২৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আয়োজন দেখতে ক্লিক করুন
মূল সাইট দেখতে ক্লিক করুন

টাইম সাময়িকীর সেরা ১০০ কোম্পানির তালিকায় কারা

বিশ্বের শীর্ষ কোম্পানিগুলোর ব্যবসায়িক এজেন্ডায় এআই বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দ্রুত স্থান করে নিচ্ছে। এবার সে প্রমাণই সামনে এসেছে। 

বৈশ্বিক ব্যবসা-বাণিজ্যের জগতে অনেক পরিবর্তন ঘটে যাচ্ছে। সম্প্রতি টাইম সাময়িকী ২০২৪ সালের শীর্ষ ১০০টি কোম্পানির যে তালিকা প্রকাশ করেছে, সেখানে পরিবর্তনের তথ্য উঠে এসেছে। বিশ্বখ্যাত এই সাময়িকীর ২০২৩ সালের তালিকায় যেসব কোম্পানি ছিল, সেগুলোর মধ্যে মাত্র সাতটি এবারের তালিকায় স্থান পেয়েছে। 

টাইম সাময়িকীর যে সংখ্যায় ১০০টি কোম্পানির তালিকা প্রকাশিত হয়েছে, সেটির প্রচ্ছদে এআই বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাবিষয়ক স্টার্টআপ অ্যানথ্রোপিকের সহপ্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী দারিও আমোদেইয়ের ছবি ছাপা হয়েছে। টাইম সাময়িকী বলছে, এ ঘটনায় বোঝা যায়, বিশ্বের শীর্ষ কোম্পানিগুলোর ব্যবসায়িক এজেন্ডায় এআই বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দ্রুত স্থান করে নিচ্ছে। এবার সে প্রমাণই সামনে এসেছে। এমনকি যেসব কোম্পানি এআইয়ের উন্নয়নের সঙ্গে কোনোভাবে জড়িত নয়, তাদের ব্যবসায়িক এজেন্ডায়ও এআই দ্রুত স্থান করে নিচ্ছে। 

অ্যানথ্রোপিকের বাজারমূল্য এখন ১৫ বিলিয়ন বা ১ হাজার ৫০০ কোটি মার্কিন ডলার। কোম্পানিটির উল্কার গতিতে উত্থান দেখে বোঝা যায়, কোন খাত কতটা দ্রুত প্রভাবশালী হতে পারে।

আমোদেই ও তাঁর সহকর্মীরা একই সঙ্গে এআই প্রযুক্তির স্রষ্টা ও প্রযুক্তিটি সম্পর্কে সতর্ক। এই প্রযুক্তির উন্নয়ন ও ব্যবহার নিয়ে পৃথিবীতে যাঁরা সবচেয়ে বেশি সতর্ক অবস্থান নিয়েছেন, তাঁদের মধ্যে আমোদেই শীর্ষস্থানীয় একজন। টাইম সাময়িকীকে আমোদেই বলেন, ‘আমরা এ কথা বলার চেষ্টা করছি না যে আমরা ভালো লোক, আর অন্যরা খারাপ লোক।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা এই ইকোসিস্টেমকে এমন দিকে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছি, যেখানে সবাই ভালো লোক হতে পারেন।’ 

টাইম সাময়িকীর এই সংখ্যায় একাধিক প্রচ্ছদ করা হয়েছে। আরেকটি প্রচ্ছদে যে কোম্পানি ও তার স্বত্বাধিকারী স্থান পেয়েছেন, সেটির ব্যবসাও তুলনামূলকভাবে নতুন। ২০২০ সালে মার্কিন অভিনেত্রী ও গায়িকা সেলেনা গোমেজ রেয়ার বিউটি নামে একটি প্রসাধনী কোম্পানি গঠন করেন। সেই কোম্পানি এখন ফুলেফেঁপে উঠেছে; যেটির বাজারমূল্য নির্ধারিত হয়েছে ২ বিলিয়ন বা ২০০ কোটি ডলার। বাজারে গুজব আছে, এই কোম্পানি একীভূত হয়ে যেতে পারে। কিন্তু সেলেনা গোমেজ বরাবরই এই গুজবের কথা অস্বীকার করেছেন। টাইম সাময়িকীকে তিনি বলেন, ‘প্রকৃত অর্থেই, এ বিষয়ে কোনো পরিকল্পনা আমার নেই।’ 

