মন্ত্রীর বাড়ির সামনে বৃষ্টির মধ্যে দাঁড়িয়ে ছিলাম, যেন চাকরি চাইতে গিয়েছি: বাণিজ্য উপদেষ্টা

বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন

বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন বলেছেন, বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে ব্যবসা-বাণিজ্য ও জ্বালানি খাতে দেশ নৈরাজ্যের চরম সীমায় পৌঁছেছিল। সে সময় ব্যবসায়ীদেরও কোনো মর্যাদা ছিল না। তবে এখন সে পরিস্থিতি বদলেছে।

আজ শনিবার রাজধানীর গুলশানের একটি হোটেলে আয়োজিত এক সেমিনারে এসব কথা জানান বাণিজ্য উপদেষ্টা। দেশের শিল্প খাতে জ্বালানি–সংকট সমাধানের পথ শীর্ষক এ সেমিনার আয়োজন করে বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজ (বিসিআই)।

সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন অন্তর্বর্তী সরকারের বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান এবং বিশেষ অতিথি ছিলেন শেখ বশিরউদ্দীন। এ ছাড়া বিভিন্ন শিল্প খাতের শীর্ষ ব্যবসায়ী নেতা ও প্রতিষ্ঠানের মালিকেরা উপস্থিত ছিলেন।

অনুষ্ঠানে শেখ বশিরউদ্দীন বিগত সরকারের সময়ে গ্যাস সংযোগ পাওয়া নিয়ে নিজের তিক্ত অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘সাবেক জ্বালানিমন্ত্রীর (প্রতিমন্ত্রীর) কাছে আমি গিয়েছিলাম। সে সময় ওনার বাসার সামনে বৃষ্টির মধ্যে দাঁড়িয়ে ছিলাম, যেন আমি কোনো চাকরি চাইতে গিয়েছি। এর কারণ, এত টাকা বিনিয়োগ করেছি (শিল্পপ্রতিষ্ঠান তৈরিতে), কিন্তু গ্যাস সংযোগ পাচ্ছিলাম না। তখন গ্যাস সংযোগ পাওয়া আমার কাছে মনে হতো ব্যাংকের নিবন্ধন পাওয়ার মতো।’

শেখ বশিরউদ্দীন বলেন, ‘যা হোক, বৃষ্টিতে ভিজে বাসার সামনে দাঁড়িয়ে থেকে প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করার সুযোগ হয়। এরপর ওনার সঙ্গে বসে অনেক লেকচার শুনেছি। কিন্তু সেসব কথা মানতে পারিনি; নিজের জ্ঞানের সঙ্গে মেলাতে পারিনি। তারপরও চেষ্টা করেছি শুনে যেতে। কারণ, কিছুই করার ছিল না। ব্যবসায়ী হিসেবে ন্যূনতম যে মর্যাদা প্রত্যাশা করি, তা তখন পাইনি।’

এ সময় ব্যবসায়ীদের উদ্দেশে বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন, ‘এখন আপনাদের যথাযথ মর্যাদার পরিবেশ রয়েছে। আপনারা এগিয়ে আসুন। সব কাজ সরকার একা করে দিতে পারবে না। নিজেদের টাকা নিজেদের জন্য নিজেরা ব্যয় করুন। অতীতে (প্রভাবশালীদের) এত টাকা দিয়েছি, তার হিসাবও করতে পারব না। এখন আর কাউকে তো টাকা দিতে হবে না। নিজেরাই নিজেদের কাজে ব্যবহার করতে পারবেন। এখন সুযোগ এসেছে, এ সুযোগ ব্যবহার করুন।’

‘কিছু মানুষের ব্রেন স্ক্যান করে দেখতে ইচ্ছা করে’

সাবেক আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে দেশ নৈরাজ্যের চরম সীমায় পৌঁছেছিল বলেও মন্তব্য করেন বাণিজ্য উপদেষ্টা। তিনি বলেন, ‘বিগত সময়ে এ দেশে এমন এক বিচারহীনতা, ক্রনিক্যাপিটালিস্ট (স্বজনতোষী) ও একপেশে পরিবেশের মধ্য দিয়ে আমরা গিয়েছিলাম, যেখানে আমাদের সন্তানদের নিরাপত্তা ছিল না।’

শেখ বশিরউদ্দীন আরও বলেন, ‘আমাদের মেপে কথা বলতে হয়েছে, অনিচ্ছা সত্ত্বেও নিজের মস্তিষ্ককে অসম্ভব চাপ দিয়ে (প্রভাবশালীদের) স্তুতি করতে হয়েছে। এমন সব ন্যারেটিভ (বর্ণনা) শুনতে হয়েছে এবং বিশ্বাস করতে হয়েছে, যা শোনার পরে নিজেকে আহত করতে ইচ্ছা হয়েছে। নিজের অর্জিত জ্ঞানকে অপ্রাসঙ্গিক মনে হয়েছে।’

জ্বালানি খাতকে দুর্নীতির অন্যতম জায়গা উল্লেখ করে বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে সম্পৃক্ত হওয়ার পরে কিছু আর্থিক অপরাধী সম্পর্কে জানতে পারছি। এসব জেনে আমার কিছু কিছু মানুষের ব্রেন স্ক্যান করে দেখতে ইচ্ছা করে যে এরা এতটা ক্রিমিনাল কী করে হতে পারে?’

শেখ বশিরউদ্দীন জানান, ‘জ্বালানি খাতের বর্তমানে যে দুর্বলতা রয়েছে তা কোনো দুর্ঘটনা নয়, এটি পরিকল্পনা (ডিজাইন) করে করা হয়েছে। তবে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের মধ্যে বাস্তবতাকে অস্বীকার করার প্রবণতা নেই। সুতরাং আমরা বিদ্যমান সমস্যার সম্ভাব্য সমাধানের দিকেও যেতে পারব বলে আশা করছি।’ এ জন্য ব্যবসায়ী মহলের সহযোগিতা চান তিনি।