বেবি তরমুজে আগ্রহ চাষিদের
ভোলার বোরহানউদ্দিন উপজেলার সাচড়া গ্রামের বর্গাচাষি শাহজল ভাওয়াল ২০ শতাংশ জমিতে সবজি চাষ করে সংসার চালাতেন। এবার সবজির সঙ্গে বারোমাসি ফল বেবি তরমুজের চাষ শুরু করেছেন তিনি। তাঁর তরমুজের খেত দেখতে আসেন আশপাশের বিভিন্ন গ্রামের চাষিরা। এ সময় তাঁরা শাহজলের কাছ থেকে লাভের কথা শুনে নিজেরাও বেবি তরমুজ চাষে আগ্রহ প্রকাশ করেন।
ভোলার বাজারে প্রথম যখন বেবি তরমুজ ওঠে, তখন তা ১৫০ টাকা কেজি বিক্রি হয়। এখন অবশ্য বিক্রি হচ্ছে ৭০-৮০ টাকা কেজি। তবে শহরের শপিং মলে বিক্রি হলে দাম আরও বেশি হতো বলে মনে করেন স্থানীয় ক্রেতা-বিক্রেতারা।
সরেজমিনে সম্প্রতি শাহজলের খেতে গিয়ে দেখা যায়, মাটি থেকে ১৫-২০ সেন্টিমিটার উঁচু লম্বা মাদা (বেড) তৈরি করে মালচিং পেপার (পলিথিনের মতো) দিয়ে শক্ত করে ঢেকে দেওয়া হয়েছে। চার হাত অন্তর একটি বেড। এভাবে ৮ শতাংশ জমিতে মোট ছয়টি বেড। এর ওপরে ছাউনির মতো ঘুরিয়ে মাচা দেওয়া হয়েছে। সেই মাচায় ঝুলে আছে ছোট-বড় কয়েক শ কালো তরমুজ। একটি তরমুজ কাটা হলো। বেশ রসাল ও সুমিষ্ট ফল। কচি অবস্থায় এটি তরকারি হিসেবেও রান্না করে খাওয়া যায়।
‘সুইট ব্ল্যাক’ বা কালো জাত ও নতুন ‘গোল্ডেন ক্রাউন’ বা হলুদ জাতের বারোমাসি বেবি তরমুজের আবাদ ভোলার কৃষকদের মধ্যে আশার সঞ্চার করছে।
শাহজল বলেন, গ্রামীণ জন-উন্নয়ন সংস্থার (জিজেইউএস) কৃষিবিদের সহযোগিতা ও পরামর্শে তিনি প্রথমবারের মতো বেবি তরমুজের আবাদ শুরু করেন। এটি চাষে শারীরিক পরিশ্রম ছাড়া তেমন কোনো খরচ হয়নি। প্রতিদিন এলাকার কৃষকেরা বেবি তরমুজের ফলন দেখতে এসে চাষপদ্ধতি জেনে যান। কেউ কেউ আবার কিনেও নেন। তিনি বাড়িতে বসেই ৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছেন। এখন তিনি দ্বিতীয়বার তরমুজ লাগানোর কথা ভাবছেন। কারণ, এটি লাভজনক।
সাচড়া গ্রামে শাহজলের মতো চান মিঞা ও মিতিল চৌধুরী ৮ শতাংশ করে জমিতে বেবি তরমুজ আবাদ করেন। মিতিল চৌধুরীর খেতে তরমুজ বিক্রির উপযোগী হয়েছে। চান মিঞার খেতের ফল বিক্রির উপযোগী হয়নি। তবে ব্যাপক ফল এসেছে।
চরফ্যাশন উপজেলার উত্তর মোঙ্গল গ্রামের মো. রুহুল আমিন কৃষি কর্মকর্তার পরামর্শে ৮ শতক জমিতে পরীক্ষামূলকভাবে বারোমাসি জাতের বেবি তরমুজের আবাদ করেছেন। কিন্তু অতিরিক্ত বৃষ্টিপাত ও জোয়ারের পানি ওঠায় দুই দফায় গাছ নষ্ট হয়। তৃতীয় দফায় আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় গাছগুলো টিকেছে এবং ফল এসেছে। এখন ফলন ভালো হওয়ার আশায় আছেন তিনি।
বিঘাপ্রতি সর্বোচ্চ ৪৫-৫০ হাজার টাকা খরচ হয়। ফল বিক্রি হতে পারে দুই থেকে আড়াই লাখ টাকা। কৃষকেরা এখন প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও পৃষ্ঠপোষকতা পেতে চান।
চাষিরা বলছেন, এই তরমুজ সারা বছর চাষ করা যায়। অল্প জমিতে অধিক ফলন হয়। লাভও ভালো পাওয়া যায়। তাই এটির আবাদ বাড়ানোর আগ্রহ তাঁদের। এ জন্য তাঁরা প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও পৃষ্ঠপোষকতা চান।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ কার্যালয়ের উপসহকারী উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা হুমায়ুন কবীর বলেন, বারোমাসি বেবি তরমুজ কৃষি খাতে এক অনন্য সংযোজন। আগে দেশে এই জাতের তরমুজ বিদেশ থেকে আমদানি হতো। সরকারি-বেসরকারি সমন্বিত প্রচেষ্টার ফলে উচ্চমূল্যের এই তরমুজ দেশেই উৎপাদিত হচ্ছে। ফলে কৃষকেরা অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হয়ে উঠবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
বেসরকারি সংস্থা গ্রামীণ জন-উন্নয়ন সংস্থার (জিজেইউএস) উপপরিচালক কৃষিবিদ আনিসুর রহমান বলেন, ১ বিঘা বা ৩৩ শতাংশ জমিতে এই তরমুজের আবাদ করতে সর্বোচ্চ ৪৫-৫০ হাজার টাকা খরচ হয়। ১ বিঘায় ১ হাজার ২০০ চারা বপন করা যায়। ৯০ থেকে ১০০ দিনে বিঘাপ্রতি সর্বনিম্ন ২ হাজার ৪০০ ফল (ওজনে ৫ থেকে সাড়ে ৫ মেট্রিক টন) উৎপাদন করা সম্ভব। সর্বনিম্ন ৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হলেও দুই থেকে আড়াই লাখ টাকা বিক্রি করা সম্ভব।
ভোলার সদর উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা মো. রিয়াজ উদ্দিন বলেন, জলাবদ্ধতা হয় না, এমন ধরনের উঁচু জমি এই বারোমাসি তরমুজ চাষের উপযোগী। ‘সুইট ব্ল্যাক’ বা কালো জাত ও নতুন ‘গোল্ডেন ক্রাউন’ বা হলুদ জাতের বারোমাসি বেবি তরমুজের আবাদ ভোলার কৃষকদের মধ্যে আশার সঞ্চার করছে।