বাজারদর
মোটা মসুর ডাল কেজিতে আরও ১০ টাকা বেড়েছে
বাজারে অধিকাংশ নিত্যপণ্যের দাম এখন উচ্চ মূল্যে স্থিতিশীল। এ অবস্থায় ডালের মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় সাধারণ মানুষের কষ্ট আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে।
বাজারে প্রতিনিয়তই কোনো না কোনো নিত্যপণ্যের দাম ওঠানামা করছেই। এর মধ্যে তিন সপ্তাহ ধরে মোটা মসুর ডালের দাম বেড়েছে। খুচরায় কেজিপ্রতি দাম বেড়েছে ১০ টাকা। নিম্ন আয়ের মানুষ যখন মাছ, মাংস ও ডিমের মতো পণ্য কিনতে হাঁসফাঁস করছেন, তখন ডালের এই বাড়তি দাম তাঁদের সংসার খরচ আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে।
গতকাল রোববার রাজধানীর বিভিন্ন পাইকারি ও খুচরা বাজারের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, খুচরায় প্রতি কেজি মোটা দানার মসুর ডালের দাম ১০ টাকা বেড়েছে। সপ্তাহ তিনেক আগে একবার মোটা, মাঝারি ও চিকন দানার মসুর ডালের দাম খুচরা পর্যায়ে কেজিতে ৫ টাকা বেড়েছিল। এবার এক পদের মসুর ডালের দাম বাড়লেও অন্যান্য ডালের দামও কিছুটা বাড়তি দেখা গেছে। সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) বাজারদরের তালিকা বিশ্লেষণ করেও একই চিত্র মিলেছে। সংস্থাটির হিসাবে গত এক মাসের ব্যবধানে জাতভেদে মসুর ডালের দাম ৩ থেকে ৪ শতাংশের ওপরে বেড়েছে। টিসিবির হিসাব অবশ্য বাজারের সত্যিকারের দামের তুলনায় কম থাকে বলে অভিযোগ আছে।
রাজধানীর কারওয়ান বাজারের পাইকারি ডাল ব্যবসায়ী রব স্টোরের স্বত্বাধিকারী নাইম ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, মসুর ডালের দাম বেশ বেড়েছে। এর মধ্যে গত কয়েক দিনে নতুন করে বোল্ডার (মোটা দানা) মসুর ডালটার দাম আরও বেড়েছে। বেশি করে নিলে ১০৫ টাকা কেজি রাখা যায়। খুচরায় ১১০ টাকার নিচে দেওয়া যায় না। কিছুদিন ধরে সব ধরনের ডালের দাম একটু বাড়তির দিকে বলে জানান তিনি।
■ মোটা দানার মসুর ডালের কেজি ৯৫–১০০ টাকা থেকে বেড়ে ১০৫–১১০ টাকায় উঠেছে।
■ প্রতি কেজি মুগডাল ১০০–১৩০, মাষকলাই ১৬০–১৮০, ছোলার ডাল ৯০–১০০ ও অ্যাংকর ডাল ৭০–৭৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
বাজারে বিভিন্ন ডালের মধ্যে সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয় মসুর। তিন সপ্তাহ আগেও প্রতি কেজি মোটা দানার মসুর ডাল ৯৫ থেকে ১০০ টাকায় বিক্রি হয়েছিল। সেই ডালের কেজি এখন ১০৫ থেকে ১১০ টাকা। মাঝারি দানার মসুর ডালের কেজি এখন ১১৫ থেকে ১২০ টাকা। আর ভালো মানের অর্থাৎ সরু দানার মসুর ডালের কেজি ১৩৫ থেকে ১৪০ টাকা।
কারওয়ান বাজারে তেজগাঁও থেকে আসা ক্রেতা আলী হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, সব জিনিসের দাম সাধারণ ক্রেতাদের নাগালের বাইরে। মাছ-মাংসের ধারেকাছে যাওয়া যায় না। আলু ও ডিমের মতো পণ্যের দামও বেড়েছে। এখন বাড়ছে ডালের দাম। ডাল-ভাত খেতে গেলেও যদি হিসাব করতে হয়, তাহলে আর কিছু বলার থাকে না। বাজারে এলে খুব অস্বস্তির মধ্যে পড়তে হয়।
খোলা মসুর ডালের পাশাপাশি সুপারশপ বা বড় দোকানগুলোয় বিভিন্ন ব্র্যান্ডের প্যাকেটজাত ডাল পাওয়া যায়। এ ধরনের প্রতি কেজি প্যাকেটজাত মসুর ডাল ১৪৫ থেকে ১৭০ টাকা দরে বিক্রি হয়।
এদিকে বাজারে মানভেদে মুগডাল বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে ১৩০ টাকায়। ‘শৌখিন ডাল’খ্যাত মাষকলাইয়ের দামই সবচেয়ে বেশি। প্রতি কেজি মাষকলাই ডালের দাম এখন ১৬০ থেকে ১৮০ টাকা। ছোলার ডাল মানভেদে বিক্রি হচ্ছে ৯০ থেকে ১০০ টাকা কেজি। ছোলার ডালের দামও কেজিতে ১০ টাকা বেড়েছে। আর নিম্ন আয়ের মানুষের ডাল হিসেবে পরিচিত অ্যাংকর ডালের দাম পড়ছে প্রতি কেজি ৭০ থেকে ৭৫ টাকা।
আমদানিকারকেরা বলছেন, ডাল আমদানিতে ঋণপত্র (এলসি) খোলার ব্যয় বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে বাজারে ডালের দাম আগেই বেড়েছিল। এখন নতুন করে আমদানি ব্যয় বেড়েছে। তাতে মসুর ডালের দাম একটু বাড়তির দিকে। এ অবস্থায় বাজারে বড় কোনো সংকট তৈরি হওয়ার আগে এলসি খোলার জটিলতা নিরসন করা দরকার। ডলারের বাজার নতুন করে অস্থির হওয়ায় আমদানিকারকেরা এলসি খুলতে জটিলতায় পড়ছেন বলে অভিযোগ করছেন।
পুরান ঢাকার ডাল আমদানিকারক ও বাংলাদেশ ডাল ব্যবসায়ী সমিতির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহিদ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, বিশ্ববাজারে ডালের দাম একটু বেশি। তাতে আমদানি খরচ বেড়েছে। আর আমদানি ঋণপত্র খোলা নিয়ে জটিলতা এখনো কমেনি। ব্যাংকে গেলে ডলার পেতে সমস্যা হচ্ছে। এই সমস্যা সমাধানে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের প্রতি দাবি জানান এই ব্যবসায়ী নেতা।
দেশে সাধারণত অস্ট্রেলিয়া, কানাডা ও নেপাল থেকে বিভিন্ন ধরনের ডাল আমদানি হয়ে থাকে। সাম্প্রতিক সময়ে ভারত থেকেও ডাল আমদানি শুরু হয়েছে। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) দেশভিত্তিক কৃষিপণ্য উৎপাদনের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, স্বাধীনতার পর দেশে মসুর ডালের উৎপাদনে বাংলাদেশ বিশ্বের শীর্ষ দশে থাকলেও পরে পিছিয়ে পড়ে। অবশ্য এখন আবার যুক্তরাষ্ট্র, ইথিওপিয়া, রাশিয়া ও চীনকে পেছনে ফেলে বাংলাদেশ ষষ্ঠ অবস্থানে উঠেছে।