ভর্তুকি মূল্যে টিসিবির পণ্য
পরিমাণে বেশি পণ্য চান ভোক্তারা
গতকাল রাজধানীর শ্যামলীতে আগস্ট মাসের বিক্রয় কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। এ সময় তিনি ভোক্তাদের সাশ্রয়ী হওয়ার কথা বলেন।
ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) কাছ থেকে কম দামের পণ্য কিনতে গতকাল মঙ্গলবার সকাল ১০টায় শ্যামলীর বাবর রোডে এক পরিবেশকের দোকানে আসেন গৃহবধূ রিনা আক্তার। তিনি পাঁচ সদস্যের পরিবার নিয়ে থাকেন রাজধানীর মোহাম্মদপুরের বিহারি ক্যাম্প এলাকায়। প্রায় আধা ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে তিনি দুই লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল, দুই কেজি মসুর ডাল, এক কেজি চিনি ও দুই কেজি পেঁয়াজ কিনেছেন। পণ্য নিয়ে ফেরার পথে কথা হয় রিনা আক্তারের সঙ্গে। তিনি জানালেন, যা পণ্য পেয়েছেন, তা দিয়ে অর্ধেক মাস চলবে। এরপর আবার বাজার থেকে বেশি দামে পণ্য কিনতে হবে।
শ্যামলীতেই কথা হয় টিসিবির পণ্য কিনতে আসা নিম্ন আয়ের আরও চারজনের সঙ্গে। তাঁরাও জানালেন, টিসিবির কাছ থেকে কম দামে পণ্য কিনতে পেরে তাঁদের কিছু উপকার হয়েছে, এটা সত্য। কিন্তু টিসিবি যে পরিমাণ পণ্য দেয়, তাতে মাস চলে না। এ জন্য তাঁরা ভর্তুকি মূল্যে আরেকটু বেশি পরিমাণে পণ্য দেওয়ার দাবি জানান।
বাবর রোড থেকে এই প্রতিবেদক টিসিবির পরিবেশকের খোঁজে যান মোহাম্মদপুরের বায়তুল সালাহ মসজিদ এলাকায়। তখন সকাল পৌনে ১১টা। সেখানে গিয়ে দেখা যায়, এক পরিবেশকের দোকানের সামনে লাইনে দাঁড়িয়ে শতাধিক ক্রেতা। তাঁদের কয়েকজনের সঙ্গে কথা হয় এ প্রতিবেদকের। তাঁরাও দাবি করেন, টিসিবির দেওয়া পণ্যের পরিমাণ বাড়ানোর। যাতে কয়েক সদস্যের পরিবারের মাস চলে যায়। তাহলে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির এ সময়ে বাজার খরচে কিছুটা সাশ্রয় হতো।
পণ্য কিনতে মোহাম্মদপুর বায়তুল সালাহ মসজিদ এলাকায় আসা রিকশাচালক লোকমান হোসেন জানান, তাঁর বাসায় চিনির ব্যবহার কম। এ জন্য এক কেজি চিনিতে মাস পার হয়ে যায়। কিন্তু অন্য পণ্যে অর্ধেক মাসও যায় না।
শ্যামলী, মোহাম্মদপুরসহ রাজধানীর মিরপুর, তেজগাঁও এলাকার বিভিন্ন পরিবেশকের কাছ থেকে টিসিবি পণ্য কিনতে আসা ভোক্তারা একই দাবি জানান। আবার কেউ কেউ তেল, ডাল, চিনি ও পেঁয়াজের পাশাপাশি টিসিবির পণ্য তালিকায় চালও অন্তর্ভুক্ত করার দাবি জানিয়েছেন।
এদিকে নিম্ন আয়ের মানুষকে বাজারমূল্যের চেয়ে কম দামে পণ্য দিতে গত মার্চে ‘পরিবার কার্ড’ চালু করে টিসিবি। একজন কার্ডধারী একটি কার্ডের বিপরীতে প্রতি মাসে সর্বোচ্চ দুই লিটার সয়াবিন তেল, দুই কেজি মসুর ডাল, এক কেজি চিনি ও দুই কেজি পেঁয়াজ কিনতে পারেন। প্রতি লিটার সয়াবিন তেল ১১০ টাকা, চিনি ৫৫, মসুর ডাল ৬৫ ও পেঁয়াজ ২০ টাকায় বিক্রি হয়। তাতে এ প্যাকেজ কিনতে একজন ক্রেতার খরচ হয় ৪৪৫ টাকা।
গতকাল রাজধানীসহ সারা দেশে আগস্ট মাসের জন্য ভর্তুকি মূল্যে পণ্য বিক্রির কার্যক্রম শুরু করেছে টিসিবি। রাজধানীর শ্যামলী এলাকার বাবর রোডে এই কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকেরা বাণিজ্যমন্ত্রীর কাছে জানতে চান, পণ্যের পরিমাণ বাড়ানো হবে কি না। জবাবে টিপু মুনশি বলেন, ‘দেশের নিম্ন আয়ের মানুষের কষ্ট দূর করতে সাশ্রয়ী মূল্যে এসব পণ্য বিক্রি করা হচ্ছে। এতে হয়তো একটা ফ্যামিলির পুরো মাস চলতে কষ্ট হবে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী আমাদের সাশ্রয়ী হতে বলেছেন। আমারও মনে হয়, সাশ্রয়ী হলে এই পণ্য দিয়েই মাস চালানো সম্ভব।’ একই সঙ্গে টিসিবির পরিবার কার্ড ও পণ্য বিতরণে কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ বা অনিয়ম পাওয়া গেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী।