বিএসইসির খায়রুল ও শিবলী কমিশনের অনিয়ম তদন্তের দাবি ডিবিএর
পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনসহ (বিএসইসি), ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) রাজনৈতিক বিবেচনায় নিয়োগ পাওয়া পর্ষদ সদস্যদের বাদ দিয়ে নতুন পর্ষদ গঠনের দাবি উঠেছে। একই সঙ্গে শেয়ারবাজারসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেড (সিডিবিএল) ও সেন্ট্রাল কাউন্টারপার্টি বাংলাদেশ লিমিটেডের (সিসিবিএল) পর্ষদ পুনর্গঠনেরও দাবি তোলা হয়েছে।
ডিএসই ব্রোকারজ অ্যাসোসিয়েশন (ডিবিএ) আজ সোমবার ঢাকা ক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানিয়েছে। পাশাপাশি তারা বিএসইসির ২০১০ সাল–পরবর্তী চেয়ারম্যান এম খায়রুল হোসেন ও শিবলী রুবাইয়াত–উল–ইসলামের নেতৃত্বাধীন কমিশনের অনিয়ম ও দুর্নীতি উদ্ঘাটনে একটি শক্তিশালী তদন্ত কমিটি গঠনের দাবি জানায়। ডিবিএ বলছে, খায়রুল হোসেন ও শিবলী রুবাইয়াত–উল–ইসলাম শেয়ারবাজারের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করতে পারেননি। তাঁরা বাজারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফেরাতে ব্যর্থ হয়েছেন। পাশাপাশি ইনসাইডার ট্রেডিং, প্রাথমিক গণপ্রস্তাব (আইপিও) অনুমোদন, প্লেসমেন্ট বাণিজ্যের মতো নানা অনিয়মের সঙ্গে তাঁদের ব্যক্তিগত সম্পৃক্ততা ছিল। নিয়ন্ত্রক সংস্থার শীর্ষ পদে থেকে যাঁরা নানা অনিয়মের সঙ্গে জড়িত ছিলেন, তাঁদের খুঁজে বের করতে নিরপেক্ষ তদন্ত দরকার। সেই সঙ্গে বিনিয়োগ আকর্ষণের নামে শিবলী রুবাইয়াত–উল–ইসলাম বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রোড শোর নামে রাষ্ট্রের কত টাকা ক্ষতি করেছেন এবং এর মাধ্যমে বিদেশে কত অর্থ পাচার করা হয়েছে, তার একটি শ্বেতপত্র প্রকাশের দাবি জানায় সংগঠনটি।
দেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে পুঁজিবাজারের বর্তমান ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা বিষয়ে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে ডিবিএ। এতে সংগঠনের সভাপতি সাইফুল ইসলাম, জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি মো. সাইফউদ্দিন ও সহসভাপতি ওমর হায়দার খান, পরিচালক দস্তগীর মো. আদিল, মাসুদুল হক, দিল আফরোজ কামাল, মামুন আকবর, সুমন দাশ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
লিখিত বক্তব্যে ডিবিএর সভাপতি সাইফুল ইসলাম বলেন, খায়রুল হোসেন ও শিবলী রুবাইয়াত–উল–ইসলামের নেতৃত্বাধীন কমিশন গত ১৩–১৪ বছরে শেয়ারবাজারকে পুরোপুরি ওলট–পালট করে দিয়েছে। তাদের অপশাসন ও অপকর্মের সঙ্গে কমিশনের বহু অসৎ ও দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা জড়িত ছিলেন। দুর্নীতিবাজ কমিশনের সঙ্গে সুসম্পর্ক তৈরি হয় বাজার ধ্বংসকারী কিছু ব্যবসায়ীর। এসব দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা ও সুবিধাভোগী ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়ে বাজারে শৃঙ্খলা ও বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরিয়ে আনতে হবে। এ জন্য সংগঠনটি স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘ মেয়াদে করণীয় বিষয়ে ৩০টি দাবি তুলে ধরে।
ডিবিএর উল্লেখযোগ্য দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে বিএসইসির দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের অপসারণ; অনিয়ম–দুর্নীতি তদন্তে সৎ ও অভিজ্ঞ ব্যক্তিদের সমন্বয়ে তদন্ত কমিটি গঠন; বিএসইসির চেয়ারম্যান ও কমিশনার নিয়োগে সার্চ কমিটি গঠন; দুই স্টক এক্সচেঞ্জ, সিডিবিএল ও সিসিবিএলের পর্ষদ পুনর্গঠন; খায়রুল ও শিবলী কমিশন যেসব আইন ও বিধিবিধান করেছে, তা বাতিল বা সংশোধন; ভবিষ্যতে আর কখনো ফ্লোর প্রাইস আরোপ না করার বিধান জারি; শেয়ারবাজারে লেনদেনের জন্য নতুন ট্রেক ইস্যুর ক্ষেত্রে কোনো আর্থিক লেনদেন হয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখা। এ ছাড়া বিদেশে রোড শোর নামে অর্থের অপচয় ও বৈদেশিক মুদ্রা পাচারের ঘটনা তদন্ত; আইপিও ও রাইট শেয়ার ইস্যুতে স্বচ্ছতা নিশ্চিতে বিধিমালা সংশোধন; তালিকাভুক্ত বন্ধ কোম্পানিগুলোকে তালিকাচ্যুত করা; কারসাজির ঘটনায় প্রমাণ সাপেক্ষে ফৌজদারি মামলার বিধান জারি, বিএসইসির জবাবদিহি নিশ্চিতে প্রতি মাসে গণশুনানির ব্যবস্থা করা ও মার্জিন রুলের কাঠামোগত পরিবর্তন ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।
প্রশ্নোত্তর পর্বে ডিবিএ নেতারা বলেন, গত ১৪–১৫ বছরে এমন ঘটনাও ঘটেছে যে কোনো কোনো বিনিয়োগকারীকে ঋণসুবিধা দেওয়া না হলে বিএসইসিসহ বিভিন্ন সংস্থা থেকে ফোন করিয়ে ঋণ প্রদানে বাধ্য করা হতো। ব্যক্তি বিশেষকে সুবিধা দিতে বন্ধ ও মন্দ কোম্পানিকে ওটিসি (ওভার দ্য কাউন্টার) থেকে এসএমই বোর্ডে তালিকাভুক্তির সুযোগ করে দিয়েছিল বিএসইসি। সেকেন্ডারি বাজার হয়ে গিয়েছিল ‘আইটেমনির্ভর’। এই আইটেমনির্ভর বাজারকে স্বাভাবিক ধারায় ফেরানো এখন সময়ের দাবি। এ ছাড়া পুঁজিবাজার স্থিতিশীলকরণ তহবিল (সিএমএসএফ) বাতিলেরও দাবি জানান ডিবিএ নেতারা।