বিদেশে বাণিজ্য মেলা আয়োজনে কিছুটা রক্ষণশীল সরকার
খেয়া মহিলা ও শিশু উন্নয়ন সংস্থা, যশোরের সভাপতি ফারজানা নাজনীন। তিনি জয়িতা কেন্দ্রীয় নারী উদ্যোক্তা ফোরামের সদস্য ও একজন ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা। অন্যবারের মতো এবারও তিনি অংশ নিতে চান আগামী ৩০ জানুয়ারি থেকে ৩ ফেব্রুয়ারি নেপালে অনুষ্ঠেয় পাঁচ দিনব্যাপী অষ্টম নেপাল চেম্বার এক্সপোতে।
কৃষি, সিরামিক, প্রসাধন পণ্য এবং হস্তশিল্প, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য প্রদর্শনী হবে এ মেলায়। মেলায় অংশগ্রহণের বিষয়ে রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) গত ১০ ডিসেম্বর বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন চেয়ে চিঠি পাঠিয়েছে। কিন্তু বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত পাওয়া যায়নি।
মেলায় অংশগ্রহণের বিষয়ে জানতে কয়েকজন উদ্যোক্তাকে সঙ্গে নিয়ে সম্প্রতি সচিবালয়ে যান ফারজানা নাজনীন। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব আবদুর রহিম খানের সঙ্গে দেখা করেন তাঁরা। ফারজানা নাজনীন বলেন, ‘বিদেশে লেখাপড়া করে দেশে ফিরে নারী উদ্যোক্তাদের জীবনমান উন্নয়নে কাজ করছি। যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের দেশে অংশ নেওয়া নারী উদ্যোক্তাদের সাধ্যে কুলায় না। তাই ভারত ও নেপালের মেলায় অংশ নিতে তাঁরা বেশি আগ্রহী। ভারতে এখন ভিসা বন্ধ বলে নেপালই ভরসা। অথচ আবদুর রহিম খান বলে দিলেন, এ মেলা হবে না।’
আমরা চাই করের টাকার সর্বোত্তম ব্যবহার, আর অর্থপূর্ণ মেলা। আগের সরকারের সময় মেলায় অংশ নেওয়ার ভর্তুকি বাবদ বরাদ্দের টাকা দেদার খরচ হয়েছেশেখ বশিরউদ্দীন, বাণিজ্য উপদেষ্টা
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব আবদুর রহিম খান বলেন, ‘আমি তাঁদের বুঝিয়ে বলেছি।’
জয়িতা উদ্যোক্তা ফোরাম সম্প্রতি বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও ইপিবিতে আবেদন করে জানায়, চীন, পাকিস্তান, ভারত, শ্রীলঙ্কা, ভুটানের উদ্যোক্তারা এ মেলায় অংশ নেবে। বাংলাদেশের পক্ষে তাঁরাও অংশ নিতে চান।
ইপিবিতে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নেপালের মেলাসহ বিদেশে বাণিজ্য মেলা আয়োজনের ক্যালেন্ডার অনুমোদন করছে না সরকার। এতে রপ্তানি সম্প্রসারণ ও রপ্তানি পণ্য বহুমুখীকরণের কাজ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরের অর্ধেক শেষ। বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি (এপিএ) অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরে বিদেশে অনুষ্ঠেয় কমপক্ষে ২৬টি মেলায় অংশ নেওয়ার কথা ইপিবির।
গত ৫ আগস্ট দেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর ৮ সেপ্টেম্বর তৎকালীন বাণিজ্য উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে সচিবালয়ে ইপিবির পর্ষদ বৈঠক হয়। সেখানে মেলার ক্যালেন্ডার অনুমোদনের প্রস্তাবই উপস্থাপন করেননি ইপিবির ভাইস চেয়ারম্যান (ভিসি) মো. আনোয়ার হোসেন। পরে গত ১ অক্টোবর একটি তালিকা অনুমোদনের জন্য ইপিবি থেকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হয়।
ইপিবির চিঠিতে বলা হয়, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কর্মরত কমার্শিয়াল কাউন্সিলর, বিভিন্ন দূতাবাসে কর্মরত দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, বিভিন্ন ট্রেড বডি ও স্থানীয় আয়োজকদের কাছ থেকে প্রাপ্ত প্রস্তাবের আলোকে খসড়া মেলা ক্যালেন্ডার তৈরি করা হয়েছে। এখন মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন ছাড়া রপ্তানি উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, অতীতে মেলায় অংশগ্রহণ নিয়ে অনেক নেতিবাচক ঘটনার জন্ম দিয়েছে ইপিবি। ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য ১১টি খাতের ৩২টি মেলার একটি তালিকা করেছে সংস্থাটি, যা এখন অনুমোদন হওয়ার অপেক্ষায়।
ইপিবি আইন কী বলছে
ইপিবি আইনের ৯ ধারায় বলা আছে, ‘দেশের মধ্যে সরকারি এবং বেসরকারি সংস্থার রপ্তানির জন্য গৃহীত বিভিন্ন ধরনের প্রচেষ্টার সমন্বয় সাধন করবে ইপিবি। বিদেশে রপ্তানি বাণিজ্যে অংশগ্রহণের সক্ষমতা অর্জন বা রপ্তানি বৃদ্ধির লক্ষ্যে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে প্রয়োজনীয় পরামর্শ, তথ্য ও সহায়তা দেবে সংস্থাটি।’
আইনে পরিচালনা পর্ষদের কাজও উল্লেখ করা আছে। বলা আছে, বাংলাদেশ থেকে অন্যান্য দেশে কাঁচামাল, আধা প্রস্তুত এবং প্রস্তুতকৃত পণ্যের রপ্তানি সম্প্রসারণের জন্য বাজার অন্বেষণ এবং পর্যবেক্ষণ করা, বিদেশে প্রদর্শনী, বিক্রয়কেন্দ্র বা সহায়ক সংস্থা স্থাপন করা; শিল্প, বাণিজ্য ও রপ্তানি মেলা বা প্রদর্শনীর আয়োজন করা এবং অংশগ্রহণের ব্যবস্থা গ্রহণ করা; দেশি পণ্যের প্রচারণার আয়োজন করা এবং এসব কাজের প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণ করা।
সর্বশেষ সংস্থাটির পর্ষদ সভা অনুষ্ঠিত হয় গত ১৫ ডিসেম্বর, বর্তমান বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীনের সভাপতিত্বে। তাতে ৫টি মেলার বিষয়ে আংশিক অনুমোদন দেওয়া হয়।
বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন এ নিয়ে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা চাই করের টাকার সর্বোত্তম ব্যবহার, আর অর্থপূর্ণ মেলা। আগের সরকারের সময় মেলায় অংশ নেওয়ার ভর্তুকি বাবদ বরাদ্দের টাকা দেদার খরচ হয়েছে। উদ্যোক্তাদের মেলায় অংশ নেওয়া বা এ ব্যাপারে ভর্তুকি দেওয়ার বিরোধী নই আমি। প্রকৃতপক্ষে রপ্তানিপণ্য সম্প্রসারণে কোনো বাধা নেই। তবে আমি কাউকে ঘুরতে যেতে দিতে চাই না।’
নেপালের মেলায় অংশগ্রহণের বিষয়ে কয়েকজন নারী উদ্যোক্তা থেকে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করেছে বলেও জানান তিনি। বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন, ‘যৌক্তিক হলে তাঁরা অবশ্যই নেপালের মেলায় অংশ নেবেন।’