করোনার ধাক্কা কেটেছে
বস্ত্র ব্যবসায় গতি ফিরেছে
গত এপ্রিল-অক্টোবর সময়ে সুতার রপ্তানি ৪৮ শতাংশ বেড়েছে। কাপড় রপ্তানি বেড়েছে ৩ দশমিক ৬২ শতাংশ।
বিটিএমএর সদস্যভুক্ত ৪৫০টি স্পিনিং, ৮৫০টি উইভিং এবং ১৭০টি ডাইং ও ফিনিশিং কারখানা রয়েছে। স্পিনিং মিল সুতা তৈরি করে। আর উইভিংয়ে সুতা থেকে কাপড়।
বস্ত্র খাতে মোট বিনিয়োগের পরিমাণ প্রায় ৭০ হাজার কোটি টাকা।
করোনার ধাক্কা সামলে ঘুরে দাঁড়িয়েছে দেশের বস্ত্র খাত। ক্রয়াদেশ বৃদ্ধি পাওয়ায় সুতা ও কাপড়ের রপ্তানি বেড়েছে। দেশের অভ্যন্তরেও বেচাবিক্রি বেড়েছে। কারখানায় গুদামে জমে থাকা পণ্যের স্তূপ আর নেই। এতে বস্ত্র খাতের উদ্যোক্তারা হাঁপ ছেড়ে বেঁচেছেন।
করোনাভাইরাস সংক্রমণের শুরুর দিকে একের পর এক ক্রয়াদেশ স্থগিত ও বাতিল হওয়ায় সুতা ও কাপড়ের রপ্তানি ব্যাপকভাবে কমে যায়। লকডাউনের কারণে পয়লা বৈশাখ ও ঈদের ব্যবসায় ধস নামে। অবশ্য দুই মাসের ব্যবধানে পরিস্থিতি বদলাতে শুরু করে। শেষ পর্যন্ত গত এপ্রিল-অক্টোবর সময়ে যে পরিমাণ সুতা ও কাপড় রপ্তানি হয়েছে, তা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে বেশি।
বস্ত্রকল ব্যবসায়ীরা বলছেন, বাংলাদেশের বস্ত্রকলের সুতার বড় প্রতিযোগী দেশ হচ্ছে ভারত। আর কাপড়ে চীন, ভারত, পাকিস্তানসহ অন্যান্য দেশ। লকডাউনের কারণে বিদেশ থেকে সুতা ও কাপড় আমদানির পরিমাণ ব্যাপকভাবে কমে গেলে দেশীয় বস্ত্রকল সেই ব্যবসা পেয়েছে। তাই করোনার কঠিন সময়ের মধ্যেও ঘুরে দাঁড়ানো তুলনামূলক সহজ হয়েছে।
বিটিএমএর সদস্যভুক্ত ৪৫০টি স্পিনিং, ৮৫০টি উইভিং এবং ১৭০টি ডাইং ও ফিনিশিং কারখানা রয়েছে। স্পিনিং মিল সুতা তৈরি করে। আর উইভিংয়ে সুতা থেকে কাপড়। বস্ত্র খাতে মোট বিনিয়োগের পরিমাণ প্রায় ৭০ হাজার কোটি টাকা। তাতে নিট পোশাকের প্রয়োজনীয় সুতার ৮০-৮৫ শতাংশ এবং ওভেন পোশাকের প্রয়োজনীয় কাপড়ের ৩৫-৪০ শতাংশ জোগান দিচ্ছে দেশীয় এই প্রতিষ্ঠানগুলো।
বস্ত্রকলমালিকদের সংগঠন বিটিএমএর তথ্যানুযায়ী গত এপ্রিলে মাত্র ১ হাজার ১০৯ কোটি টাকার সুতা রপ্তানি হয়। পরের মাসে সেটি একলাফে বেড়ে ৯ হাজার ৬৭১ কোটি টাকায় দাঁড়ায়। জুন ও জুলাইয়ে গড়ে দুই হাজার কোটি টাকার সুতা রপ্তানি হয়। আগস্টে একটু কমলেও সেপ্টেম্বর সুতা রপ্তানি ছিল আড়াই হাজার কোটি টাকার। সব মিলিয়ে এপ্রিল থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ৭ মাসে ২১ হাজার ৩৫৭ কোটি টাকার সুতা রপ্তানি হয়, যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৪৮ শতাংশ বেশি। গত বছরের এপ্রিল-অক্টোবর সময়ে ১৪ হাজার ৪৮৯ কোটি টাকার সুতা রপ্তানি হয়েছিল। একইভাবে এপ্রিলে ৮২২ কোটি টাকার কাপড় রপ্তানি হয়। পরের মাসে সেটি কমে ৫৮৫ কোটি টাকায় দাঁড়ায়। জুন থেকে রপ্তানি বৃদ্ধি পায়। সব মিলিয়ে এপ্রিল থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ৬ হাজার ৪০৭ কোটি টাকার কাপড় রপ্তানি হয়। এটি গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৩ দশমিক ৬২ শতাংশ বেশি। গত বছরের এপ্রিল-অক্টোবর সময়ে ৬ হাজার ১৮৩ কোটি টাকার কাপড় রপ্তানি হয়েছিল।
