৮-১০ কোম্পানিতে আটকে গেছে লেনদেনের বড় অংশ

শেয়ারবাজার
গ্রাফিকস: প্রথম আলো

ঘুরেফিরে ৮–১০ কোম্পানিতেই আটকে গেছে শেয়ারবাজারের লেনদেনের বড় অংশ। আর যেসব কোম্পানি এখন বাজারে লেনদেনে শীর্ষে রয়েছে সেগুলো নেই ভালো মানের কোম্পানির তালিকায়।

দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর মধ্যে ভালো মানের ৩০ কোম্পানির একটি তালিকা ও সূচক রয়েছে। কিন্তু এ বাজারে গতকাল লেনদেনের শীর্ষে থাকা ৪ কোম্পানির কোনোটিই এ তালিকাভুক্ত নয়।

কোম্পানি চারটি হচ্ছে আমরা নেটওয়ার্ক, জেনেক্স ইনফোসিস, চার্টার্ড লাইফ ইনস্যুরেন্স ও বসুন্ধরা পেপার মিলস। এ চার কোম্পানির মধ্যে তিনটির শেয়ার নিয়েই কারসাজির ঘটনা ঘটেছে বলে বাজারসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের মধ্যে আলোচনা রয়েছে। কয়েকজন আলোচিত কারসাজিকারকের এসব শেয়ারে বিনিয়োগ রয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা যায়।

আরও পড়ুন

গত সপ্তাহেও ঢাকার বাজারে লেনদেনের শীর্ষে ছিল জেনেক্স ইনফোসিস। গত সপ্তাহে পাঁচ কার্যদিবসে কোম্পানিটির প্রায় ১৬৭ কোটি টাকার লেনদেন হয়। গতকালও এটি ডিএসইতে লেনদেনের দ্বিতীয় অবস্থানে ছিল, লেনদেন হয় ২০ কোটি ৫১ লাখ টাকার শেয়ার। কোম্পানিটির সঙ্গে একটি কারসাজি চক্র জড়িত রয়েছে বলে বাজারসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের মধ্যে আলোচনা রয়েছে। একই চক্রের সম্পৃক্ততা রয়েছে বসুন্ধরা পেপার মিলসের শেয়ারেও। বসুন্ধরা পেপার মিলস গতকাল ডিএসইতে লেনদেনে চতুর্থ অবস্থানে ছিল। এদিন কোম্পানিটির প্রায় ১৮ কোটি টাকার শেয়ারের হাতবদল হয়।

এর বাইরে গতকাল ডিএসইতে লেনদেনের প্রথম ও তৃতীয় অবস্থানে ছিল আমরা নেটওয়ার্ক ও  চার্টার্ড লাইফ ইনস্যুরেন্স। এর মধ্যে লেনদেনের শীর্ষে থাকা আমরা নেটওয়ার্কের প্রায় সাড়ে ২৪ কোটি টাকার শেয়ারের হাতবদল হয়। আর চার্টার্ড লাইফ ইনস্যুরেন্সের লেনদেনের পরিমাণ ছিল সোয়া ২০ কোটি টাকার। সব মিলিয়ে উল্লিখিত ৪ কোম্পানির সম্মিলিত লেনদেনের পরিমাণ ছিল প্রায় ৮৩ কোটি টাকা, যা ডিএসইর মোট লেনদেনের প্রায় সাড়ে ১৮ শতাংশ।

আরও পড়ুন

এ ছাড়া গতকাল ডিএসইতে লেনদেনের শীর্ষ ১০ কোম্পানির বাকি ৬টির সম্মিলিত লেনদেনের পরিমাণ ছিল প্রায় ৮২ কোটি টাকার, যা ডিএসইর এদিনের মোট লেনদেনের সোয়া ১৮ শতাংশ। ওই ছয় কোম্পানির মধ্যে রয়েছে রবি, বেক্সিমকো, বেক্সিমকো ফার্মা, নাভানা ফার্মা, সি পার্ল বিচ রিসোর্ট ও বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন (বিপিসি)। সব মিলিয়ে গতকাল ডিএসইর মোট লেনদেনের এক-তৃতীয়াংশ বা ৩৬ কোটি টাকার বেশি লেনদেন ছিল ১০ কোম্পানির। বেশ কিছুদিন ধরেই ডিএসইতে লেনদেনের বড় অংশই ৮-১০ কোম্পানি–নির্ভর। আবার এগুলোর মধ্যে ভালো মানের তালিকাভুক্ত কোম্পানির সংখ্যাও কম। ফলে কিছু কোম্পানি–নির্ভর এ লেনদেন নিয়েও বাজারে নানা ধরনের প্রশ্ন রয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে বাজারের লেনদেন নেমেছে ৫০০ কোটি টাকার নিচে। আর সেই লেনদেনও ঘুরপাক খাচ্ছে হাতেগোনা কয়েকটি কোম্পানির মধ্যে। বেশির ভাগ বিনিয়োগকারী যার কোনো সুফল পাচ্ছেন না।  

নাম প্রকাশ না করার শর্তে শীর্ষ এক ব্রোকারেজ হাউসের শীর্ষ নির্বাহী বলেন, বাজারের লেনদেন এখন একটি কারসাজি চক্রনির্ভর হয়ে গেছে। তাদের হাতে থাকা শেয়ারই লেনদেনের শীর্ষে থাকছে। দামও বাড়ছে। মূলত এসব শেয়ারের লেনদেনের বড় অংশই কৃত্রিম। কারণ, নিজেদের মধ্যে হাতবদলের মাধ্যমেই কোম্পানিগুলোকে লেনদেনের শীর্ষে ধরে রাখা হয়েছে। আর অন্যদিকে ভালো মানের কোম্পানিগুলোর বেশির ভাগই সর্বনিম্ন মূল্যস্তর বা ফ্লোর প্রাইসে আটকে আছে। ফ্লোর প্রাইসে আটকে থাকায় কোম্পানিগুলোর তেমন কোনো লেনদেন হচ্ছে না। ফলে সেখানে বিপুল বিনিয়োগ আটকে আছে।