শ্রমিকনেতাদের সমালোচনা করলেন শ্রম প্রতিমন্ত্রী মন্নুজান সুফিয়ান

জাতীয় পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা দিবস উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় বক্তব্য দেন প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ান। আজ শুক্রবার রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনেছবি: শ্রম মন্ত্রণালয়

জাতীয় পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা দিবসের আলোচনা সভায় শ্রমিকনেতাদের সমালোচনা করলেন প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ান। তিনি বলেছেন, ‘আমরা শ্রমিকদের যেকোনো সমস্যার সমাধান, তাদের কল্যাণ এবং জীবনমান উন্নয়নে রাতদিন কাজ করছি। এরপরও কতিপয় শ্রমিকনেতা দেশের বিরুদ্ধে, সরকারের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থায় (আইএলও) অভিযোগ দেন।’

শ্রমিকনেতাদের উদ্দেশে বেগম মন্নুজান সুফিয়ান বলেন, ‘আপনারা কোনো সমস্যায় আমাদের জানান। ত্রিপক্ষীয় পরামর্শ পরিষদ আছে, তাদের জানান। শ্রমিকবান্ধব প্রধানমন্ত্রীকে জানান। শ্রমিকদের স্বার্থ সুরক্ষায় যেকোনো সমস্যার সমাধান করা হবে। অযথা দেশের বিরুদ্ধে আইএলওসহ অন্য কোনো সংস্থার কাছে অভিযোগ দেবেন না। দেশের ক্ষতি করবেন না।’

জাতীয় পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা  দিবস উপলক্ষে আজ শুক্রবার রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে এক আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ান। শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় আয়োজিত এই সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক। শ্রম মন্ত্রণালয় এবং কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টি জানানো হয়।

শ্রম প্রতিমন্ত্রী বলেন, শ্রমিকদের অধিকার সুরক্ষায় বাংলাদেশ শ্রম আইন আবারও সংশোধনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সংশোধিত এই শ্রম আইন অর্থনৈতিক অঞ্চলেও কার্যকর হবে। ইপিজেড এলাকায় শ্রমিকদের জন্য শ্রম বিধিমালা কার্যকর করা হয়েছে। তিনি জানান, শ্রম মন্ত্রণালয় সারা দেশের প্রাতিষ্ঠানিক ও অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের সব শ্রমিককে তথ্যভান্ডারে অন্তর্ভুক্ত করার কাজ শুরু করেছে। পোশাক খাতের শ্রমিকদের জন্য ইনজুরি স্কিম ও শ্রমিকদের সর্বজনীন পেনশন চালুর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

জাতীয় পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা দিবস উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক (মাঝে)। আজ শুক্রবার রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে
ছবি: শ্রম মন্ত্রণালয়

আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, শোভন কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করতে কেবল মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখার সুযোগ নেই। এটি এখন কারখানা মালিকপক্ষের জন্য দায়বদ্ধতায় পরিণত হয়েছে। বাংলাদেশ যেভাবে উন্নত বিশ্বের অভিমুখে যাত্রা করেছে, সেখানে পেশাগত সুরক্ষার বিষয়টিকে অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে দেখতে হবে। পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা দিবস পালনকে জাতীয় সংস্কৃতি হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
আইএলওর এদেশীয় প্রধান (কান্ট্রি ডিরেক্টর) তুমো পৌতিয়াইনেন বলেন, পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সবার সামাজিক ন্যায়বিচার অর্জনের জন্য একটি মৌলিক পদক্ষেপ। কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তা এবং স্বাস্থ্যকে মৌলিক অধিকার হিসেবে উন্নীত করার জন্য সরকার, শ্রমিক ও মালিকপক্ষের সঙ্গে আইএলও কাজ চালিয়ে যাবে।

স্বাগত বক্তব্যে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের মহাপরিদর্শক মো. নাসির উদ্দিন আহমেদ জানান, কারখানার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ৬ হাজার ৫৯২টি নিরাপত্তা কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ ছাড়া নারীবান্ধব কর্মক্ষেত্র নিশ্চিত করতে ৬ হাজার ৪৯৭টি কারখানায় শিশুকক্ষ (ডে কেয়ার) স্থাপন করা হয়েছে।

শ্রম মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. এহছানে এলাহীর সভাপতিত্বে সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন শ্রম অধিদপ্তরের মহাপরিচালক খালেদ মামুন চৌধুরী, বাংলাদেশ এমপ্লয়ার্স ফেডারেশনের সভাপতি আরদাশির কবির, তৈরি পোশাকশিল্পের মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ পরিচালক মো. খসরু চৌধুরী, নিট পোশাকশিল্পের মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর সহসভাপতি মনসুর আহমেদ, জাতীয় শ্রমিক লীগের সভাপতি নুর কুতুব আলম মান্নান প্রমুখ।