টাইম সাময়িকীর সংবাদে বলা হয়েছে, সেলেনা গোমেজের এই উত্থান দেখে বোঝা যায়, মানুষের ইচ্ছাশক্তি ও অনুসারী থাকলে কী হতে পারে। এই দুই শক্তিতে বলীয়ান গোমেজ তাঁর ব্যবসার গতিপ্রকৃতি বদলে দিয়েছেন। গোমেজ সৌন্দর্যের চেয়ে মানুষের সন্তুষ্টিতে বেশি বিশ্বাস করেন। রেয়ার বিউটি লাখ লাখ ডলার তহবিল সংগ্রহ করে মানসিক স্বাস্থ্যবিষয়ক কর্মসূচিতে অর্থায়ন করছে। 

টাইম সাময়িকী এই তালিকা প্রণয়নের মানদণ্ড হিসেবে ব্যবসায়িক সফলতাকে গুরুত্ব দেয়নি। তালিকা তৈরিতে টাইম সাময়িকীর সম্পাদকেরা বিভিন্ন খাতের কাছ থেকে এবং সাময়িকীর প্রদায়ক (কন্ট্রিবিউটর) ও সংবাদদাতাদের কাছ থেকে পরামর্শ চেয়ে পাঠায়। অর্থাৎ কেবল একটি আর্থিক সূচকের ভিত্তিতে তালিকাটি প্রণয়ন করা হয়নি; বরং বিভিন্ন গুণ ও বৈশিষ্ট্যের ভিত্তিতে এ তালিকা করা হয়েছে। কোম্পানির প্রভাব, উদ্ভাবন, উচ্চাকাঙ্ক্ষা ও সফলতা—এসব বিষয় কীভাবে প্রতিফলিত হচ্ছে, তার ভিত্তিতে করা হয় তালিকাটি। 

টাইম সাময়িকী আরও বলেছে, আগের সব তালিকার মতো এবারের তালিকায়ও ধরে নেওয়া হয়েছে, প্রভাব যেমন ইতিবাচক হতে পারে, তেমনি নেতিবাচকও হতে পারে। 

এ তালিকা নিছক ব্যবসায়িক সফলতার ভিত্তিতে করা হয়নি, তা আগেই বলা হয়েছে। চলতি ২০২৪ সালে ব্যবসা-বাণিজ্যে কার বা কিসের প্রভাব চলছে, তার একটি চিত্রই উঠে আসে এ তালিকায়। কোনো খাতে যখন নেতৃত্বের সংকট চলে তখন অনেকেই করপোরেট নেতৃত্বের দিকে তাকিয়ে থাকেন, তাঁরা কোনো দিশা দিতে পারেন কি না সে আশায়। ওয়ার্ল্ড সেন্ট্রাল কিচেনের হোসে আন্দ্রেস, ডব্লিউএনবিএর ক্যাথি অ্যাঞ্জেলবার্ট ও এনভিডিয়ার হেনসেন হুয়াংয়ের মতো নেতারা দেখিয়েছেন, কোম্পানি বা করপোরেট প্রতিষ্ঠান কীভাবে মানবতার ভবিষ্যতের জন্য উৎসাহ ও উদ্ভাবনী মডেল নিয়ে আসতে পারে। 

