বেসরকারি ব্যাংকের ‘মামাতো ভাইয়েরা’ কার স্বার্থ দেখছেন

  • আমানতকারীদের স্বার্থ রক্ষা করতে বেসরকারি ব্যাংকের স্বতন্ত্র পরিচালকের ব্যবস্থা করা হয়েছিল।

  • বেশির ভাগ ক্ষেত্রে তাঁরা মালিকদেরই স্বার্থ দেখছেন।

আমানতকারীদের স্বার্থ রক্ষা করতে বেসরকারি ব্যাংকের স্বতন্ত্র পরিচালকের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। এই নীতি মেনে সব ব্যাংকই স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগ দিয়েছে। কিন্তু ব্যাংকাররাই এখন তাঁদের বলছেন, ‘ভাই-মামাতো ভাই’। অর্থাৎ তাঁরা মালিকদেরই ঘনিষ্ঠ বা আস্থাভাজন। আর বেশির ভাগ ক্ষেত্রে তাঁরা মালিকদেরই স্বার্থ দেখছেন।

ফলে প্রশ্ন উঠেছে, বেসরকারি ব্যাংকের স্বতন্ত্র পরিচালকদের ভূমিকা নিয়ে। কারণ, স্বতন্ত্র পরিচালক থাকার পরও কয়েকটি ব্যাংক নামে-বেনামে ও কাগুজে কোম্পানির নামে ঋণ দিয়েছে। এতে তারল্যসংকটে পড়েছে এসব ব্যাংক। আর আমানতকারীরা স্বস্তি পাওয়ার বদলে আতঙ্কগ্রস্ত হয়েছেন। এর প্রভাব পড়েছে পুরো ব্যাংক খাতে। সব মিলিয়ে স্বতন্ত্র পরিচালক হিসেবে কাদের নিয়োগ দিচ্ছে ব্যাংকগুলো, সে আলোচনাও এখন নতুন করে শুরু হয়েছে।

সালেহউদ্দিন আহমেদ, সাবেক গভর্নর, বাংলাদেশ ব্যাংক
স্বতন্ত্র পরিচালকেরা ঠিক থাকলে ব্যাংকগুলোতে এসব অনিয়ম হতো না। এ জন্য কারা স্বতন্ত্র পরিচালক হবেন ও তাঁদের ভূমিকা কী হবে, তা নিয়ে নতুন করে ভাবার সময় এসেছে।
সালেহউদ্দিন আহমেদ, সাবেক গভর্নর, বাংলাদেশ ব্যাংক

যেভাবে আলোচনায় এল

স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়ে এই আলোচনা শুরু হয়েছে ইস্টার্ণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আলী রেজা ইফতেখারের একটি মন্তব্যের সূত্র ধরে। বাংলাদেশ ব্যবসা সম্মেলনের এক অধিবেশনে আলোচনার একপর্যায়ে তিনি বলেন, দেশের ব্যাংকগুলোর পরিচালনা পর্ষদ ও ব্যাংকগুলোতে সুশাসনের অভাব রয়েছে। পর্ষদ ও ব্যবস্থাপনার কার কী দায়িত্ব, তা নির্ধারিত হলেও অনেকে মানছে না। এ জন্য নির্দেশমতো ঋণ হচ্ছে, যা পরবর্তী সময়ে খেলাপি হয়ে পড়ছে।

এ সময় সঞ্চালক সাবেক গভর্নর আতিউর রহমান বলেন, আরও বেশি স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগ দিলে কি এই সমস্যার সমাধান হতে পারে? এর জবাবে আলী রেজা ইফতেখার বলেন, এটা সমাধান হতে পারে। তবে সত্যিকার স্বতন্ত্র হতে হবে। কারও মামাতো ভাই বা কোম্পানির কোনো ব্যক্তির ভাইকে স্বতন্ত্র পরিচালক করলে হবে না।

