সূর্যমুখী ও ক্যানোলা তেলের শুল্ক–কর কমানোর সুপারিশ ট্যারিফ কমিশনের

ভোজ্য তেলপ্রতীকী ছবি

দেশের বাজারে ভোজ্যতেল হিসেবে বেশি চলে সয়াবিন ও পাম তেল। অথচ সান ফ্লাওয়ার (সূর্যমুখী) ও ক্যানোলা তেল উত্তম বিকল্প হতে পারে। বিশ্ববাজারে এ দুই পণ্যের দাম সয়াবিন ও পামের কাছাকাছিই। উচ্চ শুল্ক আরোপ করে পণ্য দুটি আমদানি নিরুৎসাহিত করে রাখা হয়েছে।

এসব কথা তুলে ধরে সয়াবিন ও পাম তেলে শুল্ক-কর কমানোর পর এবার সান ফ্লাওয়ার ও ক্যানোলা তেল আমদানিতেও শুল্ক-কর কমানোর সুপারিশ করেছে বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন (বিটিটিসি)। পরিশোধিত ও অপরিশোধিত—দুই ধরনের সান ফ্লাওয়ার ও ক্যানোলা তেল আমদানিতে এই সুপারিশ করা হয়। বিটিটিসি এ দুই ভোজ্যতেলের ওপর শুল্ক-কর পুনর্নির্ধারণবিষয়ক এক প্রতিবেদনে এই সুপারিশ করেছে। গত বুধবার প্রতিবেদনটি বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে (এনবিআর) পাঠানো হয়েছে। যার অনুলিপি অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদের কার্যালয়েও দেওয়া হয়েছে।

বিটিটিসি চেয়ারম্যান মইনুল খান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা বিশ্লেষণ করে দেখেছি, সান ফ্লাওয়ার ও ক্যানোলা তেল আমদানিতে শুল্ক-কর কমানো হলে পণ্য দুটির আমদানি বাড়বে এবং ভোজ্যতেলের সরবরাহব্যবস্থা ভালো হবে।’

বিলাসী পণ্য বিবেচনা করে সান ফ্লাওয়ার ও ক্যানোলা তেল আমদানিতে এত দিন উচ্চ শুল্ক আরোপ করে আসছিল এনবিআর। বর্তমান পরিপ্রেক্ষিতে এ বিবেচনা প্রাসঙ্গিক নয় বলে মনে করছে বিটিটিসি। সংস্থাটি বলেছে, সয়াবিন ও পামের সমজাতীয় তেলে আমদানি শুল্ক–করে পার্থক্য দূর করলে একদিকে ভোজ্যতেলের আমদানি উৎস দেশ সম্প্রসারিত হবে, অন্যদিকে ভোক্তাদের পছন্দেও বৈচিত্র্য আসবে। বিটিটিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, সয়াবিন ও পাম তেলের বিশ্ববাজার ঊর্ধ্বমুখী। তাই বিকল্প হিসেবে সান ফ্লাওয়ার ও ক্যানোলা তেলের সরবরাহ বাড়ানো যায়।

অপরিশোধিত সান ফ্লাওয়ারে বর্তমানে ৩১ শতাংশ ও পরিশোধিত সান ফ্লাওয়ারে ৩২ শতাংশ শুল্ক–কর রয়েছে। আর অপরিশোধিত ক্যানোলা তেলে বর্তমানে ৩৭ শতাংশ এবং পরিশোধিত ক্যানোলায় ৫৮ দশমিক ৬০ শতাংশ শুল্ক–কর রয়েছে। সম্প্রতি অপরিশোধিত সয়াবিন ও পাম তেলের ওপর ভ্যাট ১৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশে নামিয়ে এনেছে এনবিআর।

আমরা বিশ্লেষণ করে দেখেছি, সান ফ্লাওয়ার ও ক্যানোলা তেল আমদানিতে শুল্ক-কর কমানো হলে পণ্য দুটির আমদানি বাড়বে এবং ভোজ্যতেলের সরবরাহব্যবস্থা ভালো হবে।
মইনুল খান, চেয়ারম্যান, বিটিটিসি

