এফবিসিসিআই সভাপতিসহ পর্ষদের পদত্যাগের দাবিতে অবস্থান কর্মসূচি সদস্যদের একাংশের
ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি মাহবুবুল আলমসহ পরিচালনা পর্ষদের পদত্যাগের দাবিতে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে ফেডারেশনের সদস্যদের একাংশ। তাঁরা বলেছেন, সবার পদত্যাগের পর অন্তর্বর্তী প্রশাসক নিয়োগ করতে হবে। এরপর প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষে ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিতদের কাছে নেতৃত্ব হস্তান্তর করতে হবে।
‘এফবিসিসিআইয়ের সাধারণ পরিষদের সদস্যবৃন্দ’ ব্যানারে রাজধানীর মতিঝিলে ফেডারেশন ভবনের সামনে আজ বুধবার বেলা ১১টায় অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন এই ব্যবসায়ীরা। এতে স্বাগত বক্তব্য দেন এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সহসভাপতি ও সাধারণ পরিষদের সমন্বয়কারী আবুল কাশেম হায়দার।
আবুল কাশেম হায়দার বলেন, ‘সভাপতি মাহবুবুল আলম ও পর্ষদের বাকি সদস্যদের অবিলম্বে পদত্যাগ করতে হবে। তারপর সরকারকে অন্তর্বর্তী প্রশাসক নিয়োগ দিতে হবে। প্রয়োজনীয় সংস্কার করে নির্বাচন দেবেন প্রশাসক।’ বর্তমান পরিচালনা পর্ষদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘সম্মান ও ইজ্জত থাকতে পদত্যাগ করুন।’
আবুল কাশেম হায়দার আরও বলেন, ইতিমধ্যে একধরনের দালাল চক্র সৃষ্টি হয়েছে, যারা সভাপতিসহ অন্যদের পদে বহাল রাখতে চেষ্টা করছে। এ বিষয়ে সাধারণ ব্যবসায়ীদের সতর্ক থাকার আহ্বান জানান তিনি।
বাংলাদেশ সোলার অ্যান্ড রিনিউয়েবল এনার্জি অ্যাসোসিয়েশনের সহসভাপতি মোস্তফা আল মাহমুদ বলেন, ‘এফবিসিসিআই পর্ষদে আমরা আর কোনো অনির্বাচিত পরিচালক চাই না। বর্তমান পর্ষদের পদত্যাগের পর সংস্কার করে ব্যবসায়ীবান্ধব এফবিসিসিআই গঠন করতে হবে।’
আলী আফজাল নামের এক ব্যবসায়ী বলেন, ‘গত ২২ জুলাই গণভবনে ব্যবসায়ী নেতারা বলেন তৎকালীন সরকারের সঙ্গে থাকবেন। ব্যবসায়ীদের কেউ কেউ সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে আমৃত্যু থাকার কথাও বলেন। আপনাদের নেত্রী দেশ ছেড়ে চলে গেছেন। এখন পদত্যাগ করে আপনারাও (এফবিসিসিআইয়ের পর্ষদ সদস্য) নেত্রীর কাছে চলে যান।’ তিনি অভিযোগ করে বলেন, শেখ হাসিনার সরকার নিজেদের ব্যক্তিস্বার্থে ব্যবসা-বাণিজ্যে সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছিল। এখন এমন একটি এফবিসিসিআই গড়ে তুলতে হবে, যেটি কোনো ব্যক্তি বা দলের লেজুড়বৃত্তি না করে সাধারণ ব্যবসায়ীদের স্বার্থে কাজ করবে।
বাংলাদেশ ইলেকট্রিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সহসভাপতি হারুনুর রশীদ বলেন, শোষণের হাতিয়ার হিসেবে এফবিসিসিআইকে ব্যবহার করেছে সাবেক আওয়ামী লীগ সরকার। এমনভাবে ফেডারেশনকে নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে, যাতে করে সাধারণ সদস্যরা কথা বলতে না পারেন।
মতিঝিলে আজ যাঁরা অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন, তাঁরা গত ২১ আগস্ট এফবিসিসিআইয়ের বর্তমান পর্ষদের সভাপতি, সহসভাপতি ও পরিচালকদের ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে পদত্যাগের দাবিতে মানববন্ধন করেছিলেন। সেই কর্মসূচির পালনের ১৩ দিন পর আবারও আন্দোলনে নামলেন এই ব্যবসায়ীরা।
রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পরপরই এফবিসিসিআইয়ের পর্ষদের কয়েকজন সদস্যসহ সাধারণ সদস্যদের একাংশ ফেডারেশনের নেতৃত্ব বদলে তৎপর হয়ে ওঠেন। তাঁদের সঙ্গে এফবিসিসিআইয়ের বিএনপিপন্থী সাবেক নেতারাও আছেন।
এফবিসিসিআইয়ের বর্তমান পরিচালনা পর্ষদ বাতিল করে প্রশাসক নিয়োগ করার দাবি জানিয়ে গত মাসে অর্থ ও বাণিজ্য উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদকে চিঠি দেন আবুল কাসেম হায়দারসহ বেশ কয়েকজন ব্যবসায়ী।
ওই চিঠিতে বলা হয়, গত ১৫ বছরে এফবিসিসিআইয়ের কার্যক্রম ব্যবসা, শিল্প–বাণিজ্য ও সেবা খাতের স্বার্থে পরিচালিত হয়নি। বরং অনির্বাচিত, একদলীয় স্বৈরাচারী সরকারের তোষামোদি, ব্যক্তিগত স্বার্থ হাসিলসহ রাজনৈতিক এজেন্ডা বাস্তবায়নে তৎপর ছিল। রাজনৈতিক মদদপুষ্ট কিছু অসাধু, অব্যবসায়ী পর্ষদের নেতৃত্বে এসে এফবিসিসিআই অফিসকে দলীয় কার্যালয়ে পরিণত করেছে। বিভিন্ন বাজার সিন্ডিকেটের মাধ্যমে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের মূল্য অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি করে তারা দেশের সাধারণ মানুষের জীবন দুর্বিষহ করে তুলেছিল।