এফবিসিসিআইয়ের চাকরিচ্যুতদের পুনর্বহালে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিল বাণিজ্য মন্ত্রণালয়
এফবিসিসিআইয়ের চাকরিচ্যুত ২৫ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীর চাকরিতে পুনর্বহালের দাবির বিষয়ে পরবর্তী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বাণিজ্য সংগঠন-১ বিভাগ। এফবিসিসিআইয়ের প্রশাসক সচিব মো. হাফিজুর রহমানকে এই নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
গত ৬ অক্টোবর ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার্স অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এফবিসিসিআই) চাকরিচ্যুত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা নিজ নিজ পদে (জ্যেষ্ঠতা, পদোন্নতিসহ) চাকরিতে পুনর্বহালের দাবিতে প্রধান উপদেষ্টার কাছে আবেদন করেন। সেই সঙ্গে চাকরিবিধি অনুযায়ী প্রাপ্য সুবিধা দাবি করেন তাঁরা। সেই পরিপ্রেক্ষিতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এই নির্দেশ দিয়েছে।
এই কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অভিযোগ, ২০১৯-২১ মেয়াদকালে এফবিসিসিআইয়ের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করা শেখ ফজলে ফাহিম ২০২০ সালে করোনা মহামারির সময় ৬২ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে জোর করে পদত্যাগে বাধ্য করেন। পরবর্তীকালে অনেককে চাকরিতে পুনর্বহাল করা হলেও ২৫ জনকে এখনো পুনর্বহাল করা হয়নি।
এমনকি প্রতিষ্ঠানের চাকরিবিধি ১৯৯০ অনুযায়ী, প্রাপ্য সুবিধাদি থেকেও সেই ২৫ জনকে বঞ্চিত করা হয়েছে বলে অভিযোগ। এই সুবিধার মাত্র ২৫ শতাংশ দেওয়া হয়েছে। এমনকি তাঁদের আইনি সুরক্ষা নেওয়া থেকে বিরত রাখতে হুমকি দেওয়া হয়েছে। ফলে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে মতিঝিল থানায় জিডি করতে বাধ্য হন এই কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
বর্তমান বাণিজ্য সংগঠন আইন-২০২২ অনুযায়ী মহাপরিচালক (প্রাক্তন পরিচালক) কে বাণিজ্য সংগঠনগুলোর নিয়ন্ত্রক হিসেবে ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। এই আইনের ১৫ (২) ধারা অনুযায়ী ‘বাণিজ্য সংগঠনের কার্যাবলি মহা-পরিচালকের নিয়ন্ত্রণাধীন থাকিবে এবং সময়-সময়ে মহা-পরিচালক কর্তৃক বিধি দ্বারা নির্ধারিত পদ্ধতিতে উক্ত বাণিজ্য সংগঠনের কার্যাবলি পরিচালিত হইবে’। এ ছাড়া ১৫ (৩) (ঠ) অনুযায়ী, মহা-পরিচালক বাণিজ্য সংগঠনের বিদ্যমান সমস্যা বা দ্বন্দ্ব নিরসনের উদ্যোগ নিতে পারবেন।
স্মারকলিপিতে বলা হয়, আবেদনকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ১৯৯০ সাল থেকে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন পদে এফবিসিসিআইয়ের অনুমোদিত চাকরিবিধি অনুযায়ী নিয়োগ দেওয়া হয়। করোনার সময় তাঁদের জোর করে গণপদত্যাগে বাধ্য করা সম্পূর্ণ অন্যায়, অনৈতিক ও আইনের পরিপন্থী। এই গণপদত্যাগের পর এফবিসিসিআইয়ের সাবেক প্রেসিডেন্টের কার্যকালে তাঁদের কোনোভাবেই এফবিসিসিআই ভবনে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি।
স্মারকলিপিতে আরও বলা হয়, চাকরিচ্যুত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বিভিন্ন সময় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব ও মহাপরিচালক (তৎকালীন পরিচালক) ও বাণিজ্য সংগঠনগুলো বরাবর আবেদন করেছেন। এই কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ২০২১ সালের ১২ জুন এফবিসিসিআই সভাপতি বরাবর চাকরিতে পুনর্বহাল ও সব বকেয়া পাওনা পরিশোধের আবেদন করেন। এর অনুলিপি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব ও মহাপরিচালককে (তৎকালীন পরিচালক) দেওয়া হয়েছে।
পরবর্তীকালে ২০২২ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি এবং ২০২২ সালের ৬ মার্চ আইনজীবীর মাধ্যমে এফবিসিসিআই কর্তৃপক্ষকে ডিমান্ড নোটিশ দেওয়া হয়। তারপরও তাঁদের চাকরিতে পুনর্বহাল ও চাকরিজনিত সুবিধাসহ বেতন-ভাতা পরিশোধের কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর সরকার এফবিসিসিআইয়ের প্রশাসক নিয়োগ দেয়। আন্দোলনকারী ব্যক্তিরা তাঁর কাছে চাকরিতে পুনর্বহালের দাবি জানিয়ে স্মারকলিপি দিয়েছেন, কিন্তু তাতেও কাজ হয়নি। এই পরিস্থিতিতে ৫ অক্টোবর রাজধানীর মতিঝিলে এফবিসিসিআই কার্যালয় ঘেরাও করেন এই কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।