বস্ত্র খাতের স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠান বাদশা টেক্সটাইলে প্রতিদিন ২৭০ টন সুতা উৎপাদনের সক্ষমতা রয়েছে। যদিও ক্রেতাদের চাহিদা আরও বেশি। তাতে যা উৎপাদিত হচ্ছে, তার সবই প্রায় বিক্রি হয়ে যাচ্ছে। তাদের গুদামে বর্তমানে সুতার কোনো মজুত নেই।
জানতে চাইলে বাদশা টেক্সটাইলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বাদশা মিয়া গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, মাস দুয়েক আগে ভারতীয় সুতার দাম বেড়ে গেছে। সে কারণে পোশাক খাতে দেশীয় সুতার চাহিদা বেড়েছে। সব মিলিয়ে ব্যবসা ভালো যাচ্ছে। তবে করোনা সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউয়ের কারণে সাম্প্রতিক সময়ে কিছু ক্রয়াদেশ স্থগিত হয়েছে। শেষ পর্যন্ত নতুন করে করোনা বড় ধরনের বাগড়া না দিলে ব্যবসা আরও ভালো হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
নারায়ণগঞ্জের জালাল আহমেদ স্পিনিং মিল স্থানীয় বাজারে সুতা সরবরাহ করে। করোনার শুরুতে বেচাবিক্রি বন্ধ হওয়ায় বস্ত্রকলটিতে প্রায় ৮০ লাখ পাউন্ড সুতার স্টক জমে গিয়েছিল। তবে সেটি কমতে কমতে বর্তমানে ১৭-১৮ লাখ পাউন্ডে নেমেছে।
বিষয়টি নিশ্চিত করে প্রতিষ্ঠানটির ভাইস চেয়ারম্যান শাহীদ আলম প্রথম আলোকে বলেন, ‘করোনার কারণে এ বছর পয়লা বৈশাখ ও দুই ঈদের ব্যবসা আমরা হারিয়েছি। তবে গত দুই-তিন মাসের ভালো বেচাকেনার কারণে ব্যবসা অনেকটাই ঘুরে দাঁড়িয়েছে।’ বর্তমানে তুলার দাম বেড়ে যাওয়ায় কিছুটা সমস্যায় পড়তে হচ্ছে বলে জানান তিনি।
বিটিএমএর নেতারা জানান, করোনা সংক্রমণের শুরুর দিকে মার্চ ও এপ্রিলে রপ্তানিমুখী বস্ত্রকলের ১৪০ কোটি ডলারের ক্রয়াদেশ বাতিল বা স্থগিত হয়। তাতে ১১ হাজার ৯০০ কোটি টাকার রপ্তানি ক্ষতির মুখে পড়েছিল। অন্যদিকে পয়লা বৈশাখে ২ হাজার কোটি টাকা ও পবিত্র ঈদুল ফিতরে ১৮-২০ হাজার কোটি টাকার ব্যবসা হারায় স্থানীয় বস্ত্রকলগুলো।
জানতে চাইলে বিটিএমএ সভাপতি মোহাম্মদ আলী প্রথম আলোকে বলেন, ‘বস্ত্র খাত খুব ভালোভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছে। চলতি নভেম্বর মাসের ক্রয়াদেশ একটু শ্লথ হলেও টিকা আসার খবরে ক্রেতাদের সুর পাল্টে গেছে। ক্রয়াদেশে আবার গতি ফিরেছে।’ তিনি আরও বলেন, করোনা ধাক্কা কাটিয়ে আগস্ট থেকে ভালো ক্রয়াদেশ আসতে শুরু করে। সেপ্টেম্বর, অক্টোবর ও নভেম্বরে সেটি অব্যাহত আছে। রপ্তানিমুখী বস্ত্রকলের গুদামে বর্তমানে সুতা ও কাপড়ের কোনো স্টক নেই। দেশীয় বাজারের জন্য উৎপাদন করা মিলে কিছু স্টক থাকলেও তা মৌসুম পরিবর্তনের কারণে।