নিত্যপণ্য এখন বিলাসি পণ্যে পরিণত হয়েছে: সিপিডি
এ দেশে ধনীদের চালের চেয়ে গরিবের চালের দাম বেশি বেড়েছে। গত সাড়ে পাঁচ বছরে মোটা চালের দাম বেড়েছে ৩০ শতাংশ। ২০১৯ সালের জানুয়ারি মাসে যে মোটা চালের দাম ছিল কেজিপ্রতি ৪০ টাকা, গত মে মাসে তা বিক্রি হয়েছে ৫২ টাকায়। একই সময়ে অপেক্ষাকৃত বেশি মূল্যের মিনিকেট ও পাইজাম চালের দাম বেড়েছে যথাক্রমে ১৭ ও ১৮ শতাংশ। এই দুটি চাল এখন কেজিপ্রতি বিক্রি হচ্ছে ৬৮ টাকা ও ৫৫ টাকায়।
আজ রোববার বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) বাংলাদেশের অর্থনীতির হালনাগাদ পরিস্থিতি নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করে। সেখানে চালের দামের এই চিত্র দেওয়া হয়েছে। ঢাকায় সিপিডির কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন প্রতিষ্ঠানটির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম।
খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম জানান, থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনামের চেয়ে বাংলাদেশে চালের দাম বেশি। তিনি বলেন, মূল্যস্ফীতি সহনশীল পর্যায়ে রাখতে না পারা সরকারের বড় ব্যর্থতা। নিত্যপণ্য এখন বিলাসি পণ্যে পরিণত হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে ২০১৯ সালের জানুয়ারি মাসের তুলনায় ২০২৪ সালের মে মাসে কয়েকটি নিত্যপণ্যের দাম কত বাড়ল, তার বিস্তারিত তুলে ধরা হয়। যেমন মসুর ডালের দাম ৯৫ শতাংশ বেড়েছে। ২০১৯ সালের জানুয়ারি মাসে এক কেজি মসুর ডালের (বড় দানা) দাম ছিল ৫৫ টাকা। এখন সেটি বিক্রি হচ্ছে ১০৮ টাকায়। প্যাকেটজাত আটার দাম কেজিপ্রতি ৫৪ শতাংশ বেড়ে ৫৩ টাকা হয়েছে। খোলা সয়াবিনের দাম লিটারপ্রতি ৮৪ শতাংশ বেড়ে উঠেছে ১৫০ টাকায়। একই সময়ে পাম তেলের দাম বেড়েছে ১০৬ শতাংশ। এখন পাম তেলের দাম প্রতি লিটারে ১৩০ টাকা।
সিপিডি আরও বলেছে, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলোর চেয়ে বাংলাদেশে বেশি দামে চিনি বিক্রি হচ্ছে। গত সাড়ে ৫ বছরে এর দাম ১৫২ শতাংশ বেড়েছে। এক কেজি চিনির দাম এখন ১৩০ টাকা। ইউরোপীয় ইউনিয়নে এক কেজি চিনির দাম বাংলাদেশি মুদ্রায় ৩৯ টাকা এবং যুক্তরাষ্ট্রে ৯৬ টাকা। এ ছাড়া গত সাড়ে পাঁচ বছরে গরুর মাংসের দাম ৫৮ শতাংশ ও ব্রয়লার মুরগির দাম ৫৯ শতাংশ বেড়েছে। পেঁয়াজের দাম বেড়েছে ১৬৪ শতাংশ।
খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, আমদানি শুল্ক কমিয়ে পণ্যে দাম কমানোর চেষ্টায় সুফল মিলছে না। শুল্ক কমানোর সুফল কিছু আমদানিকারক ব্যবসায়ী নিয়ে যাচ্ছেন। কতিপয় ব্যবসায়ীর মর্জির ওপর বাজার চলতে পারে না।
অনুষ্ঠানে উপস্থাপন করা মূল প্রবন্ধে ১৭টি দেশের মানুষের বার্ষিক মাথাপিছু জিডিপি এবং খাবারে পেছনে মাথাপিছু খরচের তুলনামূলক চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। সেখানে দেখা গেছে যে ওই ১৭ দেশের মধ্যে বাংলাদেশের মানুষের মাথাপিছু জিডিপি সবচেয়ে কম, ৭ হাজার ৮০৫ ডলার। এটি ২০২২ সালে ক্রয়ক্ষমতা সমতা (পিপিপি) অনুসারে ডলারের হিসাবে। অথচ ওই ১৭ দেশের মধ্যে সবচেয়ে বেশি মাথাপিছু খরচ করে বাংলাদেশে। এর পরিমাণ ৯২৪ ডলার। এই তালিকায় অন্য ১৬টি দেশ হলো ইরান, ভারত, লাওস, শ্রীলঙ্কা, উজবেকিস্তান, আলজেরিয়া, ভিয়েতনাম, তিউনিসিয়া, বলিভিয়া, মরক্কো, ইরাক, ইন্দোনেশিয়া, কলম্বিয়া, ব্রাজিল, জর্ডান ও দক্ষিণ আফ্রিকা।