পাচার হওয়া অর্থ ফেরাতে টাস্কফোর্স হচ্ছে, থাকছেন বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধি
বাংলাদেশ থেকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনতে টাস্কফোর্স গঠন করা হবে। অর্থ ও বাণিজ্য উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ আজ বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে বায়িং হাউস অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিনিধিদলের সঙ্গে অনুষ্ঠিত বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এ কথা জানান।
অর্থ উপদেষ্টা বলেন, দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে যেসব সংস্কারের কথা বলা হয়েছিল, সেগুলোর কিছু দৃশ্যমান হয়েছে। যেমন খেলাপি ঋণের বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। ব্যাংকের পর্ষদগুলোও পুনর্গঠন করা হচ্ছে। আর তারল্য সমস্যা সমাধান করেছেন গভর্নর।
পাচারের অর্থ ফেরত আনতে টাস্কফোর্স গঠনের কথা বললেও এ নিয়ে বিশদ কিছু জানাননি অর্থ উপদেষ্টা। তবে অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, আগামী সপ্তাহে এই টাস্কফোর্স গঠন করা হবে। এতে বাংলাদেশ ব্যাংক, বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইনটেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ), দুর্নীতি দমন কমিশন, অর্থ বিভাগ, এনবিআর, অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয়, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) ইত্যাদি সংস্থার প্রতিনিধিরা থাকবেন।
ওয়াশিংটনভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংস্থা গ্লোবাল ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টিগ্রিটির (জিএফআই) সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০০৯ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত বৈদেশিক বাণিজ্যের আড়ালে বাংলাদেশ থেকে ৪ হাজার ৯৬৫ কোটি ডলার পাচার হয়। বাংলাদেশি মুদ্রায় যার পরিমাণ সোয়া ৪ লাখ কোটি টাকা।
সদ্য পদত্যাগী আওয়ামী লীগ সরকারের তৃতীয় মেয়াদের শেষ অর্থবছরে (২০২৩-২৪) ৭ শতাংশ কর দিয়ে বাংলাদেশের বাইরে যেকোনো রূপে গচ্ছিত অপ্রদর্শিত অর্থ ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে বৈধভাবে দেশে এনে আয়কর রিটার্নে দেখানোর সুযোগ দেওয়া হয়েছিল। তবে এ সুযোগ কোনো কাজে লাগেনি, এক টাকাও ফেরত আসেনি।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) নতুন চেয়ারম্যান হিসেবে যোগ দিয়ে গত ১৯ আগস্ট মো. আবদুর রহমান খান বলেন, ‘অর্থ পাচার নিয়ে বিএফআইইউ কাজ করছে। এনবিআরের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সেলও (সিআইসি) কাজ করবে। যখনই কোনো ইঙ্গিত পাব, অনুসন্ধান করা হবে।’
বিশেষজ্ঞদের মতে, অর্থ পাচার রোধে বাংলাদেশ কতটা সফল, তা অনেকাংশেই নির্ভর করছে বিএফআইইউর সক্ষমতার ওপর। বিএফআইইউকে শক্তিশালী করার জন্য ইউনিটটিকে আরও ক্ষমতা দিতে হবে, নিজস্ব তথ্যভান্ডার সমৃদ্ধ করতে হবে এবং সময়ে–সময়ে আন্তর্জাতিক রীতিনীতি অনুসারে গোপনীয়তা রক্ষা করে জনগণকে তথ্য জানাতে হবে।
এদিকে সালেহউদ্দিন আহমেদ সাংবাদিকদের আরও বলেন, অনেক কারণে জিনিসপত্রের দাম বেড়ে গেছে এবং চট করেই তা নামিয়ে আনা যাবে না। তবে আগামী কয়েক মাসের জিনিসপত্রের দাম কমে আসবে। তিনি আরও বলেন, ‘আলু, পেঁয়াজের শুল্ক কমিয়েছি। মাছ, মাংস ও ডিমের বিষয়েও কথা বলেছি। বাজার তদারকিতে জোর দিতে বলেছি।’
বায়িং হাউসের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনার বিষয়বস্তু জানতে চাইলে উপদেষ্টা বলেন, বায়িং হাউসের মাধ্যমে অনেক ক্রয়াদেশ (অর্ডার) আসে। রপ্তানির ক্ষেত্রে তাঁদের সহায়তা থাকে। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) নিবন্ধনের পাশাপাশি ব্যাংক ও ক্রয়াদেশ নিয়ে তাঁদের কিছু সমস্যা আছে। তাঁরা বলেছেন, এগুলোর সমাধান করলে রপ্তানি বাড়বে।
এ ছাড়া সচিবালয়ে আজ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন বিভিন্ন সংস্থার প্রধানদের সঙ্গেও একটি বৈঠক করেন উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ। তিনি ওই মন্ত্রণালয়েরও দায়িত্বপ্রাপ্ত উপদেষ্টা। বৈঠকে তিনি কর্মকর্তাদের উদ্দেশে বলেন, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) কাছে আরও ডলার চাওয়া হবে। পাওয়া গেলে এ অর্থের যেন অপচয় না হয়, সেদিকে সবাইকে সজাগ থাকতে হবে।
উপদেষ্টা বলেন, দেশের উন্নয়ন কার্যক্রম বাস্তবায়নে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ব্যবহার খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বিজ্ঞান গবেষণার আউটপুট কাজে না লাগলে উন্নয়ন অর্থবহ হবে না। গবেষণা ও গবেষণার প্রয়োগের ফলেই দেশের প্রাণী ও মৎস্যসম্পদের উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে। এ সময় তিনি আরও বলেন, মানুষ অনুভব করুক যে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি নামের একটি মন্ত্রণালয় আছে। শুধু রূপপুর (রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্প) দিয়ে মন্ত্রণালয়ের কাজ শেষ না। নিজেদের কাজ দিয়ে প্রমাণ করতে হবে।