বিটিটিসি বলেছে, রমজান মাস সামনে রেখে অপরিশোধিত সান ফ্লাওয়ার ও ক্যানোলা তেল আমদানিতে ৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপ করা যেতে পারে। এই সুবিধা ২০২৫ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত দেওয়া যেতে পারে। তবে পরিশোধিত সান ফ্লাওয়ার ও ক্যানোলা তেলের শুল্ক–কর প্রস্তাব করা হয়েছে ২০ শতাংশ, যার মধ্যে ১৫ শতাংশ ভ্যাট ও ৫ শতাংশ অগ্রিম আয়কর (এআইটি)।

এনবিআর থেকে তথ্য নিয়ে প্রতিবেদনে বিটিটিসি উল্লেখ করেছে, ২০২২-২৩ অর্থবছরে দেশে অপরিশোধিত সান ফ্লাওয়ার আমদানি হয়নি। তবে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে আমদানি হয়েছে ৭ হাজার ৯৮৫ টন, যা থেকে এনবিআর রাজস্ব পেয়েছে ১৭ কোটি ৪২ লাখ টাকা। আর ২০২২-২৩ অর্থবছরে পরিশোধিত সান ফ্লাওয়ার আমদানি হয়েছে ২ হাজার ৬০৭ টন, রাজস্ব আয় হয়েছে ১৪ কোটি টাকা এবং ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ৫ হাজার ৯৩ টন সান ফ্লাওয়ার তেল আমদানি হয়, এনবিআর রাজস্ব পেয়েছে ১৭ কোটি ১৯ লাখ টাকা।

এ ছাড়া ২০২২-২৩ ও ২০২৩-২৪ অর্থবছরের কোনোবারই দেশে অপরিশোধিত ক্যানোলা তেল আমদানি হয়নি। তবে ২০২২-২৩ অর্থবছরে পরিশোধিত ক্যানোলা তেল আমদানি হয়েছে ৫৮ দশমিক ৬৭ টন, যা থেকে ৫২ লাখ টাকা রাজস্ব আদায় হয়। আর ২০২৩-২৪ অর্থবছরে এই তেল আমদানি হয় প্রায় ৯ টন, যা থেকে ৯ লাখ টাকা রাজস্ব পেয়েছে এনবিআর।

দেশে স্বাস্থ্যসচেতন মানুষের কাছে সবচেয়ে জনপ্রিয় ‘ক্যানোলা তেল’। বর্তমানে এটি বিশ্বের তৃতীয় সর্বোচ্চ উৎপাদিত উদ্ভিজ্জ তেল। ১৯৭৪ সালে কানাডায় প্রথম উৎপাদিত হয় ক্যানোলা তেল। এই তেল উৎপাদনকারী দেশগুলোর মধ্যে শীর্ষে রয়েছে চীন, কানাডা, ভারত ও জাপান। যুক্তরাষ্ট্রের খাদ্য ও ওষুধ প্রশাসনের মাধ্যমে এ তেল নিরাপদ হিসেবে স্বীকৃত।

বিশ্বে সূর্যমুখী তেলের ৫৮ শতাংশ উৎপাদিত হয় রাশিয়া ও ইউক্রেনে। বাংলাদেশে সূর্যমুখী তেলের ভোক্তা মূলত মধ্যম ও উচ্চ মধ্যম আয়ের মানুষ। দেশে সূর্যমুখী তেল আমদানি ও বাজারজাত করে ফেয়ার ফুড অ্যান্ড লাইফস্টাইল, বাংলাদেশ এডিবল অয়েল, এসিআই এডিবল অয়েলস, স্কয়ার ফুড অ্যান্ড বেভারেজ, প্রাণ অ্যাগ্রো লিমিটেডসহ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান।

২৫ নভেম্বরের বিশ্ববাজারে প্রতি টন পাম তেল ১ হাজার ১৬০ মার্কিন ডলার, অপরিশোধিত সয়াবিন ১ হাজার ৪৯ ডলার, অপরিশোধিত ক্যানোলা ১ হাজার ১২০ ডলার এবং অপরিশোধিত সান ফ্লাওয়ারের দাম ১ হাজার ১৬৫ ডলার ছিল বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।

যোগাযোগ করলে এনবিআর চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খান প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিটিটিসির প্রতিবেদনটি আমরা পর্যালোচনা করছি। এ ব্যাপারে পরে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’