোকে বলেন, ‘সোনালী লাইফের পলিসি হোল্ডার ও বিমাকর্মীদের স্বার্থে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের নির্দেশনাকে স্বাগত জানাই। তবে কিছু অস্পষ্টতা তৈরি হয়েছে। বিমা আইনের আলোকে অস্পষ্টতাগুলো দূর করতে আরও ব্যাখ্যা দরকার বলে আমরা মনে করি।’