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্ট (বিআইবিএম) অডিটরিয়ামে ১১ মার্চ ‘এথিকস ইন ব্যাংকিং’ শীর্ষক বক্তৃতায় গ্রামীণ ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান এ কে এম সাইফুল মজিদ বলেন, অস্বাস্থ্যকর করপোরেট সংস্কৃতির কারণে গত চার দশকে আর্থিক খাতের পরিবেশের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ব্যাংকারদের লোভী মানসিকতার কারণে বেসিক ব্যাংক, পদ্মা ব্যাংক, ইসলামী ব্যাংক ও সোনালী ব্যাংকের ঋণ কেলেঙ্কারি হয়েছে, যা আমানতকারী ও জনগণের মধ্যে বিশ্বাসের ঘাটতিকে প্রকট করেছে।

প্রসঙ্গত, এই চার ব্যাংকই পরিচালিত হচ্ছে প্রতিনিধি ও স্বতন্ত্র পরিচালক দিয়ে। মালিকেরা আড়ালে রয়ে গেছেন, তবে ঠিকই অনৈতিক সুবিধা গ্রহণ করেছেন।

স্বতন্ত্র পরিচালক থাকার পরও কিছু ব্যাংকে ভয়াবহ অনিয়ম হয়েছে। ফলে এই পরিচালকদের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। 

স্বতন্ত্র পরিচালকদের যোগ্যতা কী

শেয়ারধারী পরিচালকেরা নিজেদের স্বার্থ দেখেন। এ জন্যই সাধারণ বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ দেখতে ২০০৬ সালে স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগের বিধান জারি করে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।

বিএসইসি ২০১৮ সালে করপোরেট গভর্নেন্স কোড নীতিমালা জারি করে। এতে স্বতন্ত্র পরিচালক কারা হতে পারবেন ও তাঁদের যোগ্যতা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়। এতে বলা হয়, স্বতন্ত্র পরিচালক হতে পারবেন কোনো কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি), ডিএমডি, সিএফওসহ সমপর্যায়ের কোনো পদধারী, সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও নিয়ন্ত্রক সংস্থার চাকরিতে পঞ্চম গ্রেডের নিচে নয় এমন কর্মকর্তা, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক (অর্থনীতি, বাণিজ্য, বিজনেস স্টাডিজ ও আইন) ও আইনজীবী। সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানে শেয়ার ধারণ করছেন, এমন কারও পরিবারের সদস্য স্বতন্ত্র পরিচালক হতে পারবেন না।

আরও পড়ুন

ব্যাংক কোম্পানি আইনে বলা হয়েছে, ‘স্বতন্ত্র পরিচালক বলতে এমন ব্যক্তিকে বোঝাবে, যিনি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা এবং শেয়ার ধারক হইতে স্বাধীন এবং যিনি কেবলমাত্র ব্যাংক-কোম্পানির স্বার্থে নিজের মতামত প্রদান করিবেন। ব্যাংকের সঙ্গে কিংবা ব্যাংকসংশ্লিষ্ট কোনো ব্যক্তির সঙ্গে যার অতীত, বর্তমান বা ভবিষ্যৎ কোনো প্রকৃত স্বার্থ কিংবা দৃশ্যমান স্বার্থের বিষয় জড়িত নাই।’

শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত ব্যাংকগুলোর জন্য স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগ বাধ্যতামূলক। শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত ব্যাংক ৩৪টি। তবে দেশের সরকারি ও বেসরকারি খাতের ৩৯টি ব্যাংক স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগ দিয়েছে।

ব্যাংকের পরিচালকের সংখ্যা অনুযায়ী ও ব্যাংকগুলোর সংঘ স্মারক অনুযায়ী ১ থেকে ৫ জন পর্যন্ত স্বতন্ত্র পরিচালক রয়েছেন। সব মিলিয়ে ব্যাংক খাতে স্বতন্ত্র পরিচালক রয়েছেন ৯০ জন। ব্র্যাক ব্যাংকে রয়েছেন ৫ জন স্বতন্ত্র পরিচালক, সিটি ব্যাংকে রয়েছেন ৩ জন।

