প্রকৃত ঋণ বেশি পান না পশুর চামড়া ব্যবসায়ীরা
১২টি ব্যাংক এবার কাঁচা চামড়া কিনতে ব্যবসায়ীদের ২৫৯ কোটি টাকা ঋণ দেবে, যা আগেরবারের লক্ষ্যমাত্রা থেকে ১৮৪ কোটি টাকা কম।
আসন্ন কোরবানির ঈদে পশুর কাঁচা চামড়া ক্রয় ও সংরক্ষণে ব্যবসায়ীরা অন্তত ৫০০ কোটি টাকা ঋণ চেয়েছিলেন। কিন্তু ব্যাংকগুলো দিচ্ছে তার অর্ধেক, মানে ২৫৯ কোটি টাকা।
এটি এই খাতে ব্যাংকগুলোর গত বছরের ৪৪৩ কোটি টাকার ঋণ বিতরণ লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১৮৪ কোটি টাকা কম। ব্যবসায়ীরা অবশ্য আশঙ্কা করছেন, প্রতিবছরের মতো এবারও তাঁরা ব্যাংকের প্রতিশ্রুত ঋণ পাবেন না। কারণ, ব্যাংকগুলো অনুমোদিত ঋণ থেকে ব্যবসায়ীদের আগের বকেয়া কেটে রাখবে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, পশুর কাঁচা চামড়া সংরক্ষণে ১২টি ব্যাংক এবার ঋণ দেবে। এর মধ্যে জনতা ব্যাংক একাই দেবে ১০০ কোটি টাকা। এ ছাড়া অগ্রণী ব্যাংক ৮০ কোটি, রূপালী ব্যাংক ৩৫ কোটি, সোনালী ব্যাংক ২৫ কোটি ও বেসিক ব্যাংক ৫ কোটি টাকা ঋণ দেবে। বাকি ঋণ দেবে বেসরকারি খাতে আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক, ইসলামী ব্যাংক, এনসিসি ব্যাংক, দি সিটি ব্যাংক, বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক ও সাউথইস্ট ব্যাংক।
চামড়া পচনশীল ও তাৎক্ষণিকভাবেই তা কিনতে হয় বলে কোরবানির পশুর চামড়া কেনার জন্য ঋণ দরকার হয়। ব্যবসায়ীদের কাছে তো আর অত টাকার চলতি মূলধন থাকা সম্ভব নয়।মো. শাহীন আহমেদ, চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিটিএ)
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যানুযায়ী, প্রতিবছরের মতো এবারও কোরবানির ঈদে চামড়া সংগ্রহের জন্য ট্যানারিশিল্পের অনুকূলে ৫০০ কোটি টাকা ঋণের ব্যবস্থা করতে তাদের চিঠি দেয় বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিটিএ)। তাই তারা ব্যবসায়ীদের সহযোগিতা করতে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে অনুরোধ জানায়। এরপর কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে নির্দেশনা দেয়। এ আলোকেই ব্যাংকগুলো ২৫৯ কোটি টাকা ঋণ দেবে।
এদিকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় পশুর কাঁচা চামড়ার দাম নির্ধারণসহ এ খাতের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা বিষয়ে আজ রোববার সকালে বৈঠক ডেকেছে। এতে চামড়া খাতের ব্যবসায়ীরা উপস্থিত থাকবেন এবং ঋণের বিষয়েও তাঁরা কথা বলবেন বলে জানা গেছে।
ঋণের পরিমাণ কেন কমে যাচ্ছে, এ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে গেছে, চামড়া খাতের আগের ঋণের বড় অংশই খেলাপি। এ কারণে ব্যাংকগুলো ঋণ দিতে চায় না। লক্ষ্যমাত্রা যতই রাখা হোক না কেন, ঋণ বিতরণ ১০০ কোটি টাকার সীমাও ছাড়াতে পারে না অনেক বছর। যেমন ২০২০ সালে ৬৪৪ কোটি ৫০ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা হলেও বিতরণ হয়েছিল মাত্র ৬৫ কোটি টাকা।
ব্যাংকগুলো বলছে, নতুন ঋণের বড় অংশই তারা ব্যবসায়ীদের আগের বকেয়া শোধ বাবদ কেটে রাখে। ফলে প্রকৃত ঋণ খুবই কম পান ব্যবসায়ীরা। ব্যবসায়ীরাও বলছেন, বাস্তবে নতুন ঋণ বেশি পান না তাঁরা।
ব্যবসায়ীরা জানান, দেশে পশুর চামড়ার প্রায় ৭০ শতাংশের জোগান আসে কোরবানির ঈদে। তবে ব্যবসায়ীদের হাতে নগদ টাকা না থাকায় তাঁরা সব চামড়া সংগ্রহ করতে পারেন না। এ সুযোগটি নেয় একশ্রেণির মধ্যস্বত্বভোগী।
বিটিএ সূত্র জানায়, সংগঠনটিতে ৮০০-এর কাছাকাছি সদস্য রয়েছেন। আর সারা দেশে দুই হাজারের কাছাকাছি বৃহৎ ও মাঝারি আড়ত রয়েছে। আড়তদারেরা মৌসুমি ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে চামড়া সংগ্রহ করে নিজেরাই লবণ দিয়ে সংরক্ষণ করেন। পরে সেগুলো তাঁরা বড় ট্যানারির কাছে বিক্রি করেন। ব্যবসায়ীরা বলেন, সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার অভাবে প্রতিবছর প্রায় ৩০ শতাংশ চামড়া নষ্ট হয়।
রাজধানীর পোস্তা ও আমিনবাজারে বড় আড়ত রয়েছে। টঙ্গী-গাজীপুরের আড়তগুলোও বড়। এ ছাড়া যশোরের রাজারহাট, রংপুরের তারাগঞ্জ, নাটোরের রেলওয়ে বাজার, গাইবান্ধার পলাশবাড়ী এবং নওগাঁ, ময়মনসিংহ, টাঙ্গাইল, কিশোরগঞ্জ, কুমিল্লা, চট্টগ্রামের আড়তগুলোতে কাঁচা চামড়া সংগ্রহ, সংরক্ষণ ও মজুত করা হয়।
চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসে চামড়াজাত পণ্য রপ্তানির মাধ্যমে ১১২ কোটি মার্কিন ডলার আয় হয়েছে, যা লক্ষ্যমাত্রার
প্রায় কাছাকাছি।
বিটিএর চেয়ারম্যান মো. শাহীন আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, চামড়া পচনশীল ও তাৎক্ষণিকভাবেই তা কিনতে হয় বলে কোরবানির পশুর চামড়া কেনার জন্য ঋণ দরকার হয়। ব্যবসায়ীদের কাছে তো আর অত টাকার চলতি মূলধন থাকা সম্ভব নয়।
শাহীন আহমেদ বলেন, ‘ঋণ আসলে বেশি পাওয়া যায় না। পুরোনো ঋণের অঙ্ক ব্লক রেখে ব্যাংকগুলো যাতে নতুন করে ঋণটা দেয়, সরকারের কাছে সেই ব্যবস্থার দাবি জানিয়ে আমরা আবেদন করেই আসছি। জানি, সরকারের আন্তরিকতা ছাড়া এ ব্যাপারে কিছু হবে না।’