অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদের কাছে শেয়ারবাজারের জন্য একগুচ্ছ নীতি সহায়তা চেয়েছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। আজ বুধবার বিকেলে অর্থ উপদেষ্টা প্রথমবারের মতো রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বিএসইসির কার্যালয়ে গেলে তাঁর সঙ্গে এক বৈঠকে সংস্থাটি বাজারের উন্নয়নে এসব নীতি সহায়তা চেয়েছে।
বৈঠক সূত্রে জানা যায়, পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির পক্ষ থেকে সরকারের কাছ থেকে যেসব নীতি সহায়তা চাওয়া হয়েছে, সেগুলোর বিষয়ে ইতিবাচক মনোভাবই দেখান অর্থ উপদেষ্টা। বিএসইসি যেভাবে যতটা সুবিধা চেয়েছে, তার সবগুলো পূরণ করা সম্ভব না হলেও এসব নীতি সহায়তার বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের সঙ্গে কথা বলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান অর্থ উপদেষ্টা।
বিএসইসির পক্ষ থেকে বাজারের বর্তমান অবস্থায় তারল্য সরবরাহ বাড়াতে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের জন্য স্বল্প সুদে পুনঃ অর্থায়ন তহবিল সুবিধা চেয়েছে বিএসইসি। সেই সঙ্গে মূলধনি মুনাফার ওপর উচ্চ হারে যে করারোপ করা হয়েছে, তা প্রত্যাহার এবং রাষ্ট্রায়ত্ত বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশকে (আইসিবি) তহবিল সহায়তার বিষয়ে উপদেষ্টার হস্তক্ষেপ চাওয়া হয়। এ সময় বৈঠকে উপস্থিত আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের অতিরিক্ত সচিব অমল কৃষ্ণ মণ্ডলকে আইসিবিকে তহবিল সহায়তার বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেন উপদেষ্টা। তিনি জানান, তারল্য সরবরাহ বাড়াতে পুনঃ অর্থায়ন তহবিল বা ব্যাংকের বিনিয়োগ বৃদ্ধিতে কী করা যায়, তা বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। এ ছাড়া তিনি মূলধনি মুনাফার ওপর আরোপিত কর কমানোর বিষয়ে ইতিবাচক আশ্বাস দেন বলে বৈঠক সূত্রে জানা গেছে।
বৈঠকে বিএসইসির চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদ, তিন কমিশনার ও নির্বাহী পরিচালকেরা উপস্থিত ছিলেন। এ সময় বিএসইসির কর্মকাণ্ড, বাজারের বিদ্যমান পরিস্থিতি ও ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা নিয়ে একটি উপস্থাপনা দেওয়া হয়।
বৈঠক শেষে অর্থ উপদেষ্টা সাংবাদিকদের বলেন, ‘এই মুহূর্তে শেয়ারবাজারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফেরানো আমাদের প্রধান লক্ষ্য। প্রয়োজনীয় নীতি সহায়তা ও সংস্কারের মাধ্যমে একটি আন্তর্জাতিক মানের বাজার নিশ্চিত করতে চাই আমরা। এ ছাড়া স্বল্প মেয়াদে বাজার নিয়ে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে যে দুশ্চিন্তা রয়েছে, সেটি দূর করতে দ্রুত কিছু ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
অর্থ উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকের পর এ বিষয়ে বিএসইসির পক্ষ থেকে একটি বিবৃতি দেওয়া হয়। এতে বলা হয়, শেয়ারবাজারের মূলধনি মুনাফায় আরোপিত কর যৌক্তিকীকরণ, তালিকাভুক্ত হওয়ার ব্যাপারে ভালো কোম্পানির আগ্রহ বাড়াতে তালিকাভুক্ত ও অ–তালিকাভুক্ত কোম্পানির করহারের ব্যবধান বৃদ্ধি, বাজারের গভীরতা বাড়াতে সরকারি কোম্পানিগুলোকে সরাসরি বা আইপিওর মাধ্যমে তালিকাভুক্ত করা এবং বহুজাতিক কোম্পানিগুলোকে বাজারে আনতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ জানানো হয় বিএসইসির পক্ষ থেকে। এ ছাড়া দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়নের ক্ষেত্রে কোম্পানিগুলো যাতে ব্যাংকের বদলে পুঁজিবাজারকে বেছে নেয়, সে জন্য ব্যাংকের অর্থায়নের একটি সীমা বেঁধে দেওয়া, পুঁজিবাজারের বিভিন্ন অনিয়মের ঘটনায় জরিমানার মাধ্যমে আদায় করা অর্থের একটি অংশ বিনিয়োগকারীদের সুরক্ষায় ব্যবহার, বাজারের বিদ্যমান ঋণাত্মক ঋণ হিসাব বা নেগেটিভ ইক্যুইটি সমস্যার কার্যকর ও চূড়ান্ত সমাধান এবং মিউচুয়াল ফান্ড খাতের উন্নয়নে অর্থ উপদেষ্টার সহায়তা কামনা করা হয়।
এদিকে প্রথমবারের মতো অর্থ উপদেষ্টা বিএসইসিতে যাওয়ার খবরে গতকাল সকাল থেকেই শেয়ারবাজারে চাঙাভাব দেখা যায়। প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স এদিন ১৪৭ পয়েন্ট বা প্রায় ৩ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ১৬৫ পয়েন্ট। সেই সঙ্গে লেনদেন বেড়ে এক মাস পর আবারও ৫০০ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। গতকাল ডিএসইতে লেনদেন হয় ৫১৯ কোটি টাকার। লেনদেন হওয়া ৩৯৭ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৩৭৩টিরই দাম বেড়েছে। কমেছে ১৫টির আর অপরিবর্তিত ছিল ৯টির দাম।