পোলট্রিতে বড় বিনিয়োগে প্রাণ গ্রুপ
নোয়াখালী, শরীয়তপুর, চট্টগ্রাম ও ময়মনসিংহে চারটি লেয়ার ফার্ম স্থাপনে বিনিয়োগ হবে প্রায় ৪০০ কোটি টাকা।
ডিমের পাশাপাশি মুরগির বাচ্চা উৎপাদনে ২০০ কোটি টাকা বিনিয়োগে ব্রিডার ও ব্রয়লার ফার্ম করা হবে।
দেশের পোলট্রি খাতে বড় বিনিয়োগের পরিকল্পনা করছে কৃষিপ্রক্রিয়াজাত শিল্পের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় গোষ্ঠী প্রাণ গ্রুপ। ডিম ও মুরগির মাংস উৎপাদনে তারা আগামী তিন বছরের মধ্যে আরও ৬০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করবে।
২০২২ সালে হবিগঞ্জের চুনারুঘাটে লেয়ার ফার্ম প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে পোলট্রি খাতে যুক্ত হয় প্রাণ গ্রুপ। শুরুতে ফার্মটিতে দিনে এক লাখ ডিম উৎপাদন হতো। এখন সেই সক্ষমতা বেড়ে দাঁড়িয়েছে পাঁচ লাখে। সম্পূর্ণ অটোমেটেড ও আধুনিক প্রযুক্তির এ ফার্মে এখন পর্যন্ত প্রায় ১২৫ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে তারা।
দেশের অভ্যন্তরে ডিম ও মুরগির মাংসের চাহিদা প্রতিবছরই বাড়ছে। দেশে প্রতিদিন চার কোটির বেশি ডিম উৎপাদিত হয়। আর বাণিজ্যিক ভিত্তিতে দৈনিক মুরগির মাংস উৎপাদিত হয় প্রায় সাড়ে তিন হাজার মেট্রিক টন। তা সত্ত্বেও মাঝেমধ্যেই ডিম ও মুরগির সরবরাহে টান পড়ে। এতে দুটোরই দাম বেড়ে যায়। আর দুর্ভোগে পড়েন ভোক্তারা।
প্রাণের কারখানায় এখন দিনে ডিম উৎপাদনের সক্ষমতা পাঁচ লাখ। দুই বছরে সেটি বেড়ে হবে ২৫ লাখ। পোলট্রিশিল্পে ৬০০ কোটি টাকা বিনিয়োগের পরিকল্পনা তাদের।
কাজী ফার্মস, প্যারাগন, নারিশ, আফতাব, কোয়ালিটি, প্রোভিটা, সিপি, ডায়মন্ড এগসহ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান দেশের পোলট্রি খাত নিয়ন্ত্রণ করে। মুরগির বাচ্চা ও পোলট্রি খাদ্যের (ফিড) সিংহভাগ উৎপাদন করছে এই কোম্পানিগুলো। পাশাপাশি ডিম ও মাংসের বাজারের বড় অংশও তাদের দখলে রয়েছে। নিজস্ব কারখানায় উৎপাদনের পাশাপাশি চুক্তিভিত্তিক খামারিদের কাজে লাগাচ্ছে কোনো কোনো বড় কোম্পানি।
প্রাণ অ্যাগ্রো বিজনেসের নির্বাহী পরিচালক নাসের আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রচলিত খামারগুলোতে প্রচণ্ড গরম বা তীব্র শীতে ডিম উৎপাদন কমে যায়। এর প্রধান কারণ হলো, তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে না পারা। সে জন্য আমরা ইউরোপের সম্পূর্ণ অটোমেটেড “এনভায়রনমেন্টাল কন্ট্রোল হাউস” প্রযুক্তির ডিমের কারখানা স্থাপন করেছি। ভবিষ্যতে যে কারখানাগুলো হবে, সেগুলোতেও অটোমেটেড ও স্বয়ংক্রিয়ভাবে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রিত হবে।’
নাসের আহমেদ জানান, ডিম পরিবহনের আগপর্যন্ত হাতের কোনো স্পর্শ নেই। কোনো অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করা হয় না। এ ধরনের প্রযুক্তিতে মুরগির রোগবালাই হওয়ার ঝুঁকি কম। ফলে ডিম উৎপাদন সারা বছর প্রায় একই থাকে।
পোলট্রি খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, দেশে বর্তমানে মাথাপিছু বার্ষিক ডিমের চাহিদা ১০৪টি। সর্বশেষ ২০২৩-২৪ অর্থবছরে দেশে মোট ২ হাজার ৩৭৫ কোটি ডিম উৎপাদিত হয়েছে। আগামী ২০৩০ সালে মাথাপিছু ডিমের চাহিদা বেড়ে হবে ১৬০টি। এ ছাড়া প্রক্রিয়াজাত খাদ্যশিল্পে ডিমের ব্যবহার আগের তুলনায় বেশ বেড়েছে।
প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল বলেন, হবিগঞ্জের পর নোয়াখালী, শরীয়তপুর, চট্টগ্রাম ও ময়মনসিংহে চারটি লেয়ার ফার্ম তৈরির কাজ চলছে। ২০২৭ সালের মধ্যে ফার্মগুলো চালু হলে দৈনিক ডিম উৎপাদন ২০ লাখ বাড়বে। এখন ফার্মের জন্য জমি কেনার কাজ চলছে। নতুন চারটি ফার্মে প্রায় ৪০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করা হবে।
প্রাণ গ্রুপের কর্মকর্তারা জানান, ডিমের পাশাপাশি মুরগির বাচ্চা উৎপাদনে ব্রিডার ফার্ম ও ব্রয়লার ফার্ম গড়ে তুলতে বিনিয়োগ করছেন তাঁরা। চলতি বছর তাঁদের ব্রিডার ফার্মে মুরগির বাচ্চা উৎপাদন শুরু হবে। এ ছাড়া আগামী বছর ব্রয়লার ফার্মের কাজ শুরু হবে। এ দুটি ফার্মে বিনিয়োগ হবে ২০০ কোটি টাকা।
পোলট্রি খাতে মাংস ও ডিম উৎপাদন জন্য মুরগির এক দিন বয়সী বাচ্চা কিনে থাকেন ছোট-মাঝারি খামারিরা। প্রযুক্তির সাহায্যে এসব বাচ্চা যেসব মোরগ-মুরগির মাধ্যমে উৎপাদিত হয়, সেগুলোকে বলা হয় প্যারেন্ট স্টক (পিএস)। আর গ্র্যান্ড প্যারেন্ট স্টক (জিপি) থেকে পিএস উৎপাদন করা হয়। জিপি ও পিএসের বাজারের অধিকাংশই এখন পাঁচ প্রতিষ্ঠানের দখলে।
জানতে চাইলে কামরুজ্জামান কামাল বলেন, সাধারণ মানুষের পুষ্টির চাহিদা নিশ্চিতে সরকারকে বিষয়টি ভাবতে হবে। কীভাবে কম মূল্যে খাবার ও মুরগির বাচ্চা উৎপাদন করা যায়, তা নিয়ে কাজ করতে হবে। এ জন্য সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা দিয়ে মুরগির বাচ্চার দামের একটি সীমারেখা টানার উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে।