অভিজ্ঞতাটা আমার এক সহকর্মীর। প্রবাসে থাকা স্বজন অর্থ পাঠিয়েছেন, ব্যাংক থেকে তুলতে হবে। মিরপুর ১২ নম্বরে মিরপুর ডিওএইচএসে ঢোকার মুখে রাষ্ট্রমালিকানাধীন একটি ব্যাংকে গেলেন তিনি। সব ব্যবস্থাই ভালো। প্রবাসী আয়ের বিপরীতে ২ শতাংশ হারে নগদ প্রণোদনা দিচ্ছে সরকার, নোটিশে সে কথা লিখে ঝুলিয়ে দেওয়া আছে। এমনকি ২ শতাংশ নগদ প্রণোদনা বুঝে নেওয়ার কথাও লেখা আছে। কর্মকর্তারাও নিয়ম মেনে সব ধরনের কাগজেই স্বাক্ষর নিয়েছেন, ২ শতাংশ নগদ প্রণোদনা বুঝে নিয়েছেন সে কাগজেও। তবে সমস্যা বাধে নগদ লেনদেনের সময়।
প্রবাসী আয় যতটা এসেছে, সমপরিমাণ টাকা ঠিকঠাক বুঝিয়ে দিলেও কর্মকর্তাটি গড়িমসি শুরু করেন প্রণোদনার অর্থ নিয়ে। সহকর্মী সেই অর্থ চাইলে ‘এটাও নেবেন’, ‘বেশি টাকা না তো’, ‘অনেকেই তো নেয় না’—এ জাতীয় কথাবার্তা বলা শুরু করেন।
প্রবাসী আয় যতটা এসেছে, সমপরিমাণ টাকা ঠিকঠাক বুঝিয়ে দিলেও কর্মকর্তাটি গড়িমসি শুরু করেন প্রণোদনার অর্থ নিয়ে। সহকর্মী সেই অর্থ চাইলে ‘এটাও নেবেন’, ‘বেশি টাকা না তো’, ‘অনেকেই তো নেয় না’—এ জাতীয় কথাবার্তা বলা শুরু করেন।
সরকারি ব্যাংকের সেবা নিয়ে এমনিতেই অভিযোগ আছে। সরকারি ব্যাংক, অর্থ সুরক্ষিত থাকবে—এই ভরসা ও নিশ্চয়তার কারণে দেশের বড় অংশ আমানতকারী সরকারি ব্যাংককে বেছে নেন। সহ্য করেন সেবার অপর্যাপ্ততা। অর্থ তোলা বা কোনো বিল দেওয়ার সময় খুচরা অর্থ না দেওয়ার অভিযোগ প্রায়ই শোনা যায়। এর সঙ্গে এখন জানা যাচ্ছে নতুন আরেকটি অভিযোগ।
প্রবাসী আয় উত্তোলন নিয়ে পুরোনো একটি ঘটনার কথা বলা যায় এখন। মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর হয়েছিলেন ১৯৯৮ সালে। প্রবাসীরা তার আগেও ব্যাংকের মাধ্যমে অর্থ পাঠাতেন। তবে সে সময় ব্যাংকের চেয়েও জনপ্রিয় ছিল হুন্ডি। দর যেমন ছিল বেশি, অর্থ আসত দ্রুত ও সহজ পথে। ব্যাংকের মাধ্যমে অর্থ পাঠালে দর পাওয়া যেত কিছু কম, আর পাওয়া যেত দেরিতে। একজন প্রবাসী দেশে অর্থ পাঠালে ব্যাংক কদিনের মধ্যে তা প্রাপকের কাছে পৌঁছে দেবে, তার কোনো সুনির্দিষ্ট সময়সীমা ছিল না। ফলে ব্যাংক খেয়ালখুশিমতো অর্থ পৌঁছানোর ব্যবস্থা করত।
২০১৯ সালে প্রবাসী আয়ে ২ শতাংশ হারে নগদ প্রণোদনা দেওয়া শুরু করেছে সরকার। এতে বেড়েছে প্রবাসী আয়। ২০১৯-২০ অর্থবছরে প্রবাসী আয়ে প্রবৃদ্ধি ছিল ১০ দশমিক ৮৭ শতাংশ। আর চলতি অর্থবছরে প্রথম তিন মাসের প্রবৃদ্ধি বিস্ময়কর, ৪৮ দশমিক ৫৪ শতাংশ।
গভর্নর হয়েই ড. ফরাসউদ্দিন প্রবাসী আয় কদিনে প্রাপকের হাতে দিতে হবে, সেই সময়সীমা বেঁধে দেন। তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের আনুষ্ঠানিক নির্দেশ পালনে বেশ কিছু ব্যাংক কর্মকর্তা ব্যর্থ হলে অত্যন্ত কঠোর ব্যবস্থা নিয়েছিলেন ড. ফরাসউদ্দিন। বিভিন্ন ব্যাংকের বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা চাকরি হারিয়েছিলেন। এই নিয়ে তখন ব্যাংক মহলে বেশ আলোচনা ও ক্ষোভ দেখা দিলেও সিদ্ধান্ত পরিবর্তন হয়নি। তৎকালীন গভর্নরের সেই ভূমিকার কারণে পরে আর কোনো ব্যাংক অর্থ পৌঁছে দিতে শিথিলতা দেখায়নি। তারপর থেকে হুন্ডি বন্ধ হয়ে গেছে, তা বলা যাবে না। কিন্তু ব্যাংকের মাধ্যমে রেমিট্যান্স বা প্রবাসী আয় আসা বেড়েছিল।
সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ২০১৯ সালে প্রবাসী আয়ে ২ শতাংশ হারে নগদ প্রণোদনা দেওয়া শুরু করেছে সরকার। এতে বেড়েছে প্রবাসী আয়। ২০১৯-২০ অর্থবছরে প্রবাসী আয়ে প্রবৃদ্ধি ছিল ১০ দশমিক ৮৭ শতাংশ। আর চলতি অর্থবছরে প্রথম তিন মাসের প্রবৃদ্ধি বিস্ময়কর, ৪৮ দশমিক ৫৪ শতাংশ। করোনার প্রাদুর্ভাবের মধ্যেও প্রবাসী আয়ের রেকর্ড বৃদ্ধি বৈদেশিক মুদ্রার মজুত যেমন বাড়িয়েছে, তেমনি আস্থাও বাড়িয়েছে।
সুতরাং যাঁরা প্রবাসী আয়ের অর্থ এখান থেকে গ্রহণ করছেন, তাঁদের হয়রানিমুক্তভাবে সেবা দেওয়াটা জরুরি। আর যাঁরা অর্থ নিচ্ছেন, তাঁদেরও দায়িত্ব অর্থ বুঝে নেওয়া। তা ছাড়া প্রবাসী আয়ে প্রণোদনার নীতিমালায় বাংলাদেশ ব্যাংক পরিষ্কারভাবেই বলে দিয়েছে, প্রবাসী আয়ে প্রণোদনা দিতে বিলম্ব বা হয়রানি করা হলে ব্যাংক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
দীর্ঘ বছর পরে সরকার প্রবাসী আয় ব্যাংকিং চ্যানেলে আনার জন্য আরেকটি বড়
বাংলাদেশের নীতিমালায় আর কী কী আছে, তা-ও জেনে নেওয়া যাক।
১। (ক) বিদেশ থেকে পাঠানো প্রবাসী বাংলাদেশিদের রেমিট্যান্সের ক্ষেত্রে রেমিট্যান্স আহরণকারী ব্যাংক প্রযোজ্য বিনিময় হারে টাকায় রূপান্তরিত অর্থ প্রচলিত বিধিবিধান পরিপালন করে উপকারভোগীর হিসাবে জমা বা উপকারভোগীকে দেওয়ার সময় অর্থের ওপর ২ শতাংশ হারে নগদ সহায়তা প্রদান করবে;
(খ) বাংলাদেশের ব্যাংকের সঙ্গে সম্পাদিত চুক্তির আওতায় পরিচালিত বিদেশি এক্সচেঞ্জ হাউস বা ব্যাংকের মাধ্যমে আলোচ্য অর্থ প্রত্যাবসিত হতে হবে;
(গ) একজন প্রবাসীর রেমিট্যান্সের ওপর প্রতিবারে সর্বোচ্চ মার্কিন ডলার ১ হাজার ৫০০ বা সমমূল্যের অর্থের জন্য ২ শতাংশ হারে কোনো প্রকার কাগজপত্র ব্যতিরেকে প্রণোদনা সুবিধা প্রযোজ্য হবে;
(ঘ) ১ হাজার ৫০০ ডলারের বেশি লেনদেনের জন্য প্রাপককে রেমিট্যান্স প্রেরকের বৈধ কাগজপত্র (যেমন: পাসপোর্টের কপি এবং বিদেশি নিয়োগদাতা কর্তৃক প্রদত্ত নিয়োগপত্রের কপি বা বিএমইটি প্রদত্ত সনদপত্রের কপি, ব্যবসায় নিয়োজিত ব্যক্তির ক্ষেত্রে ব্যবসার লাইসেন্সের কপি ইত্যাদি) ব্যাংক শাখায় দাখিল করলে নগদ সহায়তা দেওয়া যাবে;
২। বিধিবহির্ভূতভাবে প্রণোদনার অর্থ দিলে প্রদত্ত অর্থ বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে রক্ষিত সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের হিসাব বিকলন করে আদায় করা হবে। অনিয়মের সঙ্গে জড়িত ব্যাংক কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
৩। রেমিট্যান্স গ্রহণের দিন প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দাখিল করা সম্ভব না হলে পরের ১৫ কর্মদিবসের মধ্যে তা উপস্থাপন করলে ব্যাংক প্রাপ্য নগদ সহায়তা দেবে।