২০২২ সালের তৃতীয় প্রান্তিক পর্যন্ত দেশের স্টার্টআপ খাতে বিনিয়োগ এসেছে ৯ কোটি ৬৫ লাখ ডলার। এর বেশির ভাগই এসেছে প্রথম ছয় মাসে। কিন্তু দ্বিতীয় প্রান্তিকের চেয়ে তৃতীয় প্রান্তিকে বিনিয়োগ কমেছে ৯৩ শতাংশ। সারা বিশ্বেই স্টার্টআপে বিনিয়োগ কমেছে, যার প্রভাব বাংলাদেশেও পড়েছে।
দেশীয় পরামর্শক প্রতিষ্ঠান লাইটক্যাসল পার্টনার্স ৭ নভেম্বর তৃতীয় প্রান্তিকে বাংলাদেশের স্টার্টআপ ইকোসিস্টেম নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। সেখানে তারা দেশের স্টার্টআপ খাতে বিনিয়োগ পরিস্থিতি তুলে ধরেছে।
লাইটক্যাসলের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, করোনা মহামারি-পরবর্তী পরিস্থিতি, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধসহ বিশ্বে চলমান অর্থনৈতিক সংকটের প্রভাব পড়েছে স্টার্টআপের বিনিয়োগেও। চলতি বছর বিশ্বজুড়েই এ খাতে বিনিয়োগ কমছে। বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকের চেয়ে তৃতীয় প্রান্তিকে বিনিয়োগ কমার হার চোখে পড়ার মতো। বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকের তুলনায় তৃতীয় প্রান্তিকে স্টার্টআপে বিশ্বব্যাপী বিনিয়োগ কমেছে ৩৪ শতাংশ।
বাংলাদেশেও এর প্রভাব পড়েছে। বছরের তৃতীয় প্রান্তিকে বাংলাদেশে স্টার্টআপে বিনিয়োগ এসেছে ৪৯ লাখ ৯০ লাখ ডলার। এ বছর যত বিনিয়োগ এসেছে, তার মাত্র ৫ শতাংশ এসেছে তৃতীয় প্রান্তিকে।
বাংলাদেশে স্টার্টআপগুলোতে বিনিয়োগের পরিমাণ উল্লেখযোগ্য হারে বাড়ছিল। বিশেষ করে ২০২১ সালে সবচেয়ে বেশি বিনিয়োগ আসে ৪১ দশমিক ৫ কোটি ডলার। লাইটক্যাসলের গত জুলাই মাসের প্রতিবেদন অনুযায়ী, দেশে ১ হাজার ২০০-এর বেশি স্টার্টআপ কাজ করছে। গত এক দশকে ৮০ কোটি ডলারের বেশি বিনিয়োগ এসেছে এ খাতে, যার ৯৬ শতাংশই বিদেশি। তবে এ ধারায় হঠাৎ ছন্দপতন ঘটেছে ২০২২ সালের শেষ ভাগে। বৈশ্বিক উত্স থেকে বিনিয়োগের গতি কমে আসে। এ বছরের তৃতীয় প্রান্তিকে যত বিনিয়োগ এসেছে, তার মধ্যে দেশি ভেঞ্চার ক্যাপিটালগুলোর বিনিয়োগই বেশি, ৩১ শতাংশ। তৃতীয় প্রান্তিকে মোট ১৬টি চুক্তির মধ্যে ৯টিই করেছে সরকারি প্রতিষ্ঠান স্টার্টআপ বাংলাদেশ লিমিটেড।
উদ্যোক্তারা জানান, বাংলাদেশে সম্প্রতি আইএমএফের প্রতিনিধিদল ঘুরে গেছে। ৪৫০ কোটি ডলারের ঋণ দেওয়ার বিষয়ে সম্মত হয়েছে তারা। এতে অন্য বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশে বিনিয়োগ করার বিষয়ে আস্থা পাবেন বলে ধারণা করা যায়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, চলমান পরিস্থিতিতে দেশীয় স্টার্টআপগুলোতে ছোট বিনিয়োগ হচ্ছে। বৈশ্বিক বিনিয়োগের ঘাটতিতে দেশীয় অ্যাঞ্জেল ইনভেস্টররা (যেসব বিনিয়োগকারী কোনো স্টার্টআপে বিনিয়োগের বিনিময়ে অংশীদারত্ব পেয়ে থাকেন) এগিয়ে এসেছেন।
এ বছরের প্রথম প্রান্তিকে স্টার্টআপ খাতে বিনিয়োগ এসেছে ২ দশমিক ৩৪ কোটি ডলার, দ্বিতীয় প্রান্তিকে যা বেড়ে দাঁড়ায় ৬ দশমিক ৮১৩ কোটি ডলার। কিন্তু তৃতীয় প্রান্তিকে তা হঠাৎ করেই কমে দাঁড়ায় ৫০ লাখ ডলার। লাইটক্যাসলের প্রতিবেদন বলছে, দ্বিতীয় প্রান্তিক থেকে তৃতীয় প্রান্তিকে বিনিয়োগ কমেছে ৯৩ শতাংশ। বিনিয়োগের গড় আকার ৩ লাখ ১২ হাজার ডলারের মতো। এ সময়ে ১৫টি স্টার্টআপে মোট ১৬টি চুক্তি হয়, যার ১১টি ছিল দেশীয় বিনিয়োগ এবং পরিমাণ ৩৯ লাখ ডলার। বিদেশি বিনিয়োগ এসেছে মাত্র ১৯ লাখ ডলার। প্রথম ছয় মাসের চেয়ে তৃতীয় প্রান্তিকে বিদেশি বিনিয়োগ কমেছে ৫৯ শতাংশ।
দেশীয় বিনিয়োগকারীদের নেটওয়ার্ক বাংলাদেশ অ্যাঞ্জেলসের প্রধান নির্বাহী নির্ঝর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকটের ধাক্কা স্টার্টআপেও পড়েছে। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অবস্থানের কারণে তা আরও বেশি বোঝা যাচ্ছে। তবে তিনি বলেন, গত এক দশকে দেশের স্টার্টআপে যত বিনিয়োগ এসেছে, তার অর্ধেকের বেশি এসেছে ২০২১ সালে। সে জন্য তৃতীয় প্রান্তিকের বিনিয়োগের চিত্র বেশি মলিন দেখাচ্ছে।