কারা স্থান পেল

টাইম সাময়িকী মোট পাঁচটি ক্যাটাগরি বা শ্রেণিতে এই তালিকা তৈরি করে পুরস্কার দিয়েছে। শ্রেণিগুলো হলো লিডার্স, ডিজরাপ্টার্স, ইনোভেটর্স, টাইটানস ও পাইওনিয়ার্স। এবার দেখে নেওয়া যাক, কোন শ্রেণিতে কোন কোন কোম্পানি এ তালিকায় স্থান পেল। 

লিডার্স শ্রেণিতে সেলেনা গোমেজের রেয়ার বিউটিসহ আছে রাপি, পিন্টারেস্ট, টয়োটা, ট্যাপেস্ট্রি, রেডিট, বিএমডব্লিউ, নিয়ারা, টি মোবাইল, ব্ল্যাকরক, বাইডু, ইউনাইটেড এয়ারলাইনস, ওয়াটারশেড, থাইসেনক্রুপ নুসেরা, অ্যাফেক্স, টি মোবাইল ইউএস, এম্বার টেকনোলজিস, ইন্টার মিয়ামি সিএফ, ব্লান্ডস্টোন, নিপ্পন স্টিল ও ডানকো ল্যাবরেটরিস।   

ডিজরাপ্টার্স শ্রেণিতে স্থান পেয়েছে শাওমি, অ্যাথলেটিক ব্রিউইং কোম্পানি, বুমিত্রা, স্ট্যানলি, ফ্রিদা, কোরউইভ, ওলিপপ, ক্লাইমওয়ার্কস, লুডো স্টুডিও, সোল ডে জ্যানেরিও, পিডিডি হোল্ডিংস, ভিনফাস্ট, এয়ারবিএনবি, ফার্মবক্সআরএক্স, গুডরেক্স, ওয়াইমো, পালানতির, ডাইসন, ডিপপ ইত্যাদি। 

ইনোভেটর্স শ্রেণিতে স্থান পেয়েছে ইনসাইড অ্যানথ্রোপিক, টোরি বার্চ, গুয়ারদান্ত হেলথ, হাইরক্স, ট্রানসিয়ন, গুগল, সেইলড্রোন, এএমডি, বোস্টন মেটাল, ল্যামডা ডেভেলপমেন্ট, বানজা, সেরেব্রাস সিস্টেমস, রেডউড ম্যাটেরিয়ালস, স্কোপেলি, হুয়াওয়ে, বার্ন ম্যানুফ্যাকচারিং, ইউবিকো, ইজেনেসিস, ক্রেজি ম্যাপল স্টুডিও, মিস্ট্রাল এআই।

টাইটানস শ্রেণিতে আছে ইন্টেল, জ্যাজঅয়ার্স, অ্যামাজন, সৌদি আরামকো, এয়ারবাস, নুব্যাংক, এনভিশন এনার্জি, এলি লিলি, বিওয়াইডি, টিকটক, মাইক্রোসফট, স্পাইরো, ইউপিএস, ডিজনি, ব্যাংক অব আমেরিকা, টাটা গ্রুপ, ফাইজার, রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজ, হাওয়াহা গ্রুপ ও এনভিডিয়া। 

পাইওনিয়ার্স শ্রেণিতে স্থান পেয়েছে সেরাম ইনস্টিটিউট, হাইল্যান্ড ইলেকট্রিক ফ্লিটস, ওপেকএআই, ইনটুইটিভ মেশিনস, ফুপ ফর এডুকেশন, এপিক গেমস, পোয়িন, টুমরো ডট আইও, ভারটেক্স ফার্মাসিউটিক্যালস, দ্য গুড চারকোল কোম্পানি, ট্রান্সক্রিপ্টা বায়ো, ওভারটাইম, এম-কোপা, এইসাই, প্রোজিনি, ব্রাইটলাইন, লাঞ্জা জেট, ফ্লাটার এন্টারটেইনমেন্ট, টেন্ট পার্টনারশিপ ফর রিফিউজিস, ওয়ার্ল্ড সেন্ট্রাল কিচেন।