শেয়ারবাজারে লেনদেন কমেছে ৩৭%, সূচকেরও বড় পতন

শেয়ারবাজারপ্রতীকী ছবি

দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) এক সপ্তাহের ব্যবধানে ব্যাংক খাতের দৈনিক গড় লেনদেন ৩২ শতাংশ কমে গেছে। একইভাবে ওষুধ খাতের কোম্পানিগুলোর দৈনিক গড় লেনদেন কমেছে প্রায় সাড়ে ৩৭ শতাংশ। অথচ শেয়ারবাজারের লেনদেনে এই দুই খাতের আধিপত্য সবচেয়ে বেশি। তাই খাত দুটির লেনদেন কমে যাওয়ায় বাজারের সার্বিক লেনদেনও কমে গেছে।

ডিএসইতে গত সপ্তাহ শেষে দৈনিক লেনদেন কমে নেমে এসেছে ৪২৬ কোটি টাকায়। আগের সপ্তাহে যার পরিমাণ ছিল ৬৭৯ কোটি টাকা। সেই হিসাবে এক সপ্তাহের ব্যবধানে ঢাকার বাজারে দৈনিক গড় লেনদেন কমেছে ২৫৩ কোটি টাকা বা সোয়া ৩৭ শতাংশ। ডিএসইর সাপ্তাহিক বাজার পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে এই তথ্য পাওয়া গেছে।

ডিএসইর তথ্য অনুযায়ী, ঢাকার বাজারে গত সপ্তাহ শেষে ব্যাংক খাতের দৈনিক গড় লেনদেন কমে নেমে এসেছে ১২২ কোটি টাকায়। আগের সপ্তাহে যার পরিমাণ ছিল ১৭৯ কোটি টাকা। সেই হিসাবে এক সপ্তাহের ব্যবধানে ব্যাংক খাতের দৈনিক গড় লেনদেন কমেছে ৫৭ কোটি টাকা বা প্রায় ৩২ শতাংশ। একইভাবে ওষুধ খাতের কোম্পানিগুলোর দৈনিক গড় লেনদেন গত সপ্তাহে কমে দাঁড়িয়েছে ৬১ কোটি টাকায়। আগের সপ্তাহে যার পরিমাণ ছিল প্রায় ৯৮ কোটি টাকা। সেই হিসাবে এক সপ্তাহের ব্যবধানে ওষুধ খাতের কোম্পানিগুলোর দৈনিক গড় লেনদেন কমেছে ৩৭ কোটি টাকা বা প্রায় সাড়ে ৩৭ শতাংশ।

বাজারসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, গত সপ্তাহজুড়ে বাজারে ছিল মন্দাভাব। এর প্রধান কারণ পুনর্গঠিত পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) বাজারের বিভিন্ন সংস্কার উদ্যোগের পাশাপাশি কারসাজিকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া শুরু করেছে। বেশ কিছু কোম্পানির শেয়ার নিয়ে কারসাজির ঘটনায় এরই মধ্যে কারসাজিকারীদের বড় অঙ্কের জরিমানাও করা হয়েছে। ফলে কারসাজিকারীদের বড় একটি অংশের মধ্যে এখন কিছুটা ভীতির সঞ্চার হয়েছে। তাই অনেকে এখন বাজারে নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছেন। আবার ব্যাংক খাতে তারল্যসংকট থাকায় প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগও কমে গেছে। এসব কারণে শেয়ারবাজারে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে।

জানতে চাইলে বেসরকারি ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল বিশ্ববিদ্যালয়ের বাণিজ্য অনুষদের ডিন মোহাম্মদ মুসা প্রথম আলোকে বলেন, শেয়ারবাজারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আস্থা অনেক আগেই নষ্ট হয়ে গেছে। সেই আস্থা এখনো ফেরানো যায়নি। এ অবস্থায় রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর বিএসইসি পুনর্গঠিত হলেও তাদের পক্ষ থেকেও বিনিয়োগকারীদের আশ্বস্ত করার মতো কোনো বার্তা দেওয়া হয়নি। অন্যদিকে ব্যাংকে টাকা রেখে এখন ১২ শতাংশের বেশি সুদ পাওয়া যাচ্ছে; কিন্তু শেয়ারবাজারে মুনাফা নিয়ে বিনিয়োগকারীরা সংশয়ে আছেন। এমন এক পরিস্থিতিতে বিনিয়োগকারীদের অনেকে শেয়ার বিক্রি করে দিচ্ছেন। তাতে বাজারে ক্রেতার চেয়ে বিক্রির চাপ বেশি। ফলে লেনদেন ও শেয়ারের দাম উভয়ই কমছে।

ডিএসইর তথ্য অনুযায়ী, ঢাকার বাজারের প্রধান সূচক ডিএসইএক্স গত সপ্তাহে ১৭৭ পয়েন্ট বা ৩ শতাংশের বেশি কমে আবারও সাড়ে ৫ হাজার পয়েন্টের মনস্তাত্ত্বিক সীমার নিচে নেমে এসেছে। এর আগে সর্বশেষ গত ৬ আগস্ট ডিএসইএক্স সূচকটি সাড়ে ৫ হাজার পয়েন্টের নিচে ছিল। ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে দেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনে ওই দিন থেকেই বাজারে গতি সঞ্চার হয়েছিল। তাতে সূচকটি বেড়ে ৬ হাজার পয়েন্টে ছাড়িয়েছিল মাত্র কয়েক দিনে। এরপর আবার বাজার উত্থান–পতন শুরু করে। এর মধ্যে গত সপ্তাহটি ছিল রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর বিনিয়োগকারীদের জন্য সবচেয়ে খারাপ সপ্তাহ। তাতে দরপতনের প্রতিবাদে গত সপ্তাহে মতিঝিলে ডিএসই ভবন ও আগারগাঁওয়ে বিএসইসি ভবনের সামনে বিক্ষোভও করেছেন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা।