সাভার–গাজীপুরের ৪৪ কারখানা বন্ধ, লে–অফ ঘোষণা জনতা পাটকল
ঢাকার সাভার ও আশুলিয়া এবং গাজীপুর শিল্পাঞ্চলের সার্বিক পরিস্থিতি অনেকটাই স্বাভাবিক হয়েছে। আজ শনিবার পর্যন্ত এসব এলাকার অধিকাংশ তৈরি পোশাক কারখানা চালু হয়েছে। শ্রমিকেরাও কাজে যোগ দিয়েছেন। পোশাকের বাইরে ওষুধ কারখানায়ও শ্রমিক অসন্তোষ নিয়ন্ত্রণে এসেছে। তবে গত বৃহস্পতিবার ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনার পর আকিজ–বশির গ্রুপের মালিকানাধীন নরসিংদীর জনতা পাটকলটি গতকাল লে–অফ ঘোষণা করা হয়।
শিল্প পুলিশ ও খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত কয়েক দিনে সাভার, আশুলিয়া ও গাজীপুরের যেসব এলাকায় শ্রমিক বিক্ষোভের ঘটনা ঘটেছে, সেসব এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। তাতে গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত এসব এলাকায় কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি।
৪৪ পোশাক কারখানায় ছুটি
আশুলিয়ার শিল্পাঞ্চল পুলিশ সূত্র জানায়, সাভার-আশুলিয়া এলাকায় আজ কয়েকটি কারখানার শ্রমিকেরা কাজ বন্ধ করে দেন। পরে ওই কারখানাগুলো ছুটি দিয়ে দেয় কর্তৃপক্ষ। ছুটির বিষয়টি জানাজানি হলে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার আশঙ্কায় আশপাশের আরও কয়েকটি কারখানা ছুটি দিয়ে দেওয়া হয়।
আশুলিয়া শিল্পাঞ্চল পুলিশ–১–এর পুলিশ সুপার (এসপি) মোহাম্মদ সারোয়ার আলম জানান, আজ আশুলিয়ার কয়েকটি কারখানার সামনে থেকে সন্দেহভাজন তিনজনকে আটক করা হয়েছে। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ চলছে।
অন্যদিকে গাজীপুরের বেশির ভাগ কারখানা গতকাল থেকে উৎপাদনে ফিরেছে। গাজীপুর শিল্প পুলিশ সূত্র জানায়, গাজীপুরের শ্রীপুরে একটি পোশাক কারখানায় শ্রমিকেরা গত মাসের বেতনের দাবিতে কর্মবিরতি পালন করেন।
পোশাকশিল্পের মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ জানায়, গতকাল পর্যন্ত সারা দেশের ৯৮ শতাংশ কারখানা চালু ছিল। তবে সাভার, আশুলিয়া ও ধামরাই এলাকার ৪৩টি ও গাজীপুরের একটি কারখানা বন্ধ ছিল। বিজিএমইএর জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি আবদুল্লাহ হিল রাকিব প্রথম আলোকে বলেন, আজ পর্যন্ত পরিস্থিতির বেশ উন্নতি হয়েছে। তাতে বেশির ভাগ কারখানা উৎপাদনে ফিরেছে।
তবে শ্রমিকনেতা বাবুল আখতার জানান, ছয় থেকে সাতটি কারখানায় কর্মরত শ্রমিকদের বকেয়া বেতন–ভাতা ও অন্য দাবিদাওয়ার কারণে আশুলিয়ার পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে না। এসব কারখানার শ্রমিকদের সঙ্গে আলোচনা করে আইনসম্মত দাবি মানার বিষয়ে সরকার ও বিজিএমইএর নেতাদের দায়িত্ব নিতে হবে।
ওষুধ খাতও স্বাভাবিক হচ্ছে
গত কয়েক দিনে দেশের ওষুধশিল্পের খাতেও বেশ অস্থিরতা তৈরি হয়। এ সময় বিভিন্ন দাবিদাওয়া নিয়ে শ্রমিকেরা বিক্ষোভ করেন। তাতে দেশের শীর্ষস্থানীয় বেশ কয়েকটি ওষুধ কারখানার উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়। তবে পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ায় বেশির ভাগ কারখানা উৎপাদনে ফিরেছে বলে জানিয়েছেন এ খাতের উদ্যোক্তারা।
বাংলাদেশ ঔষধ শিল্প সমিতি (বিএপিআই) সূত্রে জানা গেছে, শ্রমিকদের সঙ্গে আলোচনার পর গত শুক্র ও শনিবার থেকে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক কারখানায় উৎপাদন শুরু হয়েছে। অবশ্য কিছু কারখানায় গত দুই দিন সাপ্তাহিক ছুটি ছিল। আর বাকি কারখানাগুলো আগামীকাল থেকে উৎপাদনে যাবে।
তবে শ্রমিকদের সঙ্গে সমস্যার সমাধান না হওয়ায় আরও দুদিন কারখানা বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে হেলথ কেয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস। প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মুহাম্মদ হালিমুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা শ্রমিকদের কাছে তাদের দাবিগুলো পুনর্বিবেচনার অনুরোধ করেছি। তারা এ জন্য কিছুটা সময় নিয়েছে। আশা করছি, সোমবারের মধ্যে একটা সমাধানে যেতে পারব।’
জনতা পাটকল বন্ধ
গত বৃহস্পতিবার রাতে নরসিংদীর পলাশ উপজেলায় আকিজ-বশির গ্রুপের মালিকানাধীন দেশের বৃহত্তম জনতা পাটকলে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনার পরে আজ থেকে দেশের পাটকলটি লে–অফ ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ। কারখানাটিতে প্রায় সাড়ে সাত হাজার শ্রমিক কাজ করেন।
জানা গেছে, বিক্ষুব্ধ শ্রমিকেরা পাটকলের প্রশাসনিক ভবন, লেবার অফিস, নিরাপত্তা কার্যালয় ও গেস্টহাউসে ব্যাপক ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করেন। পাশাপাশি শ্রমিকদের মজুরির প্রায় ৫০ লাখ টাকা লুট করেন। এ সময় বাধা দিতে গিয়ে আহত হন পাটকলটির ছয় নিরাপত্তাকর্মী। এ ঘটনায় একটি মামলা হয়েছে।
জনতা পাটকলের প্রধান নির্বাহী হেলাল আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন,বর্তমানে কোনোভাবেই কারখানা চালানোর বাস্তবতা নেই। এ জন্য আমরা লে–অফ ঘোষণা করেছি। কবে নাগাদ কারখানা চালু হবে, তা এই মুহূর্তে বলা যাচ্ছে না।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করেছেন প্রথম আলোর নিজস্ব প্রতিবেদক, সাভার ও প্রতিনিধি, গাজীপুর]