এস আলম পরিবারের সদস্যসহ ২৫ ব্যক্তি ও ৫৬টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার বিক্রিতে নিষেধাজ্ঞা

শেয়ারবাজারগ্রাফিকস: প্রথম আলো

এস আলম পরিবারের সদস্যসহ ২৫ ব্যক্তি ও ৫৬ প্রতিষ্ঠানের হাতে থাকা ছয় ব্যাংকের শেয়ার বিক্রি ও হস্তান্তরের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) এই নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে।

বিএসইসির পক্ষ থেকে গতকাল মঙ্গলবার এ–সংক্রান্ত নির্দেশনা শেয়ার ধারণের সঙ্গে যুক্ত প্রতিষ্ঠান সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেড বা সিডিবিএল, প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের কাছে পাঠানো হয়েছে। তাঁদের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। এর আগে গতকালই বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে এসব ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের হাতে থাকা শেয়ার বিক্রি ও হস্তান্তর বন্ধে বিএসইসির চেয়ারম্যানকে চিঠি দেওয়া হয়। ওই চিঠির ভিত্তিতে গতকালই ৮১ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের শেয়ার বিক্রি ও হস্তান্তরে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে বিএসইসি।

আরও পড়ুন

বিএসইসিকে দেওয়া বাংলাদেশ ব্যাংকের চিঠিতে বলা হয়, এস আলমের মালিকানায় থাকা ইসলামী ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক ও বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংকের পর্ষদের পরিচালক ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি পরিচালকদের সবাই চট্টগ্রামভিত্তিক এস আলম গ্রুপ–সংশ্লিষ্ট। এ গ্রুপের ও গ্রুপ–সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও কোম্পানি ঋণ নিয়মাচারের ব্যত৵য় করে পরিচালনা পর্ষদের প্রভাবে বিভিন্ন ব্যাংক থেকে বিপুল অঙ্কের ঋণ বা বিনিয়োগ সুবিধা নিয়েছে। বর্তমানে এসব ব্যাংকের আর্থিক অবস্থার ক্রমান্বয়ে অবনতি ঘটছে। ব্যাংকগুলোর পরিচালনা পর্ষদের সদস্যরা একই গ্রুপ সংশ্লিষ্ট হওয়ায় বর্তমান পরিস্থিতিতে তাঁদের নেওয়া ঋণ ও বিনিয়োগের অর্থ আদায়ে জটিলতা তৈরির আশঙ্কা রয়েছে। তাই এসব ব্যাংকের শেয়ারধারক ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান যাতে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন ছাড়া শেয়ার ক্রয়–বিক্রয় বা হস্তান্তর করতে না পারেন সেই বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করা আবশ্যক।

বাংলাদেশ ব্যাংক যে ৮১ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ক্রয়–বিক্রয় ও হস্তান্তরে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে তার মধ্যে ব্যক্তিপর্যায়ের শেয়ারধারী ২৫ জন হলেন– মোহাম্মদ সাইফুল আলম বা এস আলম, তাঁর স্ত্রী ফারজানা পারভীন, ছেলে আহসানুল আলম, মায়মুনা খানম, আতিকুর নেসা, শারমিন ফাতেমা, মারজিনা শারমিন, ফারজানা বেগম, শাহানা ফেরদৌস, রহিমা বেগম, মোহাম্মদ আবদুল মালেক, আশরাফুল মোস্তফা চৌধুরী, মোহাম্মদ আবদুল্লাহ হাসান, জামাল মোস্তফা চৌধুরী, জামাতা বেলাল আহমেদ, মাহমুদুল আলম, আরশাদুল আলম, এস আলমের বোন বদরুন নেসা আলম ও তাঁর স্বামী ওয়াহিদুল আলম শেঠ, রোকেয়া ইয়াসমিন, এস আলমের ভাই শহিদুল আলম ও ওসমান গণি, হালিমা বেগম, রাশেদুল আলম এবং এস আলমের ভাগনে মোহাম্মদ মোস্তান বিল্লাল আদিল। এসব ব্যক্তির বেশির ভাগই এস আলম পরিবারভুক্ত। তবে এ তালিকা থেকে বাদ পড়েছেন এস আলমের দুই ভাই ও তাঁদের পরিবারের সদস্যরা। যাঁদের নামে–বেনামে এসব ব্যাংকের শেয়ার রয়েছে।

আরও পড়ুন

এ ছাড়া যে ৫৬টি প্রতিষ্ঠানের হাতে থাকা উল্লিখিত ছয় ব্যাংকের শেয়ার বিক্রি ও হস্তান্তরে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে, সেগুলো হলো এবিসি ভেঞ্চারস, আরমাডা স্পিনিং মিলস, বাংলাদেশ পেট্রো কেমিক্যালস, ব্লু ইন্টারন্যাশনাল, ব্রিলিয়েন্ট বিজনেস কোম্পানি, ব্রডওয়ে ইমপেক্স কোম্পানি, সিঅ্যান্ডএ এক্সেসরিজ, সিঅ্যান্ডএ ফেব্রিকস, কেরোলিনা বিজনেস এন্টারপ্রাইজেস, ডায়নামিক ভেঞ্চারস, এভারগ্রিণ শিপিং, এক্সেল ডায়িং অ্যান্ড প্রিন্টিং, এক্সেলসিওর ইমপেক্স কোম্পানি, ফতেহাবাদ ফার্ম, জেনেসিস টেক্সটাইলস এক্সেসরিজ অ্যান্ড অ্যাপারেলস, গ্লোবাল ট্রেডিং করপোরেশন, গ্র্যান্ড বিজনেস, হাসান আবাসন, হাইক্লাস বিজনেস এন্টারপ্রাইজেস, হোলিস্টিক ইন্টারন্যাশনাল, হানিওয়েল সিকিউরিটিজ করপোরেশন, আইডিয়াল ফ্লাওয়ার মিলস, জেএমসি বিল্ডার্স, কর্ণফুলী ফুডস (প্রাইভেট), কর্ণফুলী প্রাকৃতিক গ্যাস, কিংস্টোন ফ্লাওয়ার মিলস, কিংসওয়ে এনডিভরস, লিডার বিজনেস এন্টারপ্রাইজ, লায়ন সিকিউরিটিজ অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্টস, লায়নহেড বিজনেস রিসোর্সেস, ম্যারাথন ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল, মিল্কওয়ে ইমপেক্সকো, মডার্ন প্রোপার্টিজ, নওশিন স্টিলস, ওশান রিসোর্টস, পদ্মা এক্সপোর্ট ইমপোর্ট অ্যান্ড ট্রেডিং, প্যারাডাইস ইন্টারন্যাশনাল, পিকস বিজনেস এন্টারপ্রাইজ, পারসেপ্টা এনডিভরস, প্ল্যাটিনাম এনডিভরস, পোর্টম্যান সিমেন্টস, প্রাসাদ প্যারাডাইস রিসোর্টস, পুষ্টি ভেজিটেবল ঘি, রিলায়েবল এন্ট্রাপ্রেনিউর্স, শাহ আমানত প্রাকৃতিক গ্যাস কোম্পানি, সলিড ওয়াক ইনস্যুরেন্স পিসিসি, সোনালী কার্গো লজিস্টিকস, ইউনিগ্লোব বিজনেস রিসোর্সেস, ইউনিক ইনভেস্টমেন্ট অ্যান্ড সিকিউরিটিজ, ইউনিটেক্স সিমেন্ট, ইউনিটেক্স স্টিল মিলস, ইউনিটেক্স টায়ার, ভাইব্রেন্ট এনডিভরস, ভিক্টর ট্রেড অ্যান্ড বিজনেস, ওয়াসিকো লিমিটেড ও ওয়েস্টার্ন ডিজাইনার্স লিমিটেড।

আরও পড়ুন

উল্লেখিত ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নামে শেয়ার কিনে ছয়টি ব্যাংকের মালিকানায় একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার করেছিল এস আলম গ্রুপ। এর মধ্যে ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যানের দায়িত্বে রয়েছে এস আলমের ছেলে আহসানুল আলম, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান হিসেবে এস আলম নিজেই, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান হিসেবে এস আলমের জামাতা বেলাল আহমেদ। ২০১৭ সালে একটি গোয়েন্দা সংস্থার সহায়তায় রাজধানীর একটি পাঁচ তারকা হোটেলে অনুষ্ঠিত এক সভার মাধ্যমে ইসলামী ব্যাংক দখলে নেয় এস আলম গ্রুপ। এরপর একে একে দখল করে ফার্স্ট সিকিউরিটি ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংকসহ অন্যান্য ব্যাংক। এসব ব্যাংকের বেশির ভাগ শেয়ার নামে–বেনামে নিজের নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার পর ব্যাংকগুলো থেকে বিপুল অঙ্কের ঋণ বের করে নেয় এস আলম গ্রুপ। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, এক ইসলামী ব্যাংক থেকেই এস আলম গ্রুপ নামে–বেনামে প্রায় লাখ কোটি টাকার মতো ঋণ বের করে নিয়েছে।