ভালো শেয়ারের সুদিন, বড় উত্থান সূচকের

শেয়ারবাজারগ্রাফিকস: প্রথম আলো

দেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে নিয়ন্ত্রক সংস্থার নিষ্ক্রিয়তার মধ্যেও শেয়ারবাজারে দ্বিতীয় দিনের মতো বড় উত্থান হয়েছে। প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স আজ বুধবার ১৯২ পয়েন্ট বা সাড়ে ৩ শতাংশ বেড়েছে। আগের দিন, অর্থাৎ মঙ্গলবার ডিএসইএক্স সূচকটি ১৯৭ পয়েন্ট বা পৌনে ৪ শতাংশ বেড়েছিল। তাতে গত দুই দিনে ৩৮৯ পয়েন্ট বা ৭ শতাংশের বেশি বেড়েছে।

এ নিয়ে দুই দিনে শেয়ারবাজারে বড় উত্থানের পেছনে মুখ্য ভূমিকা রেখেছে ভালো মৌলভিত্তির কোম্পানিগুলো। এত দিন পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) আশীর্বাদপুষ্ট কারসাজিকারকদের কারসাজির শেয়ারেরই দাপট ছিল চোখে পড়ার মতো। মানহীন দুর্বল ও বন্ধ কোম্পানির শেয়ারের দামও বেড়েছে হু হু করে। এ ধরনের শেয়ারের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির ক্ষেত্রে কারসাজিকারকদের পৃষ্টপোষকতা দেওয়া হয়েছে বিএসইসির শীর্ষ পর্যায় থেকে। এখন বিএসইসির নিষ্ক্রিয়তার মধ্যেও সেসব কারসাজির শেয়ারের কোনো ক্রেতা নেই। তার বিপরীতে ভালো মৌলভিত্তির শেয়ারের প্রতি বেড়েছে বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ।

শেয়ারবাজারে সাম্প্রতিক সময়ে বিএসইসির চেয়ারম্যানের ‘আইটেম’ হিসেবে পরিচিত ছিল লাভেলো আইসক্রিম। তাঁর প্রশ্রয়ে কারসাজিকারকেরা শেয়ারটির অস্বাভাবিক দাম বাড়িয়েছেন। শেয়ারবাজারে মন্দাভাব থাকলেও গত সাড়ে ছয় মাসে কোম্পাটির শেয়ারের দাম বেড়েছে প্রায় ৭৭ টাকা বা ২৫০ শতাংশের বেশি। গত ২৯ জানুয়ারি কোম্পানিটির শেয়ারের বাজারমূল্য ছিল ২৯ টাকা ৮০ পয়সা। একটানা উত্থানে ১৫ জুলাই সেই দাম বেড়ে দাঁড়ায় ১০৬ টাকা। এ রকম অস্বাভাবিক উত্থানের পরও এ বিষয়ে কোনো তদন্ত বা কার্যকর কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। বরং বাজারসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের মুখে মুখে ছিল, এই কোম্পানির শেয়ারের প্রতি বিএসইসির চেয়ারম্যান শিবলী রুবাইয়াত উল ইসলামের সুনজর রয়েছে। কারসাজিকারকেরাও বাজারে এ প্রচারণা চালিয়েছেন। এতে লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়েছে কোম্পানিটির শেয়ারের দাম। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে বিএসইসির সুনজরে থাকা সেই শেয়ারের গত দুই দিনই সর্বোচ্চ দরপতন হয়েছে। লেনদেন শুরুর সঙ্গে সঙ্গে সর্বোচ্চ ৩ শতাংশ করে দাম কমেছে। বর্তমান নিয়ম অনুযায়ী, শেয়ারবাজারে এক দিনে কোনো কোম্পানির শেয়ারের দাম সর্বোচ্চ ৩ শতাংশের বেশি কমতে পারে না।

কারসাজির শেয়ারের এমন দরপতনের বিপরীতে ভালো মৌলভিত্তির শেয়ারের দাম বাড়ছে। বাজারসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, বাজারে কারও হস্তক্ষেপ না থাকায় স্বাভাবিক নিয়মেই ভালো শেয়ারের সুদিন দেখা গেছে গত দুই দিনে। এ ধারা অব্যাহত থাকলে বাজারের প্রতি দেশি-বিদেশি ও নতুন বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ বাড়বে।

ঢাকার বাজারে আজ লেনদেনের শীর্ষ পাঁচ কোম্পানির তালিকায় ছিল বহুজাতিক ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো বা বিএটি, স্কয়ার ফার্মা, রবি আজিয়াটা, সিটি ব্যাংক ও ডেলটা ব্র্যাক হাউজিং (ডিবিএইচ)। এর মধ্যে বিএটির দাম ৩০ টাকা, স্কয়ার ফার্মার দাম ১১ টাকা, রবি আজিয়াটার আড়াই টাকা, সিটি ব্যাংকের প্রায় ২ টাকা ও ডিবিএইচের দাম এক দিনেই ৩ টাকা ৩০ পয়সা বেড়েছে। আগের দিনের মতো গতকালও লেনদেন হওয়া বেশির ভাগ শেয়ারের দাম বেড়েছে। ঢাকার বাজারে এদিন ৩৯৬ প্রতিষ্ঠানের লেনদেন হয়। এর মধ্যে ২৬৬টিরই দাম বেড়েছে। কমেছে ১১৪টির এবং অপরিবর্তিত ছিল ১৬টির দাম।

বেশির ভাগ শেয়ারের মূল্যবৃদ্ধির পাশাপাশি বেড়েছে লেনদেনের পরিমাণও। ডিএসইতে বুধবার লেনদেনের পরিমাণ ছিল ৭৭৬ কোটি টাকা, যা আগের দিনের চেয়ে ২৬ কোটি টাকা বেশি। বাজারসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, দেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে গত দুই দিনে ব্যক্তিশ্রেণির বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণ বেড়েছে বাজারে। সেই সঙ্গে বিদেশি বিনিয়োগকারীরাও বাজারে সক্রিয় হতে শুরু করেছেন। এ কারণে সূচকের পাশাপাশি লেনদেনেও গতি সঞ্চার হয়েছে।