বৈশ্বিক কর্মসংস্থান গত বছর অনেকটাই স্থবির ছিল। সে কারণে বিশ্বব্যাপী বেকারত্ব স্থির ছিল ৫ শতাংশে। তবে তরুণ বেকারত্বে সামান্য উন্নতি হয়ে তা ১২ দশমিক ৬ শতাংশ হয়েছে। বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্থর গতির কারণে শ্রমবাজারের সম্পূর্ণ পুনরুদ্ধার কঠিন হয়ে পড়েছে।
আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য উঠে এসেছে। সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় আইএলওর সদর দপ্তর থেকে গত বৃহস্পতিবার ‘বৈশ্বিক কর্মসংস্থান ও সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি ২০২৫’ শীর্ষক প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়।
আইএলওর প্রতিবেদনে বাংলাদেশ প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, এ দেশে বেকারত্বের বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে তরুণ-তরুণীরা, বিশেষ করে তরুণীরা। উৎপাদনশীলতার ক্ষেত্রে তারা তুলনামূলক বেশি পিছিয়ে, যা অর্থনৈতিক অগ্রগতি ও সামাজিক সুবিচার ব্যাহত করছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, মূলত ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনা, জলবায়ু পরিবর্তনের ক্রমবর্ধমান ব্যয় ও অমীমাংসিত ঋণ সমস্যা শ্রমবাজারের ওপর চাপ সৃষ্টি করছে। বিশ্বব্যাপী কাজের ইচ্ছা ও সুযোগের ব্যবধান, অর্থাৎ কেউ কাজ করতে চায় তবে পাচ্ছে না—এমন মানুষের সংখ্যা ৪০ কোটি ২০ লাখে পৌঁছেছে। এর মধ্যে ১৮ কোটি ৬০ লাখ বেকার। ১৩ কোটি ৭০ লাখ পছন্দসই কাজ না পেয়ে করতে আগ্রহী নয়। এ ছাড়া ৭ কোটি ৯০ লাখ মানুষ যারা কাজ করতে চাইলেও পারিবারিক দায়িত্বের কারণে চাকরি করতে পারে না।
প্রতিবেদনের তথ্যানুযায়ী, নিম্ন আয়ের দেশগুলোতে শ্রমশক্তিতে অংশগ্রহণের হার কমছে। তবে উচ্চ আয়ের দেশগুলোতে এই হার বাড়ছে, বিশেষ করে বয়স্ক কর্মী ও নারীদের মধ্যে। তবু লিঙ্গবৈষম্য এখনো প্রকট। কর্মক্ষেত্রে নারীদের কম অংশগ্রহণ জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে।
প্রতিবেদনে বাংলাদেশ প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের কর্মক্ষম জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেক শ্রমবাজারের বাইরে রয়েছে। তার চেয়ে উদ্বেগজনক হচ্ছে, কোনো রকম কর্মসংস্থান, শিক্ষা ও প্রশিক্ষণে নেই (এনইইটি) ৩০ দশমিক ৯ শতাংশ মানুষ। সেখানে পুরুষের হার ১১ দশমিক ১ শতাংশ আর নারী ৪৯ দশমিক ৩ শতাংশ।
বাংলাদেশে শ্রমশক্তিতে অংশগ্রহণের হার সাড়ে ৪৯ শতাংশ। এই জনশক্তির মধ্যে আবার নারী-পুরুষ বৈষম্যও প্রকট। মোট শ্রমশক্তিতে পুরুষের অংশগ্রহণ সাড়ে ৭৮ শতাংশ। বাকি ২১ দশমিক ২৫ শতাংশ নারী।
প্রতিবেদন প্রকাশ উপলক্ষে আইএলওর কান্ট্রি ডিরেক্টর টুমো পৌটিয়াইনেন এক বিবৃতিতে বলেন, বাংলাদেশকে অন্তর্ভুক্তিমূলক ও টেকসই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন এবং মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করতে সক্রিয় শ্রমবাজার নীতি গ্রহণ করতে হবে। বিশেষ করে, তরুণ, নারী ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য শোভন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টিকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। দক্ষতা উন্নয়ন, তরুণদের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি এবং আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী শ্রমবাজারের সুশাসনের ওপর জোর দেন তিনি।