গ্রাম পর্যায়ে ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারে পেনশন নিবন্ধন শুরু

পেনশনপ্রতীকী ছবি

দেশের সব ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টার (ইউডিসি) কার্যকর নয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৪ বছর আগে যত ইউডিসির উদ্বোধন করেছিলেন, তার এক-তৃতীয়াংশ অকার্যকর। যেসব ইউডিসি কার্যকর রয়েছে, সেগুলোর মাধ্যমে সর্বজনীন পেনশন কর্মসূচিকে (স্কিম) তৃণমূল পর্যায়ে নিয়ে যেতে চাইছে সরকার। এ জন্য নতুন নির্দেশনা বা পরিপত্র জারি করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ।

নির্দেশনায় অর্থ বিভাগ বলেছে, সর্বজনীন পেনশন স্কিমে অংশগ্রহণের জন্য জনসাধারণকে আগ্রহী করে তুলতে হবে। আর জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেওয়া হবে নিবন্ধনসেবা। এ ক্ষেত্রে মূল কাজটি করবেন ইউডিসির উদ্যোক্তারা।

দেশে বর্তমানে ইউডিসির সংখ্যা প্রায় সাত হাজার। ট্রেড লাইসেন্স, চারিত্রিক সনদপত্র, ভূমিহীন সনদপত্র, ওয়ারিশান সনদপত্র, অবিবাহিত সনদপত্র, প্রত্যয়নপত্র, অসচ্ছল প্রত্যয়নপত্র, নাগরিক সনদপত্র, উত্তরাধিকার সনদপত্র ইত্যাদি সেবা দিয়ে থাকে ইউডিসিগুলো। নতুন করে এ তালিকায় যুক্ত হলো সর্বজনীন পেনশন স্কিমের নিবন্ধনসেবা।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং নিউজিল্যান্ডের সাবেক প্রধানমন্ত্রী হেলেন ক্লার্ক ২০১০ সালের ১১ নভেম্বর যৌথভাবে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ইউডিসির উদ্বোধন করেন। ভোলা জেলার চর কুকরি–মুকরি ইউনিয়ন থেকে শুরু হয় এ যাত্রা। প্রথম দিনই চালু করা হয় ৪ হাজার ৫০১টি ইউডিসি। এসব ইউডিসিতে নিয়োগ করা হয়েছে দুজন করে ব্যক্তি। তাঁদের একজন নারী ও একজন পুরুষ। তাঁদেরই বলা হয় উদ্যোক্তা। এসব সেন্টারে কম্পিউটারবিষয়ক বিভিন্ন ধরনের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থাও আছে। পেনশন কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে, দেশে বর্তমানে ১ হাজার ৮০০ ইউডিসি চালু আছে।

জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষের সদস্য মো. মুর্শীদুল হক খান প্রথম আলোকে বলেন, ‘সর্বজনীন পেনশন স্কিমকে দেশের সব শ্রেণির মানুষের কাছে নিয়ে যাওয়ার অংশ হিসেবে ইউডিসিগুলোকে কাজে লাগানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। আশা করছি এতে ভালো সাড়া পাওয়া যাবে।’

অর্থ বিভাগের নির্দেশনায় বলা হয়েছে, ইউডিসির উদ্যোক্তারা জনসাধারণকে সর্বজনীন পেনশন স্কিমে অন্তর্ভুক্ত করতে উদ্বুদ্ধ করার পাশাপাশি অনলাইন রেজিস্ট্রেশনের কাজে সহযোগিতা করবেন। রেজিস্ট্রেশন ফরম পূরণের সময় উদ্যোক্তারা আবশ্যিকভাবে নিজ নিজ উদ্যোক্তা কোড নম্বর উল্লেখ করবেন এবং আবেদনকারীর জন্য প্রযোজ্য পেনশন স্কিম সম্পর্কে নিশ্চিত হয়ে রেজিস্ট্রেশন ফরমটি পূরণ করবেন। এ ছাড়া উদ্যোক্তারা রেজিস্ট্রেশনের পর স্বয়ংক্রিয় (অটো জেনারেটেড) রেজিস্ট্রেশন কার্ডটি প্রিন্ট করে আবেদনকারীকে দেবেন এবং পেনশন আইডির বিপরীতে পাসওয়ার্ড তৈরির বিষয়ে ও পাসওয়ার্ডের গোপনীয়তা রক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেবেন। রেজিস্ট্রেশনের পর প্রতি মাসের কত তারিখে চাঁদার টাকা জমা করতে হবে, সে বিষয়েও পরামর্শ দেবেন তাঁরা।

নির্দেশনায় আরও বলা হয়েছে, উদ্যোক্তারা সর্বজনীন পেনশন স্কিমের চাঁদা দাতার কোনো তথ্য কোনোভাবেই অন্য কারও কাছে প্রকাশ বা হস্তান্তর করতে পারবেন না। প্রতিটি রেজিস্ট্রেশন সফলভাবে শেষ করার জন্য সংশ্লিষ্ট ইউডিসির উদ্যোক্তা মাশুল (ফি) পাবেন ১৫ টাকা। জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষের অনুকূলে বরাদ্দ করা সরকারি বাজেট থেকে তাঁদের এ টাকা দেওয়া হবে। রেজিস্ট্রেশনের সময় উদ্যোক্তা যে কোড নম্বর পাবেন, তার ভিত্তিতে জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষ ওই উদ্যোক্তার প্রাপ্য মাসিক ভিত্তিতে হিসাব করবে এবং মাস শেষে তা সংশ্লিষ্টদের ব্যাংক হিসাবে পাঠিয়ে দেওয়া হবে।

এ বিষয়ে গবেষণা সংস্থা সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের (সানেম) নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হান প্রথম আলোকে বলেন, ‘পেনশনকে তৃণমূল পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার উদ্যোগটি ইতিবাচক। এতে অনেক মানুষ পেনশনের আওতায় আসার সুযোগ পাবেন। তবে উদ্যোক্তারা যাতে এ কাজে আরও উৎসাহী হন, সে জন্য নিবন্ধনপ্রতি ১৫ টাকার বদলে তাঁদের আরও প্রণোদনা দিতে হবে। তার আগে দেশের সব ইউডিসিকে কার্যকর করাও জরুরি।’

প্রগতি, সমতা, প্রবাস ও সুরক্ষা—এই চার স্কিম নিয়ে সর্বজনীন পেনশন চালু হয় ২০২৩ সালের ১৭ আগস্ট। ১ জুলাই চালু করা হয় রাষ্ট্রায়ত্ত, স্বায়ত্তশাসিত ইত্যাদি সংস্থায় নতুন নিয়োগ পাওয়া চাকরিজীবীদের জন্য প্রত্যয় নামক একটি স্কিম। যদিও প্রত্যয়ের বিরোধিতা করে আন্দোলন করছেন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা। ২০২৫ সালের ১ জুলাই থেকে সরকারি কর্মচারীদের জন্য সেবক নামক নতুন আরেকটি কর্মসূচি চালুর কথা রয়েছে।