বড় সমন্বয়ের দিনে বেড়েছে ঢাকার বাজারের সূচক

শেয়ারবাজারগ্রাফিকস: প্রথম আলো

দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্সের বড় সমন্বয়ের দিনে বেড়েছে সূচকটি। আজ রোববার থেকে এই সূচক গণনায় নতুন করে ৭৩টি কোম্পানি যুক্ত হয়। এতে ডিএসইএক্স সূচক গণনায় কোম্পানির সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ৩২৬। গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত এই সূচক গণনায় অন্তর্ভুক্ত কোম্পানির সংখ্যা ছিল ২৫৩।

নতুন করে সূচক গণনায় ৭৩টি কোম্পানি বাড়লেও তার নেতিবাচক কোনো প্রভাব বাজারে দেখা যায়নি। এদিন ডিএসইএক্স সূচকটি ১১ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ১৪৫ পয়েন্টে। ডিএসইএক্সে নতুন কোম্পানি যুক্ত হওয়ার পর সূচকটির ওপর কী ধরনের প্রভাব পড়ে, তা নিয়ে বিনিয়োগকারী থেকে শুরু করে বাজারসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের মধ্যে ছিল ব্যাপক কৌতূহল। এ কৌতূহলের বড় কারণ ছিল শেয়ারবাজারে বেশ কিছুদিন ধরে মন্দাভাব চলছে। তারল্যসংকটও রয়েছে বাজারে। এ অবস্থায় প্রায় পৌনে ১০০ কোম্পানির সূচকে অন্তর্ভুক্তি বিনিয়োগকারীদের মধ্যে কিছুটা দুশ্চিন্তা তৈরি করেছিল।

বাজারসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, ফ্লোর প্রাইস বা সর্বনিম্ন মূল্যস্তরের কারণে বেশ কিছু ভালো কোম্পানি গত বছর সূচক থেকে বাদ পড়েছিল। সেসব কোম্পানি আবার সূচকে ফিরে এসেছে। আর ফ্লোর প্রাইস উঠে যাওয়ার পর ভালো মৌল ভিত্তির অনেক শেয়ারের দরপতন হয়েছে। তাতে অনেক শেয়ারের বাজারমূল্য যৌক্তিক দামের নিচে নেমে গেছে। এ অবস্থায় এসব শেয়ারের খুব বেশি দরপতনের শঙ্কা কম।

ডিএসইর তথ্য অনুযায়ী,আজ ডিএসইএক্স সূচকে নতুন অন্তর্ভুক্ত হওয়া কোম্পানিগুলোর বেশির ভাগেরই দরপতন হয়েছে। তা সত্ত্বেও সূচক বেড়েছে। কারণ হিসেবে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, সূচকে যেসব কোম্পানির শেয়ারের দামের উত্থান–পতনের প্রভাব বেশি, সেগুলোর মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে। এ কারণে নতুন যুক্ত হওয়া কোম্পানিগুলোর বেশির ভাগের দরপতনের পরও সূচক বেড়েছে। সূচক গণনার বিদ্যমান নিয়ম অনুযায়ী, লেনদেনযোগ্য শেয়ারের ভিত্তিতে যে কোম্পানির বাজার মূলধন যত বেশি, সে কোম্পানির শেয়ারের দামের উত্থান–পতনের প্রভাবও সূচকে তত বেশি।

শেয়ারবাজারের শীর্ষস্থানীয় ব্রোকারেজ হাউস লংকাবাংলা সিকিউরিটিজের তথ্য অনুযায়ী, ঢাকার বাজারে আজ সূচকের উত্থানে যেসব কোম্পানির সবচেয়ে বেশি ভূমিকা ছিল, সেগুলো হলো কোহিনূর কেমিক্যাল, ইউনাইটেড পাওয়ার, পূবালী ব্যাংক, এডিএন টেলিকম, খান ব্রাদার্স পিপি ওভেন ব্যাগ। এই পাঁচ কোম্পানির শেয়ারের মূল্যবৃদ্ধিতে ডিএসইএক্স সূচকটি ৯ পয়েন্ট বেড়েছে।

এসব কোম্পানির মধ্যে শুধু ইউনাইটেড পাওয়ার আজ থেকে সূচক গণনায় নতুন করে অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল। বাকিগুলো আগে থেকেই এই সূচকভুক্ত ছিল।

এ ছাড়া রোববার বাজারে সূচকের পতনে যেসব কোম্পানির দরপতনের প্রভাব বেশি ছিল, সেগুলো হলো পাওয়ার গ্রিড, ইসলামী ব্যাংক, মিডল্যান্ড ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংক ও ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো।

এদিকে সূচক বাড়লেও লেনদেনের খুব বেশি উন্নতি হয়নি এদিন। ডিএসইতে দিন শেষে লেনদেনের পরিমাণ ছিল ৩৬৮ কোটি টাকা, যা আগের দিনের চেয়ে ৪ কোটি টাকা বেশি। বাজারসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, শেয়ারবাজারে এখন প্রাতিষ্ঠানিক ও ব্যক্তিশ্রেণির বড় বিনিয়োগকারীদের একটি বড় অংশ নিষ্ক্রিয় রয়েছেন। এ কারণে বাজারে লেনদেনে গতি ফিরছে না। যেসব কোম্পানির শেয়ারের দাম বেড়েছে, সেগুলোর অল্প কিছু শেয়ার লেনদেনের মাধ্যমে দাম বেড়েছে। ফলে সূচকে তার বড় ধরনের কোনো প্রভাব পড়েনি।

বাজারসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, সূচকের প্রভাব যা হোক না কেন, বাজারে অধিকাংশ কোম্পানি সূচক গণনায় অন্তর্ভুক্ত হওয়াটা বাজারের জন্য ভালো। কারণ, সূচকের মাধ্যমে বাজারের সার্বিক অবস্থার একটি চিত্র ফুটে উঠবে। আজ থেকে ডিএসইএক্স সূচক গণনায় তালিকাভুক্ত প্রায় ৯১ শতাংশ কোম্পানির শেয়ারের দামের উত্থান-পতনের প্রতিফলন রয়েছে। অথচ গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ডিএসইএক্স সূচকে তালিকাভুক্ত ৭০ শতাংশ কোম্পানির শেয়ারের দামের উত্থান-পতনের প্রতিফলন দেখা যেত।