বার্ষিক ৯% মজুরি বৃদ্ধির সিদ্ধান্তে শ্রম অসন্তোষ

২৫-৩০ কারখানার শ্রমিকেরা ১৫-২০% বার্ষিক মজুরি বৃদ্ধি, নিম্নতম মজুরি ২৫ হাজার টাকা নির্ধারণসহ কয়েকটি দাবিতে কর্মবিরতি পালন করেন। 

অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ নাসা গ্রুপের একটি কারখানার সামনে নোটিশ দেখছেন এক ব্যক্তি। গতকাল দুপুরে আশুলিয়ার নরসিংহপুর এলাকায়ছবি: প্রথম আলো

নিয়মিত ৫ শতাংশের সঙ্গে অতিরিক্ত ৪ শতাংশ বার্ষিক মজুরি বৃদ্ধি বা ইনক্রিমেন্ট ঘোষণার পর আন্দোলনে নেমেছেন সাভারের আশুলিয়ার ২৫-৩০টি তৈরি পোশাক কারখানার শ্রমিকেরা। তাঁরা ১৫-২০ শতাংশ ইনক্রিমেন্ট, নিম্নতম মজুরি ২৫ হাজার টাকা নির্ধারণসহ কয়েকটি দাবিতে গতকাল বুধবার কারখানায় উপস্থিত হয়ে কর্মবিরতি পালন করেন। একপর্যায়ে এসব কারখানা কর্তৃপক্ষ ছুটি দিতে বাধ্য হয়।

আশুলিয়ায় গতকাল চতুর্থ দিনের মতো এমন ঘটনা ঘটেছে। শ্রম মন্ত্রণালয়ে গত সোমবার মালিক ও শ্রমিকপক্ষের মধ্যে ৫ ঘণ্টা দর-কষাকষির পর নিয়মিত বার্ষিক ৫ শতাংশ মজুরির সঙ্গে অতিরিক্ত ৪ শতাংশ ইনক্রিমেন্টের বিষয়টি চূড়ান্ত করে এ-সংক্রান্ত সরকার গঠিত কমিটি। এর আগে থেকেই আশুলিয়ার একাধিক কারখানার শ্রমিকেরা কর্মবিরতি পালন শুরু করেন। গতকাল এই সংখ্যা আরও বেড়েছে।

এদিকে ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে গতকাল শ্রম ও কর্মসংস্থান উপদেষ্টা এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, শিল্প খাতে একধরনের অস্থিরতা চলছে। বিশেষ করে তৈরি পোশাক খাতে এই অস্থিরতা সৃষ্টি করা হয়েছে। পতিত সরকার ও তাদের বন্ধুরাষ্ট্র জড়িত হয়ে কিছু সমস্যা তৈরি করছে। 

 শ্রম অসন্তোষের বিষয়ে একাধিক শ্রমিকনেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, কারখানাগুলোতে ট্রেড ইউনিয়ন না থাকায় মালিক ও শ্রমিকপক্ষের মধ্যে কথা বলার সুযোগ কমে গেছে। সে জন্য বিভিন্ন দাবিতে কথায় কথায় আন্দোলনে নেমে যাচ্ছেন শ্রমিকেরা। 

জানা যায়, শ্রমিকেরা কর্মবিরতি পালন করায় নাসা গ্রুপ, হা-মীম গ্রুপ, শারমিন গ্রুপ, এজে সুপার গার্মেন্টস, মাম গার্মেন্টস, নিট এশিয়া, ডেকো ডিজাইনস, ইথিক্যাল গার্মেন্টস, নিউ এইজ গার্মেন্টস, নিউ এইজ অ্যাপারেলস, মেডলার গ্রুপ, আল মুসলিম অ্যাপারেলস, সেতারা গ্রুপ, ডেবনিয়ার গার্মেন্টস, দ্য রোজ ড্রেসেস, বান্দো ডিজাইন, স্টার্লিং ক্রিয়েশন, উইন্ডি ও এনভয় গ্রুপের কারখানা গতকাল বন্ধ ঘোষণা করে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। 

নাম প্রকাশ না করার শর্তে আল মুসলিমের এক নারী শ্রমিক বলেন, ‘আমাদের মজুরি ১৫ পারসেন্ট বাড়াইতে হবে। বেতন ২৫ হাজার টাকা দিতে হবে। ছুটির টাকাও মাস শেষে দিতে হবে।’

আশুলিয়ায় শিল্পাঞ্চল পুলিশ-১-এর পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মোমিনুল ইসলাম ভূইয়া প্রথম আলোকে বলেন, শ্রমিকেরা অতিরিক্ত ৪ শতাংশ ইনক্রিমেন্টে সন্তুষ্ট নন। তাই ২৫-৩০ কারখানার শ্রমিকেরা কাজ বন্ধ করে বসে ছিলেন। স্টার্লিং ক্রিয়েশন নামের একটি কারখানা লক্ষ্য করে ঢিল ছোড়ে শ্রমিকদের একটি অংশ। 

শ্রমিক অসন্তোষের বিষয়ে বিজিএমইএর সহায়ক কমিটির সদস্য এ এন এম সাইফুদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, ত্রিপক্ষীয় কমিটিতে ইনক্রিমেন্টের বিষয়টি ফয়সালা হওয়ার পর শ্রম অসন্তোষের বিষয়টি দুঃখজনক। অতিরিক্ত ৪ শতাংশ ইনক্রিমেন্ট বাস্তবায়ন করতে অনেক কারখানা আর্থিকভাবে চ্যালেঞ্জের মধ্যে পড়বে। 

এদিকে বার্ষিক মোট ৯ শতাংশ মজুরি বৃদ্ধি পেলে তাতে সহকারী অপারেটর (গ্রেড-৪) পদের শ্রমিকদের মজুরি বাড়বে ৯০৫ টাকা। এ ছাড়া জুনিয়ার অপারেটরদের ৯৯৯ টাকা, অপারেটরদের ১ হাজার ৬৪ এবং সিনিয়র অপারেটরদের মজুরি বাড়বে ১ হাজার ১৩৩ টাকা। জানুয়ারির মজুরির সঙ্গে বাড়তি এই অর্থ পাবেন শ্রমিকেরা। 

জানতে চাইলে ইন্ডাস্ট্রিঅল বাংলাদেশ কাউন্সিলের (আইবিসি) সাবেক মহাসচিব সালাউদ্দিন স্বপন প্রথম আলোকে বলেন, ‘১৮ দাবি বাস্তবায়নের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। ইতিমধ্যে হাজিরা ভাতা ও ইনক্রিমেন্ট বেড়েছে। আশা করছি, ১ বছরে আরও ইতিবাচক পরিবর্তন হবে। তাই শ্রমিকদের সহনশীল হওয়া দরকার।’