আরও পড়ুন

কারা স্বতন্ত্র পরিচালক

ব্যাংকগুলোর স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগের তালিকা পর্যালোচনায় দেখা গেছে, শিক্ষক, সাবেক আমলা ও ব্যাংকার, হিসাববিদ, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক কর্মকর্তা, আইনজীবীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশা থেকে স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। আর নীতিমালার ফলে আত্মীয়স্বজনও নেই স্বতন্ত্র পরিচালকদের তালিকায়। তবে সংশ্লিষ্ট পেশা থেকে অনুগতদের খুঁজে স্বতন্ত্র পরিচালক করেছে কিছু ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ। আবার মালিকানা সম্পর্কিত প্রতিষ্ঠান থেকেও স্বতন্ত্র পরিচালক বানানো হয়েছে। চেয়ারম্যান ও মালিকানা বদলের পর স্বতন্ত্র পরিচালকদেরও বিদায় করে দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে।

সাম্প্রতিক সময়ে ঋণ অনিয়ম ও পরিচালকদের স্বেচ্ছাচারিতার কারণে আলোচনায় আছে ন্যাশনাল ব্যাংক। ব্যাংকটির স্বতন্ত্র পরিচালক নাইমুজ্জামান ভুঁইয়া। তিনি বাংলাদেশ পোস্ট নামের একটি ইংরেজি গণমাধ্যমের যুগ্ম সম্পাদক। ন্যাশনাল ব্যাংক ও বাংলাদেশ পোস্ট দুটোই সিকদার গ্রুপের মালিকানাধীন।

বড় অনিয়মের কারণে আলোচনায় থাকা ইসলামী ব্যাংকের স্বতন্ত্র পরিচালক চট্টগ্রামের পোর্ট সিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় অনুষদের ডিন ফশিউল আলম ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ফাইন্যান্স বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ সালেহ্ যহুর। ২০১৭ সালে ব্যাংকটির মালিকানা চট্টগ্রামের একটি গ্রুপের নিয়ন্ত্রণে যাওয়ার পরই তাঁরা স্বতন্ত্র পরিচালক হিসেবে নিয়োগ পান। এর পর থেকেই ব্যাংকটিতে অনিয়মের সূত্রপাত।

আরও পড়ুন

আলোচনায় থাকা ইউনিয়ন ব্যাংকের স্বতন্ত্র পরিচালক হলেন জনতা ব্যাংকের সাবেক এমডি আবদুস সালাম। জনতা ব্যাংকের চাকরি শেষে তিনি ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকে পরামর্শক হিসেবে যোগ দেন, এরপর উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ পান গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকে। এরপর ইউনিয়ন ব্যাংক তাঁকে স্বতন্ত্র পরিচালক করে। ব্যাংক তিনটিই চট্টগ্রামের এস. আলম গ্রুপের মালিকানাধীন।

গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের স্বতন্ত্র পরিচালক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পুষ্টি ও খাদ্যবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক নিজামুল হক ভূঁইয়া এবং ব্যাংকার হাসান ইকবাল। হাসান ইকবাল ইউনিয়ন ব্যাংকের সাবেক ডিএমডি।

মালিকানা পরিবর্তনের পর সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের স্বতন্ত্র পরিচালক হয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টেলিভিশন, ফিল্ম অ্যান্ড ফটোগ্রাফি বিভাগের অধ্যাপক এ জে এম শফিউল আলম ভুঁইয়া এবং ফলিত রসায়ন ও রাসায়নিক বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ মিজানুর রহমান। এরপরও ব্যাংকটিকে নানা অনিয়ম হয়েছে।

ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের স্বতন্ত্র পরিচালক চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী, সাবেক সচিব অপরুপ চৌধুরী ও সাবেক ব্যাংকার তৌহিদ শিপার রফিকুজ্জামান। আগে এই ব্যাংকে দুটি বড় গ্রুপের মালিকানা থাকলেও এখন চট্টগ্রামের প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবুর পরিবারের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে।

