বাংলাদেশি ‘মিনা’ ব্র্যান্ডের চিংড়ি কিনবে জার্মান কোম্পানি
বাংলাদেশি ব্র্যান্ডের চিংড়ি কিনবে জার্মানভিত্তিক শীর্ষস্থানীয় হিমায়িত খাদ্য বাজারজাতকারী কোম্পানি লেংক ফ্রোজেন ফুডস কোম্পানি। বাংলাদেশের ‘মিনা’ ব্র্যান্ডের চিংড়ি কিনবে এ কোম্পানিটি। এ জন্য বিশ্ববাজারে ‘মিনা’ ব্র্যান্ডে চিংড়ি রপ্তানিকারক বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠান জেমিনি সি ফুডের সঙ্গে চুক্তি করেছে জার্মানভিত্তিক কোম্পানিটি। সম্প্রতি দুই কোম্পানির মধ্যে এ চুক্তি হয়।
জেমিনি সি ফুড দেশের শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত একটি কোম্পানি। তালিকাভুক্তির নিয়ম অনুযায়ী, কোম্পানিটি গতকাল মঙ্গলবার দেশের দুই স্টক এক্সচেঞ্জের মাধ্যমে শেয়ারধারীদের এ তথ্য জানিয়েছে। জেমিনি সি ফুড জানিয়েছে, নতুন এ চুক্তির ফলে বছরে ন্যূনতম ৫০ কোটি টাকার বাড়তি আয় যোগ হবে কোম্পানিটির হিসাবে। আর এ খবরে গতকাল দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) কোম্পানিটির শেয়ারের দাম এক দিনেই সাড়ে ১৫ টাকা বা সোয়া ৩ শতাংশ বেড়েছে। তাতে দিন শেষে কোম্পানিটির শেয়ারের দাম বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৯১ টাকায়।
জেমিনি সি ফুডের কর্মকর্তারা জানান, চুক্তির আওতায় জার্মান কোম্পানিটি বাংলাদেশের সরবরাহকারীদের কাছ থেকে চিংড়ি কিনে তা প্রক্রিয়াজাতের জন্য জেমিনি সি ফুডকে হস্তান্তর করবে। পরে জেমিনি সি ফুড সেই চিংড়ি প্রক্রিয়াজাতের পর তা জার্মান কোম্পানির চাহিদা অনুযায়ী ক্রেতাদের কাছে পৌঁছে দেবে। এ ক্ষেত্রে এসব চিংড়ি রপ্তানি হবে জেমিনি সি ফুডের ‘মিনা’ ব্র্যান্ড নামে। বিনিময়ে জেমিনি সি ফুড পাবে প্রক্রিয়াজাত ও রপ্তানি খরচের পাশাপাশি বাড়তি মুনাফা। চুক্তি অনুযায়ী, বছরে সর্বনিম্ন ৫০ কোটি টাকার চিংড়ি কিনবে লেংক ফ্রোজেন ফুডস কোম্পানিটি, যেটির প্রধান কার্যালয় থাইল্যান্ডে অবস্থিত। এ ছাড়া নতুন নতুন বাজারে চিংড়ি রপ্তানিরও উদ্যোগ নেবে কোম্পানি দুটি মিলে। তাতে জেমিনি সি ফুডের রপ্তানি বাড়বে বলে আশা করছে কোম্পানিটির কর্মকর্তারা।
জানতে চাইলে জেমিনি সি ফুডের ডেপুটি কোম্পানি সচিব তানভীর আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘নতুন চুক্তির ফলে আমাদের রপ্তানির পরিমাণ বাড়বে। বর্তমানে আমরা বছরে যে পরিমাণ মাছ রপ্তানি করি, তার বাইরে জার্মান কোম্পানিটির কাছে বড় অঙ্কের রপ্তানি করা হবে। আর কোম্পানিটি নিজেরা কাঁচামাল সরবরাহের পাশাপাশি প্রক্রিয়াজাত খরচের অর্থ আমাদের অগ্রিম প্রদান করবে। এতে আমাদের বার্ষিক আয় ৫০ শতাংশের মতো বেড়ে যাবে।’
এদিকে ঢাকার শেয়ারবাজারে গতকাল লেনদেনের দিক থেকে দ্বিতীয় অবস্থানে ছিল জেমিনি সি ফুড। এদিন কোম্পানিটির ৩৩ কোটি টাকার শেয়ারের হাতবদল হয়।
বাজারসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, জার্মান কোম্পানির সঙ্গে চুক্তির ফলে আয় বৃদ্ধির যে ঘোষণা কোম্পানিটি দিয়েছে, তাতে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের অনেকে এ শেয়ারের প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। তাতেই লেনদেন বেড়েছে কোম্পানিটির।
জেমিনি সি ফুডের অর্ধবার্ষিক (গত জুলাই-ডিসেম্বর) আর্থিক প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, কোম্পানিটি ছয় মাসে সাড়ে ৪০ কোটি টাকার ব্যবসা করেছে, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ১১ কোটি টাকা কম। আয় কমলেও চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে কোম্পানিটি আগের বছরের চেয়ে বেশি মুনাফা করেছে। গত জুলাই-ডিসেম্বর শেষে কোম্পানিটির কর–পরবর্তী মুনাফা করেছে প্রায় ৭২ লাখ টাকা। আগের বছর একই সময়ে যার পরিমাণ ছিল প্রায় ৬৮ লাখ টাকা।
জেমিনি সি ফুড ১৯৮৫ সালে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হয়। গত জুনে সমাপ্ত আর্থিক বছরে কোম্পানিটি নগদ ও বোনাস মিলিয়ে শেয়ারধারীদের ৪০ শতাংশ লভ্যাংশ দিয়েছে। ২০১৭ সালের পর এটিই কোম্পানিটির সর্বোচ্চ লভ্যাংশ।