এনবিআরের তথ্য
অক্টোবরে রপ্তানি আয় বেড়েছে ১৯ শতাংশ
সেপ্টেম্বর থেকে পণ্য রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধির হার বাড়ছে। এনবিআরের হিসাবে, গত মাসে রপ্তানি হয়েছে ৪১৩ কোটি ডলারের পণ্য।
জুলাই-আগস্ট মাসে উৎপাদন খাতে যে ধাক্কা লেগেছিল, তা কাটিয়ে দেশের পণ্য রপ্তানি বাড়তে শুরু করেছে। গত অক্টোবরে রপ্তানি আয় গত বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় ১৯ শতাংশ বেড়েছে।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) তথ্যানুযায়ী, চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম চার মাসে ১ হাজার ৫৮৮ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় ১১ শতাংশ বেশি।
দেশের বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের তিনটি বড় উৎস হলো রপ্তানি, প্রবাসী আয় বা রেমিট্যান্স এবং বিদেশি বিনিয়োগ ও ঋণ। রপ্তানি ও প্রবাসী আয় বাড়লে বৈদেশিক মুদ্রার সংকট কমে। অক্টোবরে প্রবাসী আয় বেড়েছে ২১ শতাংশ।
রপ্তানি ও প্রবাসী আয় বৃদ্ধি, বিপরীতে আমদানি ব্যয় সেভাবে না বাড়ায় সাম্প্রতিককালে বাংলাদেশ ব্যাংকের চলতি হিসাবে ঘাটতি দূর হয়েছে। আর্থিক হিসাবে ঘাটতি কমছে।
বৈদেশিক মুদ্রার মজুত বা রিজার্ভের পতনও থেমেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত ৩০ অক্টোবর বৈদেশিক মুদ্রার মজুত দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৫৪৪ কোটি ডলারের বেশি। যা এক মাস আগে ছিল ২ হাজার ৪৭৪ কোটি ডলার। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) হিসাবপদ্ধতি অনুযায়ী, রিজার্ভ এখন ১ হাজার ৯৮৭ কোটি ডলার, যা এক মাস আগে ছিল ২ হাজার ৮০ কোটি ডলার। বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র বলছে, এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) দায় পরিশোধ করায় আইএফএফের হিসাবপদ্ধতিতে রিজার্ভ কিছুটা কমেছে।
রপ্তানি
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) থেকে পাওয়া তথ্যে দেখা গেছে, বাংলাদেশ থেকে গত অক্টোবরে ৪১৩ কোটি মার্কিন ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে। এই রপ্তানি গত বছরের একই মাসের তুলনায় ৬৫ কোটি ডলার বা ১৮ দশমিক ৬৮ শতাংশ বেশি। আর চলতি বছরের জুলাই, আগস্ট ও সেপ্টেম্বরে রপ্তানি হয়েছিল যথাক্রমে ৩৮২, ৪০৭ ও ৩৮৬ কোটি ডলারের পণ্য।
এনবিআরের এই পণ্য রপ্তানির হিসাবের মধ্যে রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলের (ইপিজেড) প্রচ্ছন্ন রপ্তানি এবং স্যাম্পল বা নমুনা রপ্তানির তথ্যও সংযুক্ত আছে। যদিও এর পরিমাণ খুব বেশি নয়।
একাধিক রপ্তানিকারক বলছেন, কোটা সংস্কার আন্দোলন, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মাধ্যমে রাজনৈতিক পটপরিবর্তন ও শিল্পাঞ্চলে শ্রম অসন্তোষের কারণে জুলাই, আগস্ট ও সেপ্টেম্বর মাসে অনেক ক্রয়াদেশের পণ্য সময়মতো জাহাজে তুলতে পারেনি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান। এসব আটকে থাকা ক্রয়াদেশের অনেক পণ্য গত মাসে জাহাজীকরণ হয়েছে। তা ছাড়া শীত মৌসুম ও ক্রিসমাসের পণ্য জাহাজীকরণ শুরু হওয়ায় রপ্তানি বাড়ছে। অর্থের পাশাপাশি পরিমাণের দিক দিয়েও রপ্তানি বেড়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক গত জুলাইয়ে প্রকৃত পণ্য রপ্তানির ভিত্তিতে লেনদেন ভারসাম্যের তথ্য প্রকাশ করে। ফলে পণ্য রপ্তানির হিসাবে বড় ধরনের গরমিল বেরিয়ে আসে। তখন কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানিয়েছিল, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) দীর্ঘদিন ধরে রপ্তানির হিসাব প্রকাশ করলেও সে অনুযায়ী আয় দেশে আসছিল না। এ নিয়ে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন সংস্থা থেকেও প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়েছে। এখন থেকে প্রকৃত তথ্যের ওপর ভিত্তি করে প্রতিবেদন তৈরি করা হবে। এরপর ইপিবি কয়েক মাস রপ্তানির তথ্য প্রকাশ থেকে বিরত থাকে।
‘শ্রমিকেরা কাজে ফিরেছেন’
গত অক্টোবরে কোন খাতের রপ্তানি কতটা বেড়েছে, তা এনবিআরের পরিসংখ্যান থেকে বিস্তারিতভাবে জানা যায়নি।
জানতে চাইলে নিট পোশাকশিল্পের মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম প্রথম আলোকে বলেন, গাজীপুর ও আশুলিয়ার কারখানাগুলোয় বেশ কিছুদিন অসন্তোষ চলার পর শ্রমিকেরা কাজে ফিরেছেন গত মাসে। তা ছাড়া শীত মৌসুম ও ক্রিসমাস উৎসবের জন্য পোশাক জাহাজীকরণ হচ্ছে। সে জন্য রপ্তানির গতি বেড়েছে।
মোহাম্মদ হাতেম আরও বলেন, রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে আগামী গ্রীষ্মের ক্রয়াদেশ ২০ থেকে ২৫ শতাংশ কম এসেছে। তবে আগামী শীতের মৌসুমের জন্য ক্রয়াদেশ কিছুটা বাড়তে পারে। গ্যাস-সংকটের কারণে এখন পোশাক কারখানায় উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। অন্যদিকে ব্যাংকগুলো সময়মতো ঋণপত্র খুলতে পারছে না। তাই আগামী দিনে পোশাক রপ্তানি কতটা বৃদ্ধি পাবে, তা নির্ভর করছে নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহ ও ব্যাংক খাতের সহায়তার ওপর।