বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন বলেছেন, বিগত সরকারের সময় দেশে অপরিকল্পিত বিনিয়োগ হয়েছে। শিল্প খাতকে বাঁচাতে কৃষিতে ভর্তুকি দিতে হচ্ছে। প্রতি কেজি ৭০ থেকে ৮০ টাকায় সার কিনে তা ১৫ টাকায় বিক্রি করতে হচ্ছে। দেশে ক্রনি ক্যাপিটালিজম বা স্বজনতোষী পুঁজিবাদ জেঁকে বসেছিল। অর্থনীতিতে বৈচিত্র্য আসেনি।
আজ বুধবার চট্টগ্রামের একটি হোটেলে আয়োজিত আলোচনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাণিজ্য উপদেষ্টা এ মন্তব্য করেন। ইনস্টিটিউট অব কস্ট অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট অ্যাকাউন্টস অব বাংলাদেশের (আইসিএমএবি) চট্টগ্রাম শাখা ‘বাংলাদেশের বিকশিত অর্থনৈতিক পরিপ্রেক্ষিতে অভিগমন’ শীর্ষক এই আলোচনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
অনুষ্ঠানে বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন দেশের বিচার বিভাগসহ বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের চিত্র তুলে ধরেন। নেতৃত্বের ব্যর্থতাকে দায়ী করে তিনি বলেন, ‘২০০৭ সালে মাসদার হোসেন মামলার মাধ্যমে আমাদের বিচার বিভাগ স্বাধীন হলো। এ স্বাধীনতা আমাদের কতটুকু উপকার করেছে, এটা ভেবে দেখা দরকার।’
বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন, শ্বেতপত্রে এসেছে, ২৮ লাখ কোটি টাকা এ দেশ থেকে চুরি হয়েছে। এ জন্য কি ১০০ প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ও ৩০০ প্রধান আর্থিক কর্মকর্তা (সিএফও) দায়ী নন? এ প্রশ্ন তোলার এখনই সময়।
নৈতিকভাবে সবাইকে উঁচু অবস্থানে উঠতে হবে মন্তব্য করে শেখ বশিরউদ্দীন বলেন, ‘দেশটা আমাদের সন্তানদের জন্য গড়তে হবে। কিন্তু দেশের মধ্যে একটা সময় নানা কিছু ঘটল। যে বয়ানটা ছিল, সেটা আমরা বিশ্বাস করেছিলাম। আমরা অনেকেই নিশ্চুপ ছিলাম। কিন্তু কিছু বাচ্চা ছেলে প্রতিবাদ করল। পরে জনতাও যোগ দিল। পরিবর্তন এল। এখন আমরা যদি আবার গতানুগতিকভাবে একই জিনিসের চর্চা করি, দক্ষতার মূল্যায়ন না করি, তবে এটি গ্রহণযোগ্য হবে না।’
উপদেষ্টা বলেন, ‘গত ৫ আগস্টের আন্দোলন হলো, প্রায় দুই হাজার মানুষ প্রাণ দিয়েছেন, ৫০ হাজার মানুষ অসুস্থ হয়ে কাতরাচ্ছেন। তবু আমরা আগের অবস্থায় ফিরে যাচ্ছি। অনেক লোক আসছেন ফটোসেশন করতে। তাঁরা কেন ছবি তুলছেন, আমি বুঝি না। তাঁরা হয়তো বোঝানোর চেষ্টা করছেন, “আমার সঙ্গে উপদেষ্টার সম্পর্ক আছে।” এটার কোনো মূল্য নেই।’
বাণিজ্যসচিব মোহাং সেলিম উদ্দিন বলেন, ‘কস্ট ম্যানেজমেন্ট খাতে যে দেশ যত স্বচ্ছ, সে দেশ তত উন্নত। ’ তিনি প্রশ্ন তোলেন, একটি প্রতিষ্ঠান ২ হাজার কোটি টাকার সম্পদ দিয়ে কীভাবে ২৭ হাজার কোটি টাকা ঋণ পায়? ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কস্ট ম্যানেজমেন্ট-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা নিজেদের দায়িত্ব কি সঠিকভাবে পালন করেছেন?
বাণিজ্যসচিব আরও বলেন, ‘আমরা যদি বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানি, বন্দরসুবিধা এবং সড়ক যোগাযোগব্যবস্থায় নিরবচ্ছিন্ন সুবিধা দিতে না পারি, তাহলে স্থানীয় বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগ করবেন না। আর তাঁরা না করলে বিদেশি বিনিয়োগকারীরাও আসবেন না। ’
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান, বিএসআরএম গ্রুপের চেয়ারম্যান আলী হোসেন আকবর আলী, আইসিএমএবির প্রেসিডেন্ট ও বিল্ডকন কনসালট্যান্সি লিমিটেডের প্রতিষ্ঠাতা মাহতাব উদ্দিন আহমেদ। অনুষ্ঠানে ‘থিম পেপার’ উপস্থাপন করেন সিপিডির সিনিয়র রিসার্চ ফেলো তৌফিকুল ইসলাম খান এবং উদ্বোধনী বক্তব্য দেন মোহাম্মদ শহীদ।