যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি কমেছে ২০%, কেমন করেছে অন্য দেশগুলো
যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানি চলতি বছরে এখন পর্যন্ত ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি। গত জানুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত সাত মাসে দেশটিতে ৪৫৭ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি করেছেন দেশের উদ্যোক্তারা। এই রপ্তানি গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ১৯ দশমিক ৮২ শতাংশ কম।
বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের একক বৃহত্তম বাজার যুক্তরাষ্ট্র। বাংলাদেশ থেকে রপ্তানি হওয়ার পোশাকের এক-পঞ্চমাংশের গন্তব্য এই বাজার। দেশটিতে গত বছর রপ্তানি হয়েছে মার্কিন ৯৭৩ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসায়ীরা পরিমাণের দিক থেকে তৃতীয় সর্বাধিক পোশাক বাংলাদেশ থেকে আমদানি করে থাকেন।
যখন বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি কমেছে, তখন অন্য প্রতিযোগী দেশগুলো কেমন করেছে—সেটি জানতে আগে সামগ্রিকভাবে বিভিন্ন দেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রের পোশাক আমদানি কতটা কমেছে বা বেড়েছে, তা দেখে নেওয়া যাক। চলতি বছরের প্রথম সাত মাসে যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন দেশ থেকে মোট ৪ হাজার ৫৭৬ কোটি ডলারের পোশাক আমদানি করেছেন। এই আমদানি গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ২২ শতাংশ কম। ইউএস ডিপার্টমেন্ট অব কমার্সের অফিস অব টেক্সটাইল অ্যান্ড অ্যাপারেলের (অটেক্সা) হালনাগাদ পরিসংখ্যান থেকে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
এই বাজারে সবচেয়ে বেশি পোশাক রপ্তানি করে চীন। চলতি বছরের প্রথম সাত মাসে তাদের রপ্তানি কমেছে ২৯ শতাংশ। গত জানুয়ারি-জুলাইয়ে যুক্তরাষ্ট্রে ৭১২ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি করেন চীনা উদ্যোক্তারা। গত বছরের এই সময়ে তাদের রপ্তানির পরিমাণ ছিল ১ হাজার ২৮১ কোটি ডলার।
যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পোশাক রপ্তানিকারক ভিয়েতনাম। এ বছরের প্রথম সাত মাসে দেশটি ৮২১ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি করেছে যুক্তরাষ্ট্রে। গত বছরের একই সময়ে তাদের রপ্তানির পরিমাণ ছিল ১ হাজার ৯১ কোটি ডলার। সেই হিসাবে এবার ভিয়েতনামের রপ্তানি কমেছে পৌনে ২৫ শতাংশ।
অটেক্সার তথ্যানুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে চলতি বছরের প্রথম সাত মাসে ২৯২ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি করেছে ভারত। দেশটির রপ্তানি কমেছে ২১ শতাংশ। গত বছরের একই সময়ে তারা রপ্তানি করেছিল ৩৬৯ কোটি ডলারের পোশাক। এই বাজারে ভারত এখন চতুর্থ শীর্ষ পোশাক রপ্তানিকারক।
ভারতের পরের অবস্থানে থাকা ইন্দোনেশিয়ার রপ্তানি কমেছে ২৭ শতাংশ। দেশটি এ বছরের প্রথম সাত মাসে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে ২৪৭ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি করেছে।
বাংলাদেশের উদ্যোক্তারা বেশ কয়েক মাস ধরেই বলছেন, উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে যুক্তরাষ্ট্রের সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমে গেছে। সে কারণে তাঁরা নিত্যপণ্য ছাড়া অন্যান্য পণ্যের কেনাকাটা কমিয়ে দিয়েছেন। এতে পোশাকের ক্রয়াদেশও কমে গেছে। যদিও গত দুই মাস ধরে তৈরি পোশাকের ক্রয়াদেশ বাড়তে শুরু করেছে—এমন ইঙ্গিতই দিচ্ছেন দেশের রপ্তানিকারকেরা।
২০২২ সালের ফেব্রুয়ারির শেষ দিকে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার মাস পাঁচেকের মাথায় জুলাইয়ে যুক্তরাষ্ট্রে মূল্যস্ফীতি বেড়ে ৯ শতাংশ অতিক্রম করে, যা দেশটিতে ৪০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। তবে মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধির গতি কমেছে। গত জুলাইয়ে অবশ্য দেশটিতে মূল্যস্ফীতি কমে ৩ দশমিক ২ শতাংশে নেমে এসেছে।
তৈরি পোশাকশিল্পের মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর সাবেক সহসভাপতি মাহমুদ হাসান খান প্রথম আলোকে বলেন, আগামী গ্রীষ্মের পোশাকের ক্রয়াদেশ গতবারের চেয়ে কিছুটা ভালো। তার কারণ, ইউরোপ ও আমেরিকায় মূল্যস্ফীতির চাপ খানিকটা কমেছে। অন্যদিকে ব্র্যান্ডগুলোর বিক্রয়কেন্দ্রের পণ্যের মজুতও হ্রাস পেয়েছে। ফলে ইউরোপ ও আমেরিকা উভয় অঞ্চল থেকেই ক্রয়াদেশ আসছে।