বেক্সিমকোর বন্ধ কারখানা খুলবে না: উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি

‘বেক্সিমকো শিল্পপার্কের প্রতিষ্ঠানগুলোর শ্রম ও ব্যবসায় পরিস্থিতি পর্যালোচনাসংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি’র বৈঠক শেষে শ্রম উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) সাখাওয়াত হোসেন সাংবাদিকদের ব্রিফ করেনছবি: পিআইডি

সরকারের কাছে তিনটি দাবি জানিয়েছেন বেক্সিমকো গ্রুপের শ্রমিক-কর্মচারী-কর্মকর্তারা। দাবিগুলো হচ্ছে গ্রুপের গার্মেন্টস বিভাগের সব কারখানা খুলে দেওয়া, ব্যাংকে ঋণপত্র (এলসি) খোলার অনুমতি দেওয়া এবং কারখানা ও ব্যবসা চালু রেখে বকেয়া বেতন ও কোম্পানির দায়দেনা পরিশোধের সুযোগ দেওয়া।

ঢাকার পল্টনে সিএমজেএফ কার্যালয়ে আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে অনুষ্ঠিত ‘বেক্সিমকোর লে-অফকৃত সব কারখানার ব্যাংকিং সুবিধাসহ কারখানা খুলে দেওয়া’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে দাবিগুলো জানানো হয়।

গ্রুপটির কর্মীদের এই দাবির পর আজ বিকেলে অনুষ্ঠিত ‘বেক্সিমকো শিল্পপার্কের প্রতিষ্ঠানগুলোর শ্রম ও ব্যবসায় পরিস্থিতি পর্যালোচনাসংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি’র বৈঠক শেষে শ্রম উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) সাখাওয়াত হোসেন সাংবাদিকদের জানান, বেক্সিমকো শিল্পপার্কের বন্ধ কারখানাগুলো চালু করা সম্ভব নয়। কারণ, এসব কারখানার বিপরীতে দায়দেনা অনেক বেশি এবং এগুলো চালানোর উপযুক্ততা হারিয়েছে।

সাখাওয়াত হোসেন বলেন, বেক্সিমকো শিল্পপার্কে অবস্থিত ১৬ কোম্পানির বিপরীতে ১২ হাজার কোটি টাকা ঋণ নেওয়া হয়েছে। এ পার্কে ৩২টি কারখানার কথা বলা হলেও বাকি ১৬টির কোনো অস্তিত্ব নেই। ১২ হাজার কোটি টাকা ঋণ অস্তিত্বহীন ১৬ কোম্পানির বিপরীতে।

বেক্সিমকো শিল্পপার্কের কর্মচারী ও শ্রমিকেরা গাজীপুরের শ্রীপুর মায়ানগর মাঠে জমায়েত হয়ে গত বুধবার লে-অফ প্রত্যাহার করে কারখানা খুলে দেওয়ার দাবি জানান। তাঁরা ঘোষণা দেন, ২২ জানুয়ারি বেলা তিনটার মধ্যে কারখানাগুলো খুলে না দিলে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক অবরোধসহ শাটডাউন কর্মসূচি পালন করবেন।

এ সময় তাঁরা অগ্নিসংযোগের মতো কর্মকাণ্ডও করেন, যা কোনোভাবে গ্রহণযোগ্য নয়। তাঁদের সবাইকে এ জন্য শাস্তির আওতায় আনা হবে। এ তথ্য উল্লেখ করে শ্রম উপদেষ্টা বলেন, ১২টি কারখানা লে–অফ করা হয়েছে বেক্সিমকোর ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে, সরকারের সিদ্ধান্তে নয়।

শ্রম উপদেষ্টা আরও বলেন, তিনটি কারখানা বর্তমানে চালু। আর বেক্সিমকো শিল্পপার্কে অবস্থিত ৩২টি কারখানার বিপরীতে ২৯ হাজার ৯২৫ কোটি টাকাসহ বেক্সিমকো লিমিটেডের মোট ব্যাংকঋণ ৪০ হাজার কোটি টাকার বেশি। মোট ঋণের মধ্যে জনতা ব্যাংকের পাওনা ২৩ হাজার ২৮৫ কোটি টাকা।

আরও ঋণের দাবি

বেক্সিমকোর শ্রমিক-কর্মচারী-কর্মকর্তাদের আয়োজনে আজ দুপুরের সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন বেক্সিমকো ফ্যাশন লিমিটেডের প্রশাসন বিভাগের প্রধান সৈয়দ মো. এনাম উল্লাহ ও বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের প্রশাসন বিভাগের প্রধান আবদুল কাইয়ুম।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, কারখানা বন্ধের সিদ্ধান্তের পরিবর্তন না হলে মানবেতর জীবনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে ৪২ হাজার মানুষকে। তাঁদের মাধ্যমে তখন অনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ায় নতুন সংকট তৈরি হতে পারে। কারখানা চালুর জন্য নারায়ণগঞ্জের কাঁচপুরে থাকা ২৩ একর জমি বন্ধক রেখে ৭০০ কোটি টাকা ঋণ চায় বেক্সিমকো গ্রুপ। গ্রুপটি এ ঋণ চায় শুধু চার মাসের জন্য। এ ঋণ পেলে গ্রুপটি একদিকে কারখানাগুলো পরিচালনা করতে পারবে, অন্যদিকে ধীরে ধীরে ব্যাংকের আগের দায়ও পরিশোধ করতে পারবে।

বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের প্রশাসন বিভাগের প্রধান আবদুল কাইয়ুম বলেন, সবকিছু বন্ধ করে দিয়ে দায় পরিশোধের চাপ সৃষ্টি শুধু অমানবিকই নয়, অন্যায্যও বটে। এই দায় বহন করার সক্ষমতা কোনো সরকারের বা ব্যক্তির পক্ষে সম্ভব নয়। কারখানা বন্ধ রাখার প্রক্রিয়া যত প্রলম্বিত হবে, বেক্সিমকোর দায়ও তত বাড়তে থাকবে।