তবে ব্যতিক্রমও আছে

কিছু ব্যাংক পেশাদার, ব্যক্তিত্বসম্পন্ন ও দক্ষদের পর্ষদে এনে ব্যাংকের আর্থিক স্বাস্থ্য ভালো করার চেষ্টা করছে। ইস্টার্ণ ব্যাংকের স্বতন্ত্র পরিচালক বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্টের সাবেক মহাপরিচালক তৌফিক আহমেদ চৌধুরী। ব্র্যাক ব্যাংকের স্বতন্ত্র পরিচালক অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন, মুস্তফা কে মুজেরী, সাবেক ব্যাংকার ফারুক মঈনউদ্দীন, এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের সাবেক কর্মকর্তা ফারজানা আহমেদসহ আরও অনেকে।

মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের স্বতন্ত্র পরিচালক স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক, আফগানিস্তানের সাবেক প্রধান নির্বাহী নাসরিন সাত্তার ও বিএসইসির সাবেক চেয়ারম্যান ফারুক আহমেদ সিদ্দিক, ট্রাস্ট ব্যাংকের স্বতন্ত্র পরিচালক সাবেক ব্যাংকার আনিস এ খান। শাহ্‌জালাল ইসলামী ব্যাংকের স্বতন্ত্র পরিচালক সাবেক দুই এমডি একরামুল হক ও কে এম মাজেদুর রহমান। পূবালী ব্যাংকের স্বতন্ত্র পরিচালক আইনজীবী শাহদীন মালিক ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক নির্বাহী পরিচালক নওশাদ আলী চৌধুরী। ঢাকা ব্যাংকের স্বতন্ত্র পরিচালক অধ্যাপক এম এ তসলিম, সাবেক সরকারি কর্মকর্তা ফিরোজ আহমেদ ও আহবাদ আহমাদ।

এমন আরও কয়েকটি ব্যাংক প্রকৃত স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগ দিয়েছে, যাঁরা পর্ষদে ভূমিকা রাখতে পারছেন। ফলে এসব ব্যাংক অনিয়ম থেকে কিছুটা হলেও দূরে আছে।

আরও পড়ুন

কী বলছেন স্বতন্ত্র পরিচালকেরা

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টেলিভিশন, ফিল্ম অ্যান্ড ফটোগ্রাফি বিভাগের অধ্যাপক এ জে এম শফিউল আলম ভুঁইয়া প্রায় চার বছর ধরে সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের স্বতন্ত্র পরিচালক। তাঁকে প্রশ্ন করা হয়, এখন পর্যন্ত পর্ষদের কোনো সিদ্ধান্তে আপত্তি করেছেন কি না। পর্ষদে আপনার ভূমিকা কী?

এ নিয়ে এ জে এম শফিউল আলম ভুঁইয়া বলেন, ‘আমি স্বতন্ত্র পরিচালক হিসেবে আমানতকারীদের স্বার্থ দেখছি। আমার সময়ে কাউকে সুবিধা দেওয়া হয়নি, ফলে আপত্তি করার সুযোগ আসেনি। প্রতিটি সভায় ৬০-৭০টি অ্যাজেন্ডা থাকে, আমি চেষ্টা করি এসব ফাইল পর্যালোচনা করে পর্ষদে যোগ দেওয়ার। অ্যাজেন্ডা দেখে কখনো মনে হয়নি, এতে অনিয়ম হবে।’

তাহলে বাংলাদেশ ব্যাংক যে অনিয়ম ধরল, তা ভুল? এর জবাবে এ জে এম শফিউল আলম ভুঁইয়া বলেন, ‘এসব বিষয় ব্যাংকের শেয়ারধারী পরিচালক ও ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ ভালো বলতে পারবেন। যেসব অনিয়মের কথা বলা হচ্ছে, এসব ঋণ আদায় হচ্ছে বলে শুনেছি। পর্ষদ সভায় আমি আমার মতো সতর্ক থাকার চেষ্টা করে যাচ্ছি।’

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ফাইন্যান্স বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ সালেহ্ যহুর ইসলামী ব্যাংকের স্বতন্ত্র পরিচালক। তিনি চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় সভায় অংশ নিতে বিমানযোগে আসা-যাওয়া করেন। যার খরচ দিতে হয় ব্যাংককে। স্বতন্ত্র পরিচালক হিসেবে ইসলামী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে আপনার ভূমিকা কী, এ নিয়ে জানতে চাইলে মোহাম্মদ সালেহ্ যহুর প্রথম আলোকে বলেন, ‘২০১৯ সালে ব্যাংকের পরিচালক হওয়ার পর কোনো অনিয়ম হতে দিইনি। কোনো সন্দেহ হলে আপত্তি জানিয়েছি, ব্যাংক তা ঠিক করে নিয়েছে। আমাদের চেয়ারম্যান শক্ত মানুষ। তাঁকে ডিঙিয়ে অনিয়ম হওয়া সম্ভব নয়।’

চেয়ারম্যান একটি গ্রুপের প্রতিনিধি, আপনি স্বতন্ত্র পরিচালক। আপনি চেয়ারম্যানের পক্ষ নিচ্ছেন কেন। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিদর্শনে যেসব অনিয়ম উঠে আসছে, তা কি ভুল? এ নিয়ে জানতে চাইলে মোহাম্মদ সালেহ্ যহুর বলেন,‘নিরীক্ষায় আপত্তি আসবেই। ব্যাংক জবাব দিচ্ছে। এসব ঠিক হয়ে যাবে। চেয়ারম্যানসহ আমরা সবাই ব্যাংকের স্বার্থ সমুন্নত রাখার চেষ্টা করে যাচ্ছি।’

স্বতন্ত্র পরিচালক নির্ধারণ হোক স্বতন্ত্রভাবে

ব্যাংকগুলোর স্বতন্ত্র পরিচালক কে হবেন, তা নির্ধারণ করছে ব্যাংক নিজেই। পরিচালকদের সঙ্গে পরামর্শ করে ও তাঁদের পছন্দের ব্যক্তিদের নাম প্রস্তাব করছে ব্যাংক। বিএসইসি ও বাংলাদেশ ব্যাংক স্বতন্ত্র পরিচালকদের চূড়ান্ত অনুমোদন দিচ্ছে। ফলে যেসব ব্যাংকের অনিয়ম হচ্ছে, তারা নতি স্বীকার করবে, এমন পছন্দের ব্যক্তিদের পরিচালক করছে। এমন প্রথার পরিবর্তন করে স্বতন্ত্রভাবে এই পরিচালক নিয়োগ হওয়া প্রয়োজন বলে মনে করেন ব্যাংক খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। পাশাপাশি কাজের পরিধি বিবেচনায় স্বতন্ত্র পরিচালকদের সম্মানীও বাড়ানোর প্রস্তাব করেছেন কেউ কেউ।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালেহউদ্দিন আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, এখন সময় এসেছে স্বতন্ত্র পরিচালকদের কার্যকর ভূমিকা রাখার। এ জন্য ব্যক্তিত্বসম্পন্ন, পেশাদার ও লোভ-লালসার ঊর্ধ্বে উঠে নির্ভয়ে কাজ করতে পারবেন, এমন ব্যক্তিদের স্বতন্ত্র পরিচালক করতে হবে। পর্ষদের পছন্দের ব্যক্তিদের পরিবর্তে নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলো এসব ব্যক্তি নির্ধারণ করতে পারে।

আর পর্ষদে স্বতন্ত্র পরিচালকের মতামত যাতে সর্বোচ্চ গুরুত্ব পায়, এ জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক নির্দেশনা দিতে পারে। স্বতন্ত্র পরিচালকেরা ঠিক থাকলে ব্যাংকগুলোতে এসব অনিয়ম হতো না। এ জন্য কারা স্বতন্ত্র পরিচালক হবেন ও তাঁদের ভূমিকা কী হবে, তা নিয়ে নতুন করে ভাবার সময় এসেছে। পাশাপাশি তাঁদের ভূমিকা কার্যকর করতে এসব পদের সম্মানীও বাড়াতে হবে।