সিসিবিএলের কর্মকাণ্ডে ডিএসইর অসন্তোষ

  • ডিএসই, সিএসই, সিডিবিএলসহ ১২টি ব্যাংক সিসিবিএলের মালিকানায় রয়েছে।

  • ডিএসই ছাড়া অন্য শেয়ারধারীরা সিসিবিএলের কর্মকাণ্ড নিয়ে আপত্তি তোলেনি।

  • সিসিবিএল ২০১৯ সালে গঠিত হলেও এখন পর্যন্ত কার্যক্রম শুরু করতে পারেনি।

  • সংস্থাটিতে স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগ দিতেই কেটে গেছে ৫৩৫ দিন।

  • শেয়ারধারীদের মধ্যে সিডিবিএল পরিচালক নিয়োগ না দেওয়ায় ১১৮ দিন পর্ষদ সভা হয়নি।

শেয়ারবাজারপ্রতীকী ছবি

শেয়ারবাজারের লেনদেন নিষ্পত্তির প্রক্রিয়া ঝুঁকিমুক্ত ও দ্রুত সম্পন্ন করার জন্য গঠিত নতুন কোম্পানি সেন্ট্রাল কাউন্টারপার্টি বাংলাদেশ লিমিটেডের (সিসিবিএল) কর্মকাণ্ড নিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) কর্তৃপক্ষ। এ কারণে সিসিবিএলের কার্যক্রম নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।

২০১৯ সালে গঠিত সিসিবিএলের অন্যতম শেয়ারধারী হলো ডিএসই। কোম্পানিটির পর্ষদে ডিএসইর দুজন পরিচালকও রয়েছেন। শেয়ারবাজারের লেনদেন নিষ্পত্তি ঝুঁকিমুক্ত ও দ্রুত করতে সিসিবিএল গঠন করা হয়। তবে এই কোম্পানি এখনো কার্যক্রমে আসেনি। সম্প্রতি সিসিবিএল লেনদেন নিষ্পত্তির জন্য সেন্ট্রাল কাউন্টারপার্টি বা সিসিপি প্রযুক্তি স্থাপনে ভারতের টাটা কনসালট্যান্সির সঙ্গে চুক্তির উদ্যোগ নেয়। সেটি জেনেই ডিএসই এ–সংক্রান্ত কেনাকাটার চুক্তি বন্ধের অনুরোধ জানায়। যদিও সিসিবিএলের পরিচালনা পর্ষদের গত ২৭ মার্চের সভায় চুক্তির বিষয়টি অনুমোদিত হয়। এখন ডিএসইর আপত্তিতে পুরো প্রক্রিয়াটি নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।

জানতে চাইলে ডিএসইর সভাপতি মমিনুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘শেয়ারবাজারে বর্তমানে ডিএসইও লেনদেন নিষ্পত্তিতে কাজ করছে। লেনদেন নিষ্পত্তির আধুনিক নানা যন্ত্রপাতিও রয়েছে আমাদের। এ অবস্থায় নতুন করে বিপুল অর্থ খরচ করে নতুন প্রযুক্তি না কিনে দুই সংস্থা মিলে যৌথভাবে এ ক্ষেত্রে কাজ করতে পারে কি না, এ বিষয়ে আমরা সিসিবিএলকে অনুরোধ জানিয়েছি। তাই পুরো ক্রয়প্রক্রিয়াটি রিভিউ করার কথা বলেছি। আশা করছি, দুই সংস্থা মিলে আলোচনার মাধ্যমে শেয়ারবাজারে স্বার্থকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে একটা সমাধানে পৌঁছাতে পারব।’

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, সিসিপি প্রযুক্তি কেনা থেমে গেলে সিসিবিএলের পুরো কর্মকাণ্ডই বাধাগ্রস্ত হবে। কারণ, এ ধরনের প্রযুক্তি ছাড়া কোম্পানিটি কার্যক্রমে যেতে পারবে না। ডিএসইর আপত্তিতে এখন কোম্পানিটির ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।

এদিকে ডিএসই বলছে, অতীতে বিভিন্ন কেনাকাটার ক্ষেত্রে সিসিবিএল প্রযুক্তির উন্নত মান নিশ্চিতে ব্যর্থ হয়েছে। এ কারণে প্রযুক্তিগত ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। অন্যদিকে সিসিবিএল কর্তৃপক্ষের দাবি, এ ধরনের অভিযোগের কোনো ভিত্তি নেই। সিসিবিএলের সব ধরনের কেনাকাটা আইন মেনে বিশেষজ্ঞ পরামর্শক কমিটির মতামতের ভিত্তিতেই নেওয়া হয়েছে। বর্তমানে শেয়ারবাজারে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান যে ধরনের প্রযুক্তি ব্যবহার করছে, তারাও সেই ধরনের প্রযুক্তি ব্যবহার করছে। প্রযুক্তিনির্ভর যেকোনো কেনাকাটার ক্ষেত্রে কারিগরি কমিটির মতামত নেওয়া হয়।

সিসিবিএল ২০১৯ সালে গঠিত হলেও এখন পর্যন্ত কার্যক্রম শুরু করতে পারেনি। তাতে ক্ষোভ জানিয়েছে ডিএসই। সংস্থাটি এ বিষয়ে তাদের এক চিঠিতে বলেছে, দীর্ঘ কয়েক বছরেও কার্যক্রম শুরু করতে না পারায় প্রতিষ্ঠানটির সক্ষমতা ও স্বচ্ছতা নিয়ে বাজারে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। ডিএসইর এই অভিযোগের বিষয়ে সিবিবিএল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির পক্ষ থেকে সিসিবিএলে স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগেই ৫৩৫ দিন সময় লেগেছে। পর্ষদ গঠন চূড়ান্ত না হওয়ায় কোম্পানির সার্বিক কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হয়েছে। এ ছাড়া কোম্পানিটির শেয়ারধারী হিসেবে ডিএসই, চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই) ও সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেড (সিডিবিএল) থেকে পরিচালক নিয়োগ না দেওয়ায় ১১৮ দিন কোম্পানিটি কোনো পর্ষদ সভা করতে পারেনি। এটিও কোম্পানির কার্যক্রম শুরু করার ক্ষেত্রে মাত্রাতিরিক্ত বিলম্বের অন্যতম কারণ।

জানা যায়, গত বুধবার সিসিবিএলের পরিচালনা পর্ষদের সভায় ডিএসইর পক্ষ থেকে প্রতিষ্ঠানটি সম্পর্কে তোলা বিভিন্ন অভিযোগের বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। সেখানে ডিএসইর প্রতিটি আপত্তি ও অভিযোগের বিষয়ে সুনির্দিষ্ট জবাবও অনুমোদিত হয়। এরপর সিসিবিএলের পক্ষ থেকে ডিএসইকে লিখিত জবাব দেওয়া হয়েছে।

বিপুল অর্থ খরচ করে নতুন প্রযুক্তি না কিনে দুই সংস্থা মিলে যৌথভাবে এ ক্ষেত্রে কাজ করতে পারে কি না, এ বিষয়ে আমরা সিসিবিএলকে অনুরোধ জানিয়েছি। তাই পুরো ক্রয়প্রক্রিয়াটি রিভিউ করার কথা বলেছি
মমিনুল ইসলাম, সভাপতি, ডিএসই।

জানতে চাইলে সিসিবিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ফরহাদ আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘ডিএসই কর্তৃপক্ষ সিসিবিএলের কিছু বিষয়ে তাদের আপত্তি ও অভিযোগ তুলেছে। যদিও আমাদের পর্ষদে ডিএসইর দুজন প্রতিনিধি রয়েছেন। যেহেতু শেয়ারধারী হিসেবে ডিএসই কিছু বিষয়ে তাদের আপত্তি জানিয়েছে, সেহেতু আমরা সেগুলোর জবাব দিয়েছি। আশা করছি, আলোচনার মাধ্যমে বিষয়টির অবসান হবে।’

পুঁজিবাজার বিশ্লেষকেরা বলছেন, সিসিবিএলের কর্মকাণ্ড নিয়ে ডিএসইর পক্ষ থেকে যেসব আপত্তি তোলা হয়েছে, সেগুলো আলোচনার মাধ্যমে নিষ্পত্তি করা দরকার। এ ক্ষেত্রে প্রয়োজনে নিয়ন্ত্রক সংস্থার মধ্যস্থতায়ও এ বিষয়টির সুরাহা হতে পারে। তবে কোনোভাবেই যাতে সিসিবিএলের কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত না হয়, সেটি নিশ্চিত করতে হবে। কারণ, সিসিবিএল চালু হলে তাতে শেয়ারবাজারে লেনদেন নিষ্পত্তির ঝুঁকি যেমন দূর হবে, তেমনি অদূর ভবিষ্যতে লেনদেন নিষ্পত্তির সময়ও কমবে।

সিসিবিএলের মালিকানায় রয়েছে ডিএসই, সিএসই, সিডিবিএল ও ১২টি ব্যাংক। এর মধ্যে প্রতিষ্ঠানটির ৪৫ শতাংশ শেয়ারের মালিকানা ডিএসইর। ২০ শতাংশ করে ৪০ শতাংশ মালিকানা সিএসই ও সিডিবিএলের হাতে। বাকি ১৫ শতাংশ মালিকানা ১২টি ব্যাংকের। ডিএসই ছাড়া অন্য কোনো শেয়ারধারী সিসিবিএলের কর্মকাণ্ড নিয়ে আপত্তি তোলেনি।