১৫ মাসে ১৯টি বাণিজ্য সংগঠনের নিবন্ধন বাতিল
বিধিবিধান না মানায় একের পর এক বাণিজ্য সংগঠনের নিবন্ধন (লাইসেন্স) বাতিল হয়ে যাচ্ছে। মাসে বাতিল হচ্ছে অন্তত একটি সংগঠনের নিবন্ধন। কোনো কোনো মাসে বেশিও বাতিল হচ্ছে। এভাবে গত ১৫ মাসে বিভিন্ন খাতের ১৯টি বাণিজ্য সংগঠনের নিবন্ধন বাতিল হয়েছে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বিভিন্ন সময়ে এসব সংগঠনকে বাণিজ্য সংগঠন (টিও) হিসেবে নিবন্ধন দিয়েছিল। কিন্তু কোনো কার্যক্রম না থাকায় এবং নিয়মকানুন না মানায় এগুলোকে সুপ্ত বাণিজ্য সংগঠন হিসেবে বিবেচনা করে তাদের লাইসেন্স বাতিল করা হয়।
ঠিকঠাকভাবে পরিচালিত না হলে আরও বাণিজ্য সংগঠনের লাইসেন্স বাতিল হতে পারে।তপন কান্তি ঘোষ, বাণিজ্যসচিব
বাণিজ্য সংগঠন অধ্যাদেশ, ১৯৬১ অনুযায়ী, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন পরিচালক বাণিজ্য সংগঠন (ডিটিও) দেশের চেম্বার, অ্যাসোসিয়েশন ও মালিক সমিতিগুলোকে লাইসেন্স বা নিবন্ধন দেয়। বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশনসহ (এফবিসিসিআই) সব ধরনের অ্যাসোসিয়েশন ও চেম্বারকে কার্যক্রম পরিচালনা করতে টিও নিবন্ধন নিতে হয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকেই। গত বছর ওই অধ্যাদেশ বাতিল করে সরকার নতুন বাণিজ্য সংগঠন আইন প্রণয়ন করে।
বাণিজ্যসচিব তপন কান্তি ঘোষ প্রথম আলোকে বলেন, ঠিকঠাকভাবে পরিচালিত না হলে আরও বাণিজ্য সংগঠনের লাইসেন্স বাতিল হতে পারে।
মোটা দাগে তিন ধরনের বাণিজ্য সংগঠন রয়েছে। এগুলো হচ্ছে, বিদ্যমান ১৯৯৪ সালের কোম্পানি আইন অনুযায়ী সীমিত দায়ের কোম্পানি হিসেবে গঠিত প্রতিষ্ঠান; লাইসেন্স নিয়ে ও কোম্পানি আইনে নিবন্ধিত হয়ে বিভিন্ন ব্যবসা, শিল্প, বাণিজ্য ও সেবা খাতের প্রতিনিধিত্বকারী অরাজনৈতিক ও অলাভজনক সংগঠন এবং আয় বা মুনাফা কোনো সদস্য বা পরিচালনা পর্ষদের কেউ ভাগ করে নিতে পারবেন না—এমন প্রতিষ্ঠান।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে এ ধরনের সংগঠন রয়েছে ৮৭৭টি। এর মধ্যে শীর্ষ ব্যবসায়ী সংগঠন এফবিসিসিআই, ৪৪১টি অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ চেম্বার, ৭টি মেট্রো চেম্বার, ৬৪টি জেলা চেম্বার ও দুটি উপজেলা চেম্বার রয়েছে। আছে ১৯টি উইমেন চেম্বার, ৩৫টি জয়েন্ট চেম্বার, বিভিন্ন খাতের ১৫৩টি গ্রুপ বা সমিতি। এ ছাড়া কোম্পানি আইনের ২৮ ধারা অনুযায়ী রয়েছে ১৫৪টি সংগঠন।
লাইসেন্স নেওয়ার ছয় মাসের মধ্যে কার্যালয় স্থাপন না করলে, পরপর দুই বছর বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) না হলে এবং পরপর দুই বছর নিরীক্ষা প্রতিবেদন ও রিটার্ন দাখিল না করলে সংগঠনকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়ার কথা বলা আছে আইনে। নোটিশের জবাব সন্তোষজনক না হলে বাণিজ্য সংগঠন মহাপরিচালক ওই সংগঠনকে সুপ্ত বলে ঘোষণা করবেন এবং সংশোধনের সুযোগ দেবেন। তাতেও কোনো অগ্রগতি না হলে ওই সংগঠনের লাইসেন্স বাতিল করতে সরকারের কাছে সুপারিশ করবেন মহাপরিচালক।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সূত্রগুলো জানায়, যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে এবং যথেষ্ট সময় দিয়েও কোনো কাজ না হওয়ায় কিছু সংগঠনের লাইসেন্স বাতিল করা হয়েছে। বাতিলের পর কেউ কেউ অবশ্য ওই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আদালতে গেছেন।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এক বছরে যেসব বাণিজ্য সংগঠনের নিবন্ধন বাতিল করেছে, সেগুলো হচ্ছে—বাংলাদেশ টোব্যাকো প্রোডাক্টস পরিবেশক সমিতি; বাংলাদেশ উইভার্স প্রোডাক্টস অ্যান্ড ম্যানুফ্যাকচারার্স বিজনেস অ্যাসোসিয়েশন; বাংলাদেশ লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্স কোম্পানিজ অ্যাসোসিয়েশন; বাংলাদেশ মোটরসাইকেল ডিলারস অ্যাসোসিয়েশন; বাংলাদেশ ফটোগ্রাফিক অ্যাসোসিয়েশন; বাংলাদেশ সাইজিং মিলস অ্যাসোসিয়েশন; বাংলাদেশ ফিল্ম ইমপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন; বাংলাদেশ কনজুমার প্রোডাক্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড মার্কেটার্স অ্যাসোসিয়েশন; বাংলাদেশ ইনডিপেনডেন্ট পাওয়ার প্রডিউসারস অ্যাসোসিয়েশন; প্রাইভেট রেডিও ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ; বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন বিজনেস অ্যাসোসিয়েশন; বাংলাদেশ জুট এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন; বাংলাদেশ ফোম ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন; বাংলাদেশ রেডিমিক্স কংক্রিট অ্যাসোসিয়েশন; বাংলাদেশ পণ্য পরিবহন এজেন্সি মালিক সমিতি; বাংলাদেশ পুরোনো কাপড় আমদানিকারক সমিতি; বাংলাদেশ ম্যাচ ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন; বাংলাদেশ সিগারেট ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন এবং বাংলাদেশ রডেনটিসাইড, পেস্টিসাইড অ্যান্ড ইনসেক্টিসাইড অ্যাসোসিয়েশন।
জানতে চাইলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের একজন শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তা উদাহরণ হিসেবে সিগারেট প্রস্তুতকারী কোম্পানিগুলোর সংগঠন বাংলাদেশ সিগারেট ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের লাইসেন্স বাতিলের কারণগুলো তুলে ধরেন। তিনি জানান, ২০০১ সালের ২৪ এপ্রিল অ্যাসোসিয়েশনটি টিও লাইসেন্স পেলেও ২০ বছর ধরে কাগজপত্র জমা দেয়নি। সংগঠনটি ২০০১-০২ সালের বার্ষিক সাধারণ সভার (এজিএম) কার্যবিবরণী ও নিরীক্ষা প্রতিবেদন মন্ত্রণালয়ে দাখিল করেছিল।
এরপর আর কিছুই দাখিল করেনি। এ সংগঠন নির্বাচন করার কাগজপত্রও সর্বশেষ দাখিল করেছিল ২০০৩-০৫ সময়ে। এরপর থেকে এ অ্যাসোসিয়েশন আর কোনো হালনাগাদ কাগজপত্র দাখিল করেনি। এ ছাড়া সংগঠনটির ঠিকানায় কোনো অফিস নেই, চিঠি পাঠালেও তা ফেরত আসে। সব ধাপ অনুসরণ করে গত বছরের ২৮ আগস্ট সংগঠনটির টিও লাইসেন্স বাতিল করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। সংগঠনগুলোর লাইসেন্স বাতিল হওয়ার কারণ প্রায় একই।
সুতা প্রক্রিয়াকারী সংগঠন বাংলাদেশ সাইজিং মিলস অ্যাসোসিয়েশনের নির্বাহী কমিটির সদস্য আমজাদ হোসেন ভূঁইয়া প্রথম আলোকে জানান, তাদের লাইসেন্স যে বাতিল হয়েছে তা তিনি জানেন না। এই সংগঠনে ১ হাজার ১০০টির মধ্যে ৫০০ কার্যকর সদস্য রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, লাইসেন্স বাতিল হয়ে থাকলে তা দুঃখজনক।