বিশ্বব্যাপী সিনথেটিক, রবার, প্লাস্টিক, কাপড়সহ বিভিন্ন ধরনের উপকরণে তৈরি চামড়াবিহীন জুতা দ্রুতই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। মূলত দামে সস্তা, টেকসই ও ফ্যাশনেবল হওয়ায় এ ধরনের জুতার বাজার বড় হচ্ছে। তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাংলাদেশ থেকে চামড়াবিহীন জুতা রপ্তানিও প্রতিবছর বাড়ছিল। কিন্তু চলতি অর্থবছরে এসে হঠাৎ সম্ভাবনাময় এই পণ্যের রপ্তানি কমে গেছে।
চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) ২৪ কোটি ৬১ লাখ ডলারের চামড়াবিহীন জুতা রপ্তানি হয়। এই রপ্তানি আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ১ দশমিক ৮৫ শতাংশ কম। ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথমার্ধে ২৫ কোটি ৮ লাখ ডলারের চামড়াবিহীন জুতা রপ্তানি হয়েছিল।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, বাংলাদেশ থেকে চামড়াবিহীন জুতা রপ্তানির সিংহভাগই যায় ইউরোপীয় ইউনিয়নে (ইইউ)। উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে ইউরোপের মানুষ খুব প্রয়োজন নয়, এমন জিনিসপত্র কেনাকাটা কমিয়ে দিয়েছে। তাতে বিক্রয়কেন্দ্রগুলোতে পণ্যের মজুত জমেছে। সে জন্য ক্রয়াদেশ কমিয়ে দিয়েছে ইইউর ব্র্যান্ড ও ক্রেতাপ্রতিষ্ঠানগুলোও।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্যানুযায়ী, চামড়াবিহীন জুতা রপ্তানি গত পাঁচ বছরে পৌনে দুই গুণ বেড়েছে। করোনার আগে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে এ ধরনের জুতা রপ্তানি ছিল ২৭ কোটি ডলার। করোনার বছরও রপ্তানি সামান্য বেড়েছিল। ২০২০-২১ অর্থবছরে এই পণ্যের রপ্তানি বেড়ে হয় ৩৪ কোটি ডলার। পরের বছর চামড়াবিহীন জুতার রপ্তানি ১০ কোটি ডলার বাড়ে। আর গত অর্থবছর তা বেড়ে ৪৭ কোটি ৮৯ লাখ ডলারে দাঁড়ায়।
চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে চামড়াবিহীন জুতার পাশাপাশি চামড়ার জুতা রপ্তানিও কমেছে। গত জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ছয় মাসে ২৫ কোটি ৭৯ লাখ ডলারের চামড়ার জুতা রপ্তানি হয়। গত অর্থবছরের একই সময়ে রপ্তানি হয়েছিল ৩৮ কোটি ৩৩ লাখ ডলারের চামড়ার জুতা। তার মানে চলতি অর্থবছরের প্রথমার্ধে চামড়ার জুতা রপ্তানি কমেছে ৩২ দশমিক ৭২ শতাংশ।
ওয়ার্ল্ড ফুটওয়্যারের তথ্যানুযায়ী, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ২০২২ সালে ২ হাজার ৩৯০ কোটি জোড়া জুতা উৎপাদিত হয়েছে। তার মধ্যে রপ্তানি হয়েছে ১ হাজার ৫২০ কোটি জোড়া। ২০২১ সালের তুলনায় ২০২২ সালে জুতা রপ্তানি ৯ শতাংশ বেড়েছে। আর রপ্তানি হওয়ার জুতার বড় অংশই চামড়াবিহীন। বিদায়ী বছরের জুতা উৎপাদন ও রপ্তানির তথ্য এখনো প্রকাশ করেনি সংস্থাটি।
জুতা রপ্তানিতে চীন সবার ওপরে। বিশ্বে মোট জুতা রপ্তানির ৬০ শতাংশ করে দেশটি। ২০২২ সালে চীন ৯৩১ কোটি জোড়া জুতা রপ্তানি করেছে। ভিয়েতনাম ১৫০ কোটি জোড়া, ইন্দোনেশিয়া ৫৩, তুরস্ক ৩৮, জার্মানি ৩৮, ভারত ২৯, বেলজিয়াম ২৪, ইতালি ২২, নেদারল্যান্ডস ২১ এবং কম্বোডিয়া ১৯ কোটি জোড়া জুতা রপ্তানি করেছে।
দেশে চামড়াবিহীন জুতা রপ্তানির জন্য ময়মনসিংহের ভালুকায় পরিবেশবান্ধব কারখানা গড়ে তুলেছে ন্যাশনাল পলিমার গ্রুপের শুনিভার্স ফুটওয়্যার। কারখানাটিতে দৈনিক সাড়ে ৮ হাজার জোড়া জুতা উৎপাদনের সক্ষমতা রয়েছে। শুনিভার্সে কাজ করেন ১ হাজার ২০০ শ্রমিক।
রপ্তানিতে সম্ভাবনা থাকায় কারখানা সম্প্রসারণের উদ্যোগ নিয়েছে শুনিভার্স ফুটওয়্যার কর্তৃপক্ষ। তাতে আগামী মার্চ থেকে তাদের দৈনিক উৎপাদন সক্ষমতা বেড়ে দাঁড়াবে ২০ হাজার জোড়া। বর্তমানে কারখানাটিতে কাজ করেন দেড় হাজার কর্মী। মার্চের পর সেই সংখ্যা বেড়ে দ্বিগুণ হয়ে যাবে।
শুনিভার্স ফুটওয়্যারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রিয়াদ মাহমুদ গতকাল শনিবার প্রথম আলোকে বলেন, বাংলাদেশি কোম্পানিগুলো মূলত ইউরোপের বাজারে চামড়াবিহীন জুতা রপ্তানি করে। উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে সেখানকার ক্রেতাপ্রতিষ্ঠান ক্রয়াদেশ কমিয়ে দিয়েছে। তার প্রভাবেই মূলত রপ্তানি কিছুটা কমেছে।
রিয়াদ মাহমুদ আরও বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে প্রবেশ করতে পারলে আমাদের চামড়াবিহীন জুতার রপ্তানি অনেক বাড়ানো সম্ভব। তবে সেখানকার ক্রেতাপ্রতিষ্ঠান একসঙ্গে বড় অঙ্কের ক্রয়াদেশ দেয়। কম সময়ের মধ্যে সরবরাহ করার বাধ্যবাধকতাও থাকে। বড় বিনিয়োগ করলেই শুধু এই বাজারে ভালো করা সম্ভব।’