রপ্তানি ও প্রবাসী আয়ে সহায়তা বাড়ানো উচিত: আতিউর রহমান
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর আতিউর রহমান বলেছেন, রপ্তানি ও প্রবাসী আয়ে করছাড় বা নগদ সহায়তা আরও কয়েক বছর অব্যাহত রাখা উচিত। এখনো এসব খাতে সহায়তা উঠিয়ে দেওয়ার সময় হয়নি; বরং এসব খাতে ভর্তুকি বাড়িয়ে দেওয়া উচিত। তিনি আরও বলেন, ‘আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় যা-ই বলুক না কেন, আগামী কয়েক বছর এ সহায়তা দিয়ে যেতে হবে। এ নিয়ে যেন কোনো বিভ্রান্তি না থাকে। আমাদের এখন মসৃণভাবে স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) তালিকা থেকে বের হওয়া জরুরি।’
আজ রোববার আমেরিকান চেম্বার অব কমার্স ইন বাংলাদেশ (অ্যামচেম) আয়োজিত এক ভোজসভায় বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আতিউর রহমান এসব কথা বলেন। রাজধানীর বনানীর একটি হোটেলে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন অ্যামচেমের সভাপতি সৈয়দ এরশাদ আহমেদ।
আতিউর রহমান বলেন, বাংলাদেশের প্রায় ৭০ শতাংশ রপ্তানি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাণিজ্য–সুবিধা পেয়ে থাকে। এলডিসি থেকে বের হলে তা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। দেশের ৯৩ শতাংশ উৎপাদনে নিম্ন পর্যায়ের প্রযুক্তি ব্যবহৃত হয়।
আতিউর রহমানের মতে, ডলারের বিনিময় হার বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে দেরি হয়েছে। এক বছর আগেই এ সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত ছিল। উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে মানুষ এখন ভোগ কমিয়ে দিয়েছে। বাংলাদেশের ৭৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধি আসে ভোগ থেকে। উচ্চ মূল্যস্ফীতি মানুষের ক্রয়ক্ষমতাও কমিয়ে দিচ্ছে।
আতিউর রহমান আরও বলেন, আর্থিক খাত নিয়ে কথা বলতে অস্বস্তি লাগে। আর্থিক খাতে বড় সংস্কার করতে হবে। আর্থিক খাত শক্তিশালী হলে ব্যবসায়ীদের আস্থা বাড়বে।
সভায় দেশের বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতি তুলে ধরেন অ্যামচেমের সভাপতি সৈয়দ এরশাদ আহমেদ। তিনি বলেন, বৈশ্বিক কারণে মূল্যস্ফীতি বাড়ছে, যা অর্থনীতির স্থিতিশীলতার জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। এতে সাধারণ মানুষ কষ্টে আছে। মূল্যস্ফীতি কমাতে বাংলাদেশ ব্যাংক চেষ্টা করছে। ডলার-সংকট কাটেনি। জ্বালানির চাহিদার সঙ্গে সরবরাহে অসামঞ্জস্য আছে।
অনুষ্ঠানে প্রথম পর্বের আলোচনায় ‘টেকসই প্রবৃদ্ধির জন্য বাংলাদেশের শ্রম পরিস্থিতির উন্নয়ন’ শীর্ষক গবেষণাপত্র তুলে ধরেন ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের (আইইউবি) অধ্যাপক মামুন হাবিব। তিনি দেশের শ্রম খাতের বিভিন্ন দিক উপস্থাপন করেন। তাতে শ্রমের সংজ্ঞা ও বিধিবিধানে পরিবর্তন আনার কথা বলা হয়। এ ছাড়া মজুরি হার পুনর্নির্ধারণে নতুন নীতি গ্রহণেরও সুপারিশ করেন তিনি।
অনুষ্ঠানে ঢাকার যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের লেবার অ্যাটাশে লীনা খান বলেন, জিএসপি সুবিধার জন্য বাংলাদেশের আবার আবেদন করা উচিত। এ ধরনের সুবিধা পেতে কিছু মান ঠিক করেছে যুক্তরাষ্ট্র।
আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) অনুষ্ঠান ব্যবস্থাপক (প্রোগ্রাম ম্যানেজার) নিরান রামজুথান বলেন, পাঁচ বছর পরপর মজুরি পুনর্নির্ধারণ করার সময়টি বেশ লম্বা। জীবনধারণের ভিত্তিতেই মজুরি নির্ধারণ করা উচিত।
প্রশ্নোত্তর পর্বে নিট পোশাক মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর সাবেক সভাপতি ফজলুল হক বলেন, জীবনধারণের ভিত্তিতে মজুরির কথা বলেন ক্রেতারা। মজুরি বাড়ানোর কথা বলেন তাঁরা। কিন্তু পণ্যের ন্যায্য দামের কথা তাঁরা বলেন না।