ডলারের মূল্যবৃদ্ধিতে ওয়ালটন মুনাফা হারাল ৪৬৯ কোটি টাকা
ইলেকট্রনিক পণ্য উৎপাদনে দেশীয় বড় কোম্পানি ওয়ালটন হাইটেক ইন্ডাস্ট্রিজের মুনাফা এক বছরে প্রায় ৩৬ শতাংশ বা ৪৩৩ কোটি টাকা কমেছে। তাতে গত তিন বছরের মধ্যে কোম্পানিটির মুনাফা সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমেছে। ডলারের দামে অস্থিরতার কারণেই মূলত কোম্পানিটি বড় অঙ্কের মুনাফা হারিয়েছে।
গত জুনে সমাপ্ত ২০২২–২৩ অর্থবছরে ওয়ালটন প্রায় ৭৮৩ কোটি টাকা মুনাফা করেছে। এর আগের বছরে অর্থাৎ ২০২১–২২ অর্থবছরে কোম্পানিটি মুনাফা করেছিল ১ হাজার ২১৬ কোটি টাকা। সেই হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে কোম্পানিটির মুনাফা ৪৩৩ কোটি টাকা কমেছে। ওয়ালটনের আর্থিক প্রতিবেদনে এ তথ্য পাওয়া গেছে। গতকাল বৃহস্পতিবার কোম্পানিটির পরিচালনা পর্ষদের সভা শেষে প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়। প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত অর্থবছর শেষে এই কোম্পানির শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) কমে ২৫ টাকা ৮৪ পয়সায় নেমেছে, যা আগের ২০২১–২২ অর্থবছর শেষে ছিল ৪০ টাকা ১৬ পয়সা।
ওয়ালটন কর্তৃপক্ষ জানায়, শুধু মার্কিন ডলারের বিপরীতে দেশীয় টাকার মান কমে যাওয়ায় সর্বশেষ অর্থবছরে তারা ৪৬৯ কোটি টাকা লোকসান করেছে। এই লোকসান না করলে তা কোম্পানির মুনাফায় যুক্ত হতো। সে ক্ষেত্রে কোম্পানিটির মুনাফা গত বছরের চেয়ে বেশি হতো। ডলারের উচ্চ মূল্যের কারণে একদিকে কোম্পানিটির বড় অঙ্কে মুনাফা কমেছে, অন্যদিকে খরচ বেড়েছে।
এদিকে মুনাফা কমলেও বিনিয়োগকারীদের আগের বছরের চেয়ে বেশি লভ্যাংশ প্রদানের ঘোষণা দিয়েছে ওয়ালটন। ২০২২–২৩ অর্থবছরের সাধারণ বিনিয়োগকারীদের জন্য কোম্পানিটি ৩০০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে। তাতে প্রতিটি শেয়ারের বিপরীতে একজন সাধারণ বিনিয়োগকারী ৩০ টাকা করে লভ্যাংশ পাবেন। সাধারণ বিনিয়োগকারীদের জন্য প্রতি শেয়ারে ৩০ টাকা লভ্যাংশ ঘোষণা করা হলেও কোম্পানির উদ্যোক্তা–পরিচালকেরা অবশ্য প্রতি শেয়ারে পাবেন ৯ টাকা। ফলে উদ্যোক্তাদের তুলনায় সাধারণ বিনিয়োগকারীরা ২১ টাকা বা ২১০ শতাংশ বেশি লভ্যাংশ পাবেন।
এদিকে মুনাফা কমে যাওয়ার পাশাপাশি কোম্পানির বিক্রিও কমেছে সর্বশেষ অর্থবছরে। আগের বছরের তুলনায় আয় কমেছে দেড় হাজার কোটি টাকা বা ১৯ শতাংশ। আলোচ্য ২০২২–২৩ অর্থবছরে কোম্পানিটির রাজস্ব আয় হয়েছে ৬ হাজার ৬০০ কোটি টাকা। এর আগের বছরে এই পরিমাণ ছিল ৮ হাজার ১৬৮ কোটি টাকা। ওয়ালটন কর্তৃপক্ষ বলছে, উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমেছে, যা সার্বিকভাবে কোম্পানির বিক্রির ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।
ওয়ালটনের আর্থিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২১–২২ অর্থবছরে ডলারের উচ্চ মূল্যের কারণে তাদের লোকসান হয়েছিল ৩০৪ কোটি টাকা। সর্বশেষ অর্থবছরে সেই লোকসানের পরিমাণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৬৯ কোটি টাকা।
মুনাফা কমে যাওয়ার প্রধান কারণ হিসেবে ডলারের উচ্চ মূল্য ও বৈশ্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতিকে দায়ী করেছে ওয়ালটন। তারা বলছে, গত অর্থবছরে বিশ্ব অর্থনৈতিক পরিস্থিতি ছিল বেশ অস্থিতিশীল। সেই সঙ্গে মার্কিন ডলারের বিপরীতে স্থানীয় টাকার বড় ধরনের অবমূল্যায়ন হয়েছে। এ কারণে পণ্যের আমদানি খরচ বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি ব্যবসার খরচও বৃদ্ধি পেয়েছে। তাতে কোম্পানির মুনাফা কমে গেছে।
ওয়ালটন দেশের শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হয় ২০২০ সালে। শেয়ারবাজারে মাত্র ১ শতাংশ শেয়ার ছাড়ে কোম্পানিটি। বাকি ৯৯ শতাংশ শেয়ারই কোম্পানির উদ্যোক্তা–পরিচালকদের হাতে রয়েছে।
শেয়ারবাজারের পতন ঠেকাতে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির বেঁধে দেওয়া সর্বনিম্ন মূল্যস্তর বা ফ্লোর প্রাইসের কারণে গত এক বছরের বেশি সময় ধরে ওয়ালটনের শেয়ারের দাম ফ্লোর প্রাইসে আটকে আছে। গতকাল বৃহস্পতিবার দিনশেষে কোম্পানিটির প্রতিটি শেয়ারের বাজারমূল্য ছিল প্রায় ১ হাজার ৪৮ টাকা। দীর্ঘদিন ধরে ফ্লোর প্রাইসে আটকে থাকায় কোম্পানিটির শেয়ারেরও তেমন লেনদেন হচ্ছে না।