রিহ্যাব আবাসন মেলা
ক্রেতা কম হলেও সাড়া মন্দ নয়
পাঁচ দিনের মেলা সাড়ে চার দিনে শেষ। এতে সব মিলিয়ে ৩০২ কোটি টাকার অ্যাপার্টমেন্ট, প্লট ও বাণিজ্যিক স্পেস বা জায়গা বিক্রি ও বুকিং হয়েছে।
মেলা শেষ হতে আর ঘণ্টাখানেক বাকি। তখন কনকর্ড রিয়েল এস্টেটের চট্টগ্রামের একটি প্রকল্পের বাণিজ্যিক জায়গা বা স্পেসের বুকিং দেন একজন ক্রেতা। আবাসন প্রতিষ্ঠানটির স্টলে বসেই নগদ টাকায় বুকিং সম্পন্ন করেন তিনি।
কনকর্ড রিয়েল এস্টেটের উপব্যবস্থাপক মো. মুত্তাকীম হাসান প্রথম আলোকে বলেন, ‘মেলায় ক্রেতা-দর্শনার্থী তুলনামূলক কম এসেছে। তারপরও ধানমন্ডি, গুলশান, বনানী, বারিধারায় ৮-১০টি অ্যাপার্টমেন্ট বিক্রি প্রায় চূড়ান্ত হয়েছে। কিছুক্ষণ আগেই চট্টগ্রামের একটি বাণিজ্যিক জায়গার বুকিং পেয়েছি আমরা।’
রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (রিহ্যাব) আয়োজিত পাঁচ দিনের আবাসন মেলা শেষ পর্যন্ত সাড়ে চার দিনে নেমেছে। ক্রেতা-দর্শনার্থী আসার সংখ্যাও কমেছে। তারপরও অনেক আবাসন প্রতিষ্ঠানই অ্যাপার্টমেন্ট, প্লট ও বাণিজ্যিক জায়গার বুকিং পেয়েছে। প্রায় প্রতিটি প্রতিষ্ঠানই আগ্রহী ক্রেতার সন্ধান পেয়েছে। এসব ক্রেতার একটি অংশ ভবিষ্যতে অ্যাপার্টমেন্ট, প্লট ও বাণিজ্যিক জায়গা কিনতে পারেন।
গতকাল রোববার দুপুর ১২টা থেকে দেড় ঘণ্টা বিভিন্ন আবাসন প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে এই চিত্র পাওয়া গেল। তার কিছুক্ষণ পর রিহ্যাব নেতারা সংবাদ সম্মেলনে জানান, গতকাল বেলা ১টা পর্যন্ত মেলায় ১৬ হাজার ১৩২ জন ক্রেতা-দর্শনার্থী এসেছেন। গতবার এসেছিলেন ১৯ হাজার ২৩৭ জন।
রিহ্যাবের তথ্যানুযায়ী, এবারের মেলায় গত বছরের চেয়ে বিক্রি ও বুকিং কমেছে। গত বছর ৩৯৭ কোটি টাকার অ্যাপার্টমেন্ট, প্লট ও বাণিজ্যিক স্পেস বা জায়গা বিক্রি ও বুকিং হয়েছে। এবার সেটি কমে ৩০২ কোটি টাকা হয়েছে। এর মধ্যে ১৬৮ কোটি টাকার অ্যাপার্টমেন্ট, ৮০ কোটি টাকার প্লট, ৫৩ কোটি ৭৩ লাখ টাকার বাণিজ্যিক জায়গা। এর বাইরে প্রায় ৫০ কোটি টাকার নির্মাণসামগ্রী বিক্রি ও বুকিং হয়েছে।
মেলায় আগত ক্রেতা-দর্শনার্থীর সংখ্যা নিয়ে হতাশা প্রকাশ করলেও যতটুকু সাড়া মিলেছে, সেটিও মন্দ নয় বলে জানান আবাসন প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা। তেমনই একজন কম্প্রিহেনসিভ হোল্ডিংসের কর্মকর্তা কাজী শামসুল আলম। তিনি বলেন, ‘আমরা দুটি অ্যাপার্টমেন্ট ও চারটি বাণিজ্যিক জায়গার বুকিং পেয়েছি।’
র্যাংগস প্রপার্টিজ রাজধানীর গুলশান, বনানী, বারিধারা, উত্তরা, বসুন্ধরাসহ বিভিন্ন এলাকার ৩৫টি আবাসিক ও বাণিজ্যিক প্রকল্পের ফ্ল্যাট ও জায়গা মেলায় বিক্রির জন্য প্রদর্শন করে। তারাও মেলায় বেশ কিছু বুকিং পেয়েছে।
র্যাংগস প্রপার্টিজের কর্মকর্তা শাফকাত রহমান বলেন, ‘রিহ্যাবের আবাসন মেলায় সাধারণত নিম্নমধ্যম ও মধ্যম আয়ের মানুষই বেশি আসেন। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। তাঁরা এক কোটি থেকে দেড় কোটি টাকার মধ্যে অ্যাপার্টমেন্ট কিনতে চান। তাঁদের কথা চিন্তা করেই তুলনামূলক সাশ্রয়ী দামের আবাসন প্রকল্প রয়েছে আমাদের।’
মেলায় অ্যাপার্টমেন্টের পাশাপাশি প্লট বিক্রি হয়েছে। বাণিজ্যিক জায়গাও বিক্রি হয়েছে অনেক। প্রাসাদ গ্রুপের নর্দার্ন রিয়েল এস্টেটের কর্মকর্তা হারুনূর রশীদ বলেন, ‘আমরা পল্টন ও মিরপুর-১০ এলাকার বাণিজ্যিক প্রকল্পের জায়গা বিক্রির জন্য প্রদর্শন করেছি। চারটি বাণিজ্যিক জায়গা বুকিং হয়েছে।’
মেলায় কক্সবাজারের একটি তারকা হোটেলের শেয়ার বিক্রি করেছে কোরাল লিফ প্রপার্টিজ। এ ছাড়া কক্সবাজার বিজনেস পার্কের স্টুডিও অ্যাপার্টমেন্টের বুকিং পেয়েছে তারা। ৬০০-১০০০ বর্গফুট আয়তনের এসব অ্যাপার্টমেন্টের প্রতি বর্গফুটের দাম ১০ হাজার টাকা। তবে মেলায় ২ হাজার টাকা মূল্যছাড় ছিল। সব মিলিয়ে প্রকল্পটিতে ২৩১টি স্টুডিও অ্যাপার্টমেন্ট রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তা তারিকুল ইসলাম বললেন, ‘আমরা ৭টি স্টুডিও অ্যাপার্টমেন্টের বুকিং পেয়েছি।’
গত বুধবার পাঁচ দিনব্যাপী রিহ্যাব মেলার উদ্বোধন হয়। এতে আবাসন, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবং ভবন নির্মাণসামগ্রী উৎপাদন ও বিক্রয়ের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ১২৬টি প্রতিষ্ঠানের ১৮০ স্টল ছিল। এর মধ্যে আবাসন প্রতিষ্ঠান ৯২টি।