২০২৪ সালে কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনায় ৭০৭ ও নির্যাতনে ১১৩ শ্রমিক নিহত: বিলসের জরিপ
২০২৪ সালে ৮২০ জন শ্রমিক নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ২৯২ জন। নিহত শ্রমিকদের মধ্যে কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনায় মারা গেছেন ৭০৭ জন। আর কর্মক্ষেত্রে নির্যাতনের শিকার হয়ে মারা গেছেন ১১৩ জন। যদিও গত বছর কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনা ও নির্যাতনে ৮৯৫ জন নিহত হয়েছিলেন।
দেশের বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত সংবাদের ওপর ভিত্তি করে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজের (বিলস) তৈরি করা এক প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে এসেছে। ‘বাংলাদেশের শ্রম ও কর্মক্ষেত্র পরিস্থিতি বিষয়ে সংবাদপত্রভিত্তিক বিলস জরিপ-২০২৪’ শীর্ষক প্রতিবেদনটি ১৩টি জাতীয় দৈনিকে ১ জানুয়ারি থেকে ১৫ ডিসেম্বর ২০২৪ পর্যন্ত কর্মক্ষেত্র ও কর্মক্ষেত্রের বাইরে দুর্ঘটনা এবং নির্যাতনসংশ্লিষ্ট সংবাদ বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে। আজ মঙ্গলবার বিলসের পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টি জানানো হয়েছে।
বিলসের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৪ সালে কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনায় নিহত হওয়া ৭০৭ জন শ্রমিকের মধ্যে ৭০৫ জন পুরুষ ও ২ জন নারী শ্রমিক। সবচেয়ে বেশি পরিবহন খাতে—২৭৩ জন শ্রমিকের মৃত্যু হয়। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১০২ জন শ্রমিকের মৃত্যু হয় কৃষি খাতে। তৃতীয় সর্বোচ্চ ৯১ জন শ্রমিকের মৃত্যু হয় নির্মাণ খাতে। এ ছাড়া রিকশাশ্রমিক ৪৩ জন, প্রবাসী শ্রমিক ৩৮, দিনমজুর ৩২, বিদ্যুৎ খাতে ২২, মৎস্যশ্রমিক ১৯, জাহাজভাঙা শিল্প ৯, স্টিল মিলে ৯, নৌপরিবহন খাতে ৮, অক্সিজেন কারখানায় ৭, ম্যানুফ্যাকচারিংয়ে ৬, হোটেল-রেস্টুরেন্টে ৫, রাইস মিলে ৫, ওয়েল্ডিং ওয়ার্কশপে ৫, দোকানে ৫ কর্মচারী এবং অন্যান্য খাতে ২৭ জন শ্রমিক মারা যান।
২০২৪ সালে কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনায় ২৯২ জন শ্রমিক আহত হন। এর মধ্যে ২৯২ জনই পুরুষ শ্রমিক। সর্বোচ্চ ৪৭ জন মৎস্যশ্রমিক আহত হয়েছেন। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পরিবহন খাতে ৪১ জন আহত হন। তৃতীয় সর্বোচ্চ নির্মাণ খাতে ২৭ জন শ্রমিক আহত হন। এ ছাড়া ৫৫ জন শ্রমিক প্রাকৃতিক দুর্যোগে নিখোঁজ হন, যার মধ্যে অধিকাংশই মৎস্যশ্রমিক।
কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনার অন্যতম কারণগুলো হচ্ছে সড়ক দুর্ঘটনা, দেয়াল বা ছাদ ধসে পড়া, বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হওয়া, অগ্নিকাণ্ড, সিলিন্ডার বিস্ফোরণ, বজ্রপাত, বিষাক্ত গ্যাস, নৌদুর্ঘটনা, উঁচু স্থান থেকে পড়ে যাওয়া, পড়ন্ত বস্তুর আঘাত, বিস্ফোরণ ইত্যাদি।
২০২৪ সালে কর্মক্ষেত্রে নির্যাতনের শিকার হন ২২৯ জন শ্রমিক। এর মধ্যে ১১৩ জন নিহত, ১০০ জন আহত ও ১৫ জন নিখোঁজ হয়েছেন। একজন আত্মহত্যা করেছেন। নির্যাতিত শ্রমিকদের শ্রমিকদের মধ্যে ১৯৩ জন পুরুষ এবং ৩৬ জন নারী।
সবচেয়ে বেশি নির্যাতনের শিকার হয়েছেন অটোরিকশাশ্রমিক—৪৪ জন। তাঁদের মধ্যে ৪৩ জন মারা যান। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৩৫ জন শ্রমিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন তৈরি পোশাক খাতে, যার মধ্যে ৫ জন নিহত, ২৯ জন আহত ও একজন আত্মহত্যা করেন। তৃতীয় সর্বোচ্চ ২৫ জন পরিবহন খাতে, যার মধ্যে ২০ জন নিহত, ৪ জন আহত এবং ১ জন নিখোঁজ হয়েছেন। এ ছাড়া ২০ জন নিরাপত্তাকর্মী নির্যাতনের শিকার হন, যার মধ্যে ১২ জন নিহত ও ৮ জন আহত। কর্মক্ষেত্রে নির্যাতনের ধরনের মধ্যে রয়েছে শারীরিক নির্যাতন, ধর্ষণ, ছুরিকাঘাত, খুন, অপহরণ, মারধর ইত্যাদি।
প্রসঙ্গত, ২০২৩ সালে কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনায় ৭৪২ জন শ্রমিকের মৃত্যু হয় এবং আহত হন ৪৮৯ জন শ্রমিক। নিহত শ্রমিকদের মধ্যে ৭৩৯ জন পুরুষ এবং ৩ জন নারী শ্রমিক ছিলেন। অন্যদিকে গত বছর ৩০১ জন শ্রমিক কর্মক্ষেত্রে নির্যাতনের শিকার হন। এর মধ্যে ২৭৩ জন পুরুষ এবং ২৮ জন নারী শ্রমিক।