শ্রমিক হত্যার বিচার দাবিতে সরব হচ্ছে শ্রমিক সংগঠন
রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাক খাতের মজুরি বৃদ্ধির আন্দোলনে গত বছর চারজন শ্রমিক নিহত হন। কোটা সংস্কার আন্দোলন চলাকালেও গত জুলাইয়ে নিহত হয়েছেন বেশ কয়েকজন শ্রমিক। রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর এসব শ্রমিক হত্যার বিচারের দাবিতে সরব হতে শুরু করেছে বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠন।
শ্রমিক হত্যার বিচারের দাবিতে আজ শুক্রবার রাজধানীর প্রেসক্লাবে সামনে সমাবেশ করেছেন গার্মেন্ট শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের নেতা-কর্মীরা। একই সঙ্গে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে সাধারণ শ্রমিক ও শ্রমিক নেতাদের বিরুদ্ধে করা হয়রানিমূলক মামলা সাত দিনের মধ্যে প্রত্যাহার, কারখানাভিত্তিক রেশন চালুর পাশাপাশি পোশাকশ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি ২৫ হাজার টাকা নির্ধারণের দাবি জানান তাঁরা।
গার্মেন্ট টিইউসির সভাপতি মন্টু ঘোষের সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য দেন সংগঠনের উপদেষ্টা আবদুল্লাহ ক্বাফী, সাধারণ সম্পাদক সাদেকুর রহমান, সহসভাপতি জলি তালুকদার, জিয়াউল কবির, সহকারী সাধারণ সম্পাদক মঞ্জুর মঈন প্রমুখ।
সমাবেশে আবদুল্লাহ ক্বাফী বলেন, ‘জুলাইয়ে ছাত্র জনতার গণ-অভ্যুত্থানে অন্তত ৯২ জন শ্রমিক নিহত হয়েছেন। ছাত্রদের বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন যখন গণ-আন্দোলনে রূপান্তরিত হয়, তখন শ্রমিক-মেহনতি মানুষ জীবনের মায়া তুচ্ছ করে তাতে অংশ নেন। স্বৈরাচারমুক্ত বাংলাদেশে আমরা শ্রমিকদের ওপর আর কোনো নিপীড়ন-নির্যাতন দেখতে চাই না।’ তিনি সব হত্যার দ্রুত বিচারের দাবি করেন।
মন্টু ঘোষ বলেন, পোশাকশ্রমিকেরা ২৫ হাজার টাকা মজুরি দাবি করেছিলেন। এই ন্যায্য দাবির আন্দোলন দমন করতে গত বছরের নভেম্বরে চারজন শ্রমিককে গুলি করে হত্যা করা হয়। পোশাকশিল্পের শ্রমিকেরা তাঁদের সহকর্মীদের হত্যাকাণ্ডের বিচার চান। তিনি অবিলম্বে বিদ্যমান মজুরি পর্যালোচনা করে পোশাকশ্রমিকের ন্যূনতম মজুরি ২৫ হাজার টাকা ঘোষণা করার দাবি জানান।
জলি তালুকদার বলেন, মালিকপক্ষের কেউ কেউ বিগত স্বৈরাচারী সরকারের লাঠিয়াল ও মাস্তানের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিলেন। তাঁরা শ্রমিকদের দমন করতে দালাল ট্রেড ইউনিয়ন ও আমলাদের লালন-পালন করেছেন। শহীদের রক্তের বিনিময়ে সেসব মালিক নামের মাস্তান ও দালালকে উচ্ছেদ করা সম্ভব হয়েছে। তিনি অবাধ ট্রেড ইউনিয়ন অধিকার নিশ্চিত করার জন্য সরকারের প্রতি দাবি জানান।
এদিকে জাতীয় গার্মেন্ট শ্রমিক ফেডারেশনের নেতা-কর্মীরা সাম্প্রতিক আন্দোলনে শ্রমিক হত্যার বিচার ও নিহত ব্যক্তিদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ, আহত ব্যক্তিদের সুচিকিৎসা ও গ্রেপ্তার শ্রমিকদের মুক্তির দাবিতে মিছিল ও সমাবেশ করেছেন। আজ রাজধানীর প্রেসক্লাবে এই কর্মসূচিতে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সভাপতি আমিরুল হক। আরও উপস্থিত ছিলেন সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম, সহসভাপতি আ স ম জাকারিয়া, কেন্দ্রীয় নেত্রী জেসমিন আক্তার।
ওই সমাবেশে বক্তারা অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে পোশাকশ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধির পাশাপাশি রেশনিং সুবিধা চালু করার দাবি করেন। পাশাপাশি ট্রেড ইউনিয়নের গঠন ও পরিচালনায় সব ধরনের প্রতিবন্ধকতা দূর করার দাবি করেন